ভাবিয়া লয়েছ দু মাস গিয়াছে, ভুলিয়াছি তোমারে?
তোমার কথা করিয়া স্মরণ ফিরি নাই অন্দরে?
নাহি দেখিবার মনোবাঞ্ছায় এক আনমনা ভবঘুরে?
অন্যত্র সুখের নিবাস গড়িতে গিয়াছি চলিয়া দূরে?
মুছিয়া ফেলিতে নিবিড় অতীত ফেলিয়াছি খাতা ছিঁড়ে?
কাগজেভেলা ভিড়ায়াছি আমি অচিন নদীর তীরে?
শ্বেতভ্রান্তির কুহেলী ধাঁধায় খুঁজিনি তোমায় ভোরে?
তোমার চিঠির বর্ণচ্ছটা ধরি নাই কাছে আঁকড়ে?
সাজিয়াছি মোর নতুন জীবন মায়াবী অচিনপুরে?
সারেং মাঝি নোঙর করেছে অজ্ঞাত বন্দরে?
খুঁটিগুলো আজও উচ্চায়মান আমার তাসের ঘরে?
আরক্তিম হয়ে ফুটেছে গোলাপ মরীচিকা পিঞ্জরে?
ভাবিয়াছো আমি নিবেদিতপ্রাণ পরের সুখের তরে?
পূর্বের ন্যায় প্রমোদ গুনি দিবা লগনের প্রথম প্রহরে?
পরিচয়হীন পত্র আমার হাজার খামের ভিড়ে?
নতুন আমির ঠাঁই হয়েছে কোয়েল পাখির নীড়ে?
দোদুল্যমান প্রদীপ মোমের দেয়ালে প্রাচীরে?
সামান্য বিলাপ নেই যে আমার নিত্য দিনের স্মরে?
দুঃখ বিলাস ডুবিয়াছি কোনো সমুদ্র বহরে?

ভাবিয়া লয়েছ দু'বছর গেলে, ভুলিয়াছি আমি তোমায়,
নির্লিপ্ততায় নেই তুমি মোর উদাসীন আনাগোনায়?
বেখেয়ালিপনায় মত্ত ভীষণ দিশাহীন লেনাদেনায়?
প্রতুলতায় নিমগ্ন জাগরণ, বেহিসেব গণনায়?
জোয়ার স্রোতে উজানের ঢেউ মিশিয়াছে মোহনায়?
মাছরাঙা আজও ছুটে তটিনীর সীমা পরিসীমায়?
বুলবুলি রোজ দিনাতিপাত করে উচ্ছ্বাসে নির্দ্বিধায়?
ভাবিয়াছো পাতি ময়নাটা, আর নেই তার খাঁচায়?
লোককাহিনীর পঙ্খিরাজের ঠাঁই বুনিয়াদী গ্রন্থনায়?
চঞ্চলা মৌটুসীর অনুনাদ আজও রাগে মূর্ছনায়?
আম্রকাননে ভ্রমর উড়িছে সুধার উন্মাদনায়?
পুচ্ছ নাচায় দোয়েল পক্ষী জলদর্পণ আয়নায়?
সরপুঁটির পোনাগুলো বিলের সলিলে সাঁতরায়?
চাঁদিঠোঁট অই মুনিয়া পাখি শারদের বুলি আওরায়?
সাম্পানে চড়ে ছোট্ট খুকী দীঘির পানি হাতরায়?
দিগন্তেরই আলপথ মেঘে হারিয়েছে সীমানায়?
নিশি অটবির প্রাঙ্গণ দীপান্বিত শশাঙ্ক চন্দ্রিমায়?
গোধূলীকালের জোনাকির দল নিবুনিবু গুঞ্জনায়?
ঐকতানে ঘাসফড়িংয়েরা ঝাঁকে ঝাঁকে ব্যাঞ্জনায়?
অপারের মাঝে বাঁচিয়া রয়েছি আত্মিক মহীমায়?
হারানোর অনুসন্ধান করি নৈসর্গিক প্রণোদনায়?

ভাবিয়াছ দুই শতাব্দী গিয়াছে, ভুলিয়াছি তোমাকে?
সুধা সন্ধানী মৌমাছি আজও ফিরিয়াছে মৌচাকে?
সায়াহ্নে অরণ্য ভরেছে জোনাক পোকার ঝাঁকে?
বকুলের ডালে চড়ুই আজও কিচিরমিচির ডাকে?
প্রভাতের রবি ছড়ায় আলো, অবনী দিগ্বিদিকে?
কাঁঠালবাগান মিষ্ট সুবাস ছড়িয়েছে বৈশাখে?
সাত সকালে ঘুম ভাঙে মোর কাঠশালিকের ডাকে?
ভেবেছো উঠোনে কলরব করে হংসের শাবকে?
ফিঙ্গে কোকিল কুহুতান করে কর্মবিরতি ফাঁকে?
ধরিয়াছে লাল রক্তিম জবা পলি মৃত্তিকা ত্বকে?
দোলনচাঁপার তীব্র গন্ধ আজও আসে মোর নাকে?
জাজিরা দ্বীপে মুক্তা ঝরায় শঙ্খের ঝিনুকে?
নিত্যদিনের কর্মযজ্ঞ বসিয়াছে আজও জেঁকে?
জীমূতস্পর্শী পর্বতশ্রেণী আজও নিশ্চল শখে?

অলক দ্যুলোক ভূলোক সাক্ষী,
সাত আসমান জমিন সাক্ষী
চির মহাকাল, পাতাল সাক্ষী,
জলতরঙ্গের বলয় সাক্ষী, মহাপ্লাবনের প্রলয় সাক্ষী
অন্তহীনার বাঁধন ছাড়িয়া ভুলি নাই তোমারে।
ওগো ভুলি নাই তোমারে।