প্রিয় মাধবী,
কেমন আছো? নতুন জীবনে, নতুন আশায়।
আমিও বেশ আছি।
সেদিন তুমি চলে যাবার পর, বহু রাত আমি ঘুমাতে পারিনি।
দুর্বল হয়ে চোখ আমার নিভু নিভু, কিন্তু ঘুমোতে পারিনি।
মাঝে মাঝেই রাত্রিবেলা জেগে যেতাম, এপাশ ওপাশ করে
বারান্দায় গিয়ে নিস্তব্ধ রাস্তা দেখতাম।
পথের মধ্যে কুকুর ঘুমোয়, ভ্যানের উপর মানুষ
কিন্তু এতো আরামের বিছানায় আমি ঘুমোতে পারতাম না।
মাধবী, কেমন আছো? নতুন ঘরে, নতুন সংসারে?
সেখানেও বুঝি আমার মতো তোমায় খুব আগলে রাখে কেউ?
আমি হয়তো পারিনি শেষ সময় তোমার বাবার হাতে
নিজের চাকরির পত্রটা তুলে দিতে।
তুমি তো জানতেই, আমি কবিতা লিখি
কবিতাই আমার চাকরী, আমার নেশা।
আমার মাস শেষে দু'টো টাকা কামাই করার একমাত্র উপায়।
মাধবী, তুমি থাকাকালীন আমি একটিও কবিতা বিক্রি করতে পারিনি;
প্রকাশকদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য আর কটু কথা শুনেও তেমন কষ্ট হতো না।
কিন্তু আজ আমার কবিতা, আমার ডায়েরি হাজার হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শুধু কী বাংলাদেশেই? নাহ্, ভারত-অ্যামেরিকাতেও
সেদিন রাশিয়া থেকে ফোন এলো, আমার কবিতার বই বিক্রি হচ্ছে সেখানেও।
আজ, এখন তোমার বাবার কাছে গেলে হয়তো আমি দেখাতে পারতাম, তোমার হাত চাইতে পারতাম।
সময় যখন মানুষের পক্ষে আসে, মানুষ তখন পক্ষে থাকে না; সঙ্গে থাকে না।
মাধবী, বুক পকেটে এখনো একটা নোটবুক নিয়ে ঘুরি।
সেখানে লিখে রাখি দিনে কতবার আমার তোমার কথা মনে পড়ে,
কতবার আমার রাতে ঘুম ভাঙ্গে, কতবার আমার কষ্ট হয়,
কতবার তোমার কথা মনে করে আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলি।
মাধবী, তোমার সুকান্ত অনেক বড় কবি হতে চায়নি; অনেক বড় মানুষও না
জীবন নিয়ে উচ্চাবিলাস তার কোনোদিন ছিলো না। ।
শুধু চেয়েছিলো তোমাকে সামনে বসিয়ে সে দু'চারটি কবিতা লিখবে,
তোমার খিলখিল হাসি, কাঁধের মধ্যে মাথা রেখে শান্ত হয়ে শুনবে
তোমার না বলা অভিমান, চাঁপা কষ্ট, তোমার ভালো লাগা।
চেয়েছিলো প্রথম প্রকাশিত বইয়ের পাণ্ডুলিপি তোমার হাত থেকে সই করাবে।
যা হোক, সেসব বাদ দেই।
কেমন আছো? ভালো আছো?
আমিও বেশ আছি।
পুরোনো জীবনে, পুরোনো কষ্টে।
ইতি,
তোমার একান্ত 'সুকান্ত'