তারপর,
অনেক অপূর্ণতা নিয়ে একদিন আমি চিরনিদ্রায়।

মৃত্যুটা স্বাভাবিক নাকি অস্বাভাবিক ,
সেটা ঘেঁটে দেখতে হবে।

আমার সাধ ছিলো আজন্ম দেখার,
তাই চোক্ষুজোড়া খোলা রেখেই আমি মারা গেলাম।

এই তো সেদিনও,
ভোর বেলার নরম রোদে ঘুম ভাঙতো আমার।
উড়নচণ্ডি এক ছেলে আমি,
খানিক অগোছালো।

চার দেয়ালের আধুনিকতায় ঘেরায় জীবনের সাথে,
আপোষ হয় না আমার।

শহুরে খোলা জানালায় ভেজা ঘাসের ঘ্রাণ খুঁজে ফিরি,
যে পাহাড়ের বুকে নেমে আসে শীতল ঝরনা.
সে পাহাড়ের নীচে,
ঝরনার পানিতে মুখ ডুবিয়ে থাকি আমি।
চোখ খুলে স্বচ্ছ পানিতে খুঁজে ফিরি জীবন,জীবাশ্ম
পাথর কিংবা শ্যাওলাদের ভেসে থাকা।

যে স্বচ্ছ পানিতে ঝিনুক কুড়োই.
মুক্তোর আশায় নয়, ঝিনুকেও বেঁচে থাকে জীবন।
সে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে এক বুক নিশ্বাস নিই একদমে,
চোখের তৃষ্ণা মেটাই সবুজে।

নামধারী কবিদের মতো আমি পারিনি সে চূড়ায় বসে,
একশ একটা কবিতা নিয়ে ভাবতে।
ওটা আমার কাছে সময় নষ্টের মতো,
যেটুকু সুযোগ পেয়েছি, বুক ভরে দম নিয়ে নিই,
খুঁজে নিই জীবন।

যারা ফের লেখার ক্ষেত্রে আমায়
আলৌকিক ভাবে অনুপ্রেরণা যোগাবে।

সুযোগ পেলে কিছু সতেজতা কিছু স্নিগ্ধতা বন্দি করে,
আমার চার দেয়ালের কক্ষে নিয়ে আসতাম।

এ পৃথিবী মায়ানগরী,
জীবে মায়া জন্মে, জন্মে মানুষে, কবিতায়,
গল্প উপন্যাসের কোনো চরিত্রের ওপর।

গোলকধাঁধা এ মায়াতে,
যে বইটা অর্ধেক পড়ে রেখে দিয়েছিলাম
মরার পর আফসোস হচ্ছে খুব,
কেন বাকিটা শেষ করতে পারলাম না!

বাতিল যে কবিতাগুলো দুমড়েমুচড়ে ছুড়ে ফেলেছিলাম ,
ময়লার ঝুড়িতে সে কবিতাগুলো কি এতোটাই বাজে ছিলো?

ও লেখাগুলোও তো আমার সন্তানের মতো
হোক সেটা ভালো কি মন্দ!  
আমার অস্তিত্বকে জানান দিতো ওসব, মিথ্যে তো কিছু নয়।

আমার আজন্ম সাধ ছিলো দেখার,
তাই যেদিন ভুল বুঝে লোকে ফুটপাতের ঐ কিশোরকে মারছিলো
ছেলেটা আকুতি মিনতি করছিলো,
আল্লাহর দোহাই লাগে আমি চুরি করি নাই সাব, মাফ কইরা দেন!  
সেদিনও খুব করে তাকিয়েছিলাম।
মানুষ কতটা নির্দয় হতে জানে!  
ছলছল করছিলো চোক্ষুজোড়া আমার।
কিছুই করতে পারছিলাম না বলে।

এই যে আমি চিরনিদ্রায়,
আমার আমার মৃত্যুর কারণ খুঁজতে
পোস্টমর্টেম করা হবে,
স্বাভাবিক নাকি অস্বাভাবিক।

যে কারণই বেরিয়ে আসুক কিনা,
পোস্টমর্টেমের রিপোর্টে যদি বলে দেয়া যেত,
কাকে কতটা ভালোবেসেছিলাম,
কতোটা কাছে টেনেছিলাম নিজের!

তাহলে বোধয় নিখোঁজ হৃদয়ের সন্ধান অচিরেই খুঁজে  নেয়া যেত।
মানুষ জানতো,কতটা ভালোবাসার পর এ হৃদয় নিখোঁজ হয়েছিলো।

তবে তৃপ্তি এটুকুই যে, আজন্ম দেখার সাধ আমার,
আর মৃত্যুটা চোক্ষুজোড়া খোলা রেখেই হলো।