আমি যখন বেঁচে ছিলাম, মনে হতো মরে যাওয়া কতই না সহজ।
তখন প্রেম ছিলো, মনে বাস করতো এক অপরুপ নারী।
সন্ধ্যা শেষে তাঁর বড় বড় চোখে হারিয়ে যাওয়া ছিল
চৈত্রের গরম দিনের দু'ফোঁটা বৃষ্টির মতন শীতল।
আমার মনে হতো পৃথিবীতে কত আনন্দ, চারদিকে কত কত ফুল, হাসি।

তখন অন্যকে দুঃখে দেখলে করুণা হতো, কাছে গিয়ে বসা হতো।
সস্তা সান্ত্বনা দিতাম, বুঝাতাম এই দুনিয়া কত অল্পদিনের,
একদিন দুঃখে কাটানো মানে
জীবন থেকে ছিয়াশি হাজার চারশো সেকেন্ড হারিয়ে ফেলা।
তখন আসলেই মনে হতো মরে যাওয়া কতই না সহজ।

তখন পৃথিবীর এক প্রান্তে ছিলো যুদ্ধ,
অন্য প্রান্তে ছিলো হাসি, বসন্ত।
আমার কোনো ভ্রূক্ষেপ ছিলো না।
বুঝতাম মানুষ মারা যাচ্ছে, রাজনীতি চলছে।
আমার দুনিয়ায় তখন ছিলো শান্তি, প্রেম আর হাজার হাজার ভালোবাসার কবিতা।

তারপর একদিন বন্ধ হয় যুদ্ধ।
রাজনীতির নোংরা খেলা বন্ধ হয়,
মানুষ মারা যাওয়া বন্ধ হয়,
শিশু-নারী নির্যাতন বন্ধ হয়,
মানুষ আর কষ্টে থাকেনা,
সস্তা আবেগ জুড়ানো সান্ত্বনা বন্ধ হয়।

কিন্তু আমার জীবন থেকে চিরকালের জন্য হারিয়ে যায়
সেই বড় বড় চোখের হাসি, তাঁর কণ্ঠে আমার নাম।
ফুল, কবিতা আর হাসিতে মোড়ানো জীবন তখন
বরণ করে নিলো ইট, কাঠ, পাথরের জীবনকে।
আমি খুব করে অনুভব করলাম আমার এখন মরে যাওয়ার সময়।
কিন্তু চিরকাল সহজ মনে করা মৃত্যু, আমার জীবনে আর আসলো না।
আমি প্রতিদিন কামনা করি অন্ধকার, ঠান্ডা শরীর,
বসন্তের জায়গায় কালবোশেখী ঝড়।
জীবন থেকে হারিয়ে যেতে থাকে লক্ষ হাজার সেকেন্ড।
চারদিকে সব সুন্দর হয়, ঠান্ডা হয় -  কিন্তু
কিন্তু আমার জীবনে মৃত্যু আসে না।
আমি মরে গিয়ে বুঝি মরে যাওয়া আসলে কতটা কঠিন!