সহস্র বৎসর পূর্বে ভাবিতে দারুণ সন্তরথ,
সমুদ্র হইতে বহুদূর পাহাড়ঘেরা জনপথ,
সেথা স্নিগ্ধ কানন মনোহর, চির বসন্ত চৈতালী।
ছোট্ট কুটিরে বেঁধেছিনু ঘর, আমি আর ফিরোজা মৌলি।
মৃত্তিকার কাঠামো, ছনের ছাউনি, উঠোনে শেফালী।
সেথায় করিত বাগান আমার ফিরোজা মৌলি।
আমি নৌকা চালিয়া করিতাম দুটো পয়সা আধুলি।
সেসবেই বড় সুখে ছিলো মোর ফিরোজা মৌলি।
বাসনার চেয়েও অধিক সোহাগে বাসিতাম দুজনায়,
তাঁর বেলা অবেলার গল্প শুনিতাম ফিরিলে সন্ধ্যায়,
গাঁয়ের হাটে বেচিতাম কাঁথা সকাল অবধি গোধূলি,
বড় ভালোবেসে বুনে দিতো মোর ফিরোজা মৌলি,
মেলা থেকে আমি আনিতাম কভু আলতা ঘুঙুর তিতলি,
ঘোমটায় খুব, বড় অপরূপ, মোর ফিরোজা মৌলি।
কখনও বেলী ফুলের বালা, কখনও বা চামেলী,
বড় অপূর্ব লাগিতো আমার ফিরোজা মৌলি।
মেহেদী হাতের স্বর্ণালী আভা, সুষম ধাঁচের অঙ্গুলি,
আমার অবচেতনার কেন্দ্র ছিলো ফিরোজা মৌলি।
শুকনো পাতা, মাটির উনুনে সারিত তাহার রন্ধনপ্রণালী,
মাঝে মাঝে মোরে শিখাইতো রান্না ফিরোজা মৌলি
বনবাদাড়ের শালিক, ভোঁদড়, ময়না, কাঠবিড়ালি,
রোজ সখ্য করিত তাদের সহিত ফিরোজা মৌলি।
তটিনীর মৃদু স্রোতে - বিমুগ্ধ লাগিত নিসর্গকাকলী,
সাম্পানে মোর সাথে বসিয়া রহিত ফিরোজা মৌলি।
তাঁর মিষ্ট হাসিতে, পড়িলে উষার অমোঘ বর্ণালী,
বড্ড মায়াবী লাগিত আমার ফিরোজা মৌলি।
কস্মিনকালে ছিলেম একা ধূসর ঘোলাটে কুহেলী,
আঁধার হইতে টেনে তুলিয়াছিলো মোরে ফিরোজা মৌলি।
গাঁয়ের শিশুরা খেলিত যখন কানামাছি বাঘাডুলি,
শিশুমননের আবেদনে সাথে খেলিতো ফিরোজা মৌলি।
বড় মার্জিত নিবেদিত ছিলো যে তাঁহার নম্রতা শৈলী,
গ্রামের মুরুব্বিদের স্নেহাশিস ছিলো ফিরোজা মৌলি।
হরেক রকম স্মৃতির খন্ড সেই অতীতের দিনগুলি,
বাকিসব বোধ করি অবান্তর, শুধু ফিরোজা মৌলি।