বেশ ক'দিন ধরেই ভেতরটা কেমন কেমন যেন
করছে!  
রোজ নিয়ম করে অনিয়মে ঘুম থেকে ওঠা।

কাজ থাকলে বেরিয়ে পরা,
না হলে বিছানায়'ই গড়াগড়ি।

অসময়ে নাস্তা করা,
কখনো সেটাও করা হয়ে ওঠে না।
পরীক্ষা থাকলেও, সেই ভয়টা কাজ করে না
পরীক্ষা!  

হাতে অজস্র সময়,
কিন্তু করার মতো তেমন কিছুই নেই।

অথচ, এই তো
এই ক'টা বছর আগের কথা।

দাদাবাড়ি থাকি,
স্কুলে সবে পা দিয়েছি।

তখন জানুয়ারি মাসটা স্পেশাল ছিলো,
একে তো নতুন বছর নতুন ক্যালেন্ডার,
তার ওপর নতুন বই খাতা, নতুন ব্যাগ , নতুন পোশাক, নতুন জুতো।

সে বার,
আম্মা কুশিকাটায় লাল একটা সোয়েটার বানিয়ে দিয়েছিলো,
স্কুলের পোশাকের সাথে পরতে হবে বলে।

সেই সোয়েটার টা আম্মা এখনো সযত্নে আলমারিতে
রেখে দিয়েছে।
যেন তার ছেলেটার গোটা শৈশবটা
আগলে রেখেছে সে।

আমার এখনো মনে আছে,
নতুন জুতো কিনে আনার পর
জুতোর গন্ধটা শুকে দেখেছিলাম।
সে রাতে মোজা জুতো পড়ে,
বিছানায় হেটেছি, শুয়ে বসে থেকেছি,
যাতে ময়লা না লাগে।

প্রথম স্কুলে যাওয়া,তড়িঘড়ি করে ভোর বেলা তৈরী একদম।
এতো গেল স্কুলের কিছু কথা।

ওপর ওয়ালার দয়ায়,
দু চোখ ভরে কতো কি'ই দেখার
উপভোগ করার সৌভাগ্য হয়েছে।

মাঠে খেলা, লাটিম,ডাঙ্গুরী, গাছে চড়া
কিংবা রস কস সিঙ্গারা বুলবুলি, দাড়িয়াবান্ধা, বৌচি,
ভাইবোন মিলে খেলনাবাটি খেলা।

গাছের পাতাকে টাকা বানিয়ে, বাজার করতে যেতাম।
সদাই কিনতে সদাই!

নারকেলের ডাল দিয়ে গাড়ি বানানো, সেটাকে
টেনে টেনে খেলা।
কিংবা রেললাইনের ধারে কিছু গাছ দেখতাম
সাদা সাদা ফুল। মধু খেতাম সেটা থেকে।
গাছটার নামটা আজও জানতে পারিনি।

রোজ শুক্রবার নারকেলের আইসক্রিম ওয়ালা আসতো,
বাক্সটা বারি দিয়ে শব্দ করতো,
শব্দটা শুনেই দে ছুঁট। এসে গেছেন তিনি, আইসক্রিম।

পুকুরে ঝাপাঝাপি, কিংবা
চাপ কল পাড়ের পানির যাবার ড্রেন টা বন্ধ করে রেখে
সুইমিংপুল বানানো।

গায়ে সরষে তেল মেখে,
উঠোনে পিড়িতে বসে রোদ
পোহানো।

ও হ্যাঁ, গ্রামে আগে শিলপাটা কাটার জন্য লোক আসতো।
কতো ফুল মাছ পাখি এঁকে দিতো তাতে।

ভাঙ্গা প্লাস্টিকের জিনিস দিয়ে কটকটি,
বাদামের চিক,
কিংবা কাচের বাক্সে করে হাওয়াই মিঠাই আসতো।

গোটা বিকেল ছুটে বেড়িয়ে বাড়ি ফেরা।
সন্ধ্যে নামলে, ঘরে ঘরে সবাই পড়তে বসে যেত।

কুঁপিবাতি,হ্যারিকেন এখন আর জ্বালায় না কেউ,
ওরাও নিভে গেছে আমার শৈশবের মতো।

(২০১৮)