তোমার চোখে দেবদাস, গভীর এক অপার বেদনার ছায়া,
যেন শতাব্দীর পুরাতন মন্দিরে স্থবির সময়ের মায়া।
পার্বতীর চোখে অমলিন প্রেমের নিদ্রাহীন ব্যাকুলতা,
তবু তোমার হৃদয়ে প্রবাহিত একান্ত শূন্যতার অনন্ততা।

তুমি কি শুধুই এক নামহীন কালের দূত?
না কি সময়ের অভিশাপ—অলীক এক অনুশোচনা?
তোমার পথ যেন বাঁকা, নির্জনতার অন্বেষণে বয়ে যায়,
প্রেমের মাঝেও লুকিয়ে থাকে আত্ম-অস্তিত্বের ধ্বংসপ্রায়।

মদের নেশায় ডুবে থাকা, সেই নিষ্প্রভ জীবন—
মনে হয় যেন জগৎ থেকে ছিন্ন এক অশান্ত প্রহর।
কালের প্রতিটি শ্বাসে তুমি গড়ে তুলছো বিষাদের মন্দির,
সেখানে ভাঙাচোরা স্বপ্ন জমে, আর অশ্রু গড়িয়ে পড়ে নিঃশব্দে।

পার্বতীর প্রেমের রুদ্র চেতনায় জ্বলে উঠে প্রবল আবেগ,
তোমার জীবন তবু অনিচ্ছার অমোঘ ছায়াপথ।
তুমি যেন আঘাত করা এক শব্দহীন আর্তনাদ,
দুঃখের অন্তঃস্থলে বসে থাকা এক গোপন তপস্বী সাধ।

প্রেমের গভীরতায় লুকিয়ে থাকা আকাঙ্ক্ষার চিহ্ন,
তুমি তাকে উপেক্ষা করেছো, নিয়েছো বেদনাময় পথের পণ।
শরত চাঁদের আলোক-ধারা তোমার মুখে পরেছে ছায়া,
তবু তাতে তুমি দেখেছো নিঃশেষিত জীবনের মহা বিচ্ছেদ।

মনের মধ্যে জমা ব্যথা, ছড়িয়ে পড়ে প্রতিটি শব্দে,
প্রেমের মাঝেও তুমি খুঁজে পাওনি শান্তির নিদান,
দেবদাস, তোমার হৃদয় যেন চিরন্তন অসীম যন্ত্রণা,
তুমি একা বয়ে যাও সময়ের নিষ্ঠুর গতি ধরে।

তোমার চিত্তের অমোঘ ক্ষরণে জ্বলে ওঠে বিষণ্ণতা,
সেখানে প্রেম আর বেদনা মিলেমিশে গড়ে তোলে শূন্যতার মায়াজাল।
জীবনকে তুমি ছুঁতে পারো না, বরং নিজেই হারাও—
প্রেমের প্রতিটি স্পর্শই যেন আঘাতে পরিণত হয়।

তোমার পথের ধূলায় পড়ে থাকে নিঃশেষিত আকাঙ্ক্ষা,
তোমার অন্তর্গত যন্ত্রণায় লুকিয়ে থাকে প্রেমের অপূর্ণতা।
তুমি কেবল দেবদাস—নিঃশব্দে হারিয়ে যাওয়া এক আত্মার প্রতিচ্ছবি,
যেখানে বেদনার আঁধারে আলোও মুছে যায় ধীরে।

তোমার জীবনের প্রতিটি দিনই এক অমোঘ ক্লান্তি,
পার্বতীর চোখে ঝরে প্রেমের অশ্রু, তবুও তোমার নির্বিকার ঘোর।
তুমি সেই প্রান্তিক চরিত্র, যার কাছে প্রেমের মানে
শুধু দুঃখ আর আক্ষেপের স্থবির প্রতিধ্বনি।

দেবদাস, তোমার হৃদয়ে কি আজও বাজে সেই সুর?
যেখানে মিশে থাকে প্রেমের আঘাত, আর অনিঃশেষ বিরহের তীক্ষ্ণ আঘাত।
তুমি বয়ে যাও কালের অন্ধকারে, নেশায় বিভোর,
তোমার গল্প যেন শুধু এক বিষণ্ন পরিণামের অমোঘ কাহিনী।