কবিতা স্বার্থপর, বেঈমান
সে সর্বদা আমাকে নিয়ন্ত্রণ করে।
তার যখন ইচ্ছে, সে তখন ভাবনায় আসে,
নিজেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে, তার ইচ্ছে মতো।
আর আমাকে গুছিয়ে নিতে হয়।
আমি যতই চেষ্টা করি না কেন, যত জিরই দেই না কেন
তাকে টেনে হিঁচ্ড়ে, নিজের ভাবনার ঝুলিয়ে বন্দি করতে
পারিনা।
কবিতা, লেখালেখি
এক প্রকাশ অনিশ্চিত, অপ্রত্যাশিত বিষয়।
এমনও হয় বিস্তর মাঠ, ঘাস, পুকুর পাড়, বিল
ধানক্ষেতে দু হাত ছড়িয়ে বুক ভরা দম নিলেও সে এসে
ধরা দেয় না।
এমনও হয়, ভিড়ে জ্যামে বসে থেকে,
কিংবা শহুরে চৌরাস্তার মোড়ে, লোকের গাদাগাদিতে
বাসের ভিড়ে, জানালার ধারে কালো ধোয়ার বিরক্তিকর
অনুভূতিতে, সে এসে ভাবনার দরজায় কড়া নাড়তে থাকে।
কবিতা, লেখালেখি স্বার্থপর
তার যখন ইচ্ছে হয়, আসবে ভাবাবে
লেখা হয়ে গেলেই চলে যাবে
আবার আমাকে একা করে দিয়ে।
রোজ রোজ আমি বেঁচে থাকি
নতুন কিছু ভাবনার অপেক্ষায়।
জীবনে চলার পথে, বাস, রিক্সা, ট্রেন মিস হয়ে যাওয়ার
মতোই, কবিতাও মিস করে যাই।
অপ্রস্তুত মুহূর্তে ওদের আগমনে, নিজেকে লেখার কাগজের
কাছে নিয়ে যেতে পারিনা বলে, ওদের ছেড়ে দিতে হয়।
আজ অবধি যাসব লিখেছি,
তার চেয়ে বোধয় বেশি ছেড়ে এসেছি।
লেখার ক্ষেত্রে আমাকে গ্রাম মেঠোপথ, বিল, মাঠঘাট
নদী, পচা ডোবা,
কাদামাখা জলে ডুব দিয়ে তোলা শাপলা ফুল,সেই কিশোর
ভেজা রেললাইন,স্কুলের ঘন্টা,
মাচায় বসে থাকা বয়স্কদের খোশগল্প,
রোদে শুকোতে দেয়া গাঁয়ের কেচ্ছাকাহীনি,
হ্যারিকেনের আলোয় ডুব দেয়া সন্ধ্যে সূর্য,
কলপাড়ে বাচ্চাদের হাতমুখ ধোয়া, পড়তে বসা মাদুরে
প্রেরণা যোগায়।
তেমনি, শহুরে কাচ ঢাকা জীবন – চারদেয়াল,
ঝুল বারান্দা, সিঁড়িঘর, জানালার পাশে চা’য়ের কাপের
বৃষ্টির জল, গাড়ির হর্ন
ফুটপাত, হকারের নানান সুরে কাস্টমারদের ডাকা,
মাছের বাজারের লোকের দরদাম, মাংসের কাচা গন্ধ,
পার্কের হাওয়াই মিঠাই, রঙিন বেলুন,বাদাম ভাজার গন্ধ কিংবা ঝালমুড়ি।
কিংবা ময়লার গাড়ি, রিক্সার বেল, শতশত বিজ্ঞাপন বোর্ড
লাইব্রেরির ধুলো জমা তাক, লেখা ছাপানোর জন্য ছুটে বেড়ানো তরুন লেখক,
প্রকাশনি , আমাকে প্রেরণা যোগায়।
আমি রোজ এখান থেকে সেখানে ছুটে চলি
বাসে, রিক্সায় কখনও হেঁটে।
কবিতা, লেখা হঠাৎ আমার কলার টেনে ধরে,
ওমনি মুঠো ফোনে নোটপ্যাডে তাকে বন্দি করে ফেলি।
আমার জীবনে সাদা পাতার সাথে সখ্যতা খুব বেশিই।
বলতে গেলে একটা সংসার পাতার মতো, যেখানে
কবিতা, লেখালেখির ভাবনার হুকুম চলে অবিরত।
আমি সেসব অক্ষরে অক্ষরে,
শব্দে মিলিয়ে চলি মাত্র।
কবিতার কখনও দয়া হয়না আমার ওপর,
আমি রাগ দেখাতে পারিনা, অভিমান করলে সে
আরও পিছপা হয়ে যায়।
জীবনে হুট করে আসা কোনোকিছু,
হয় খুব বেশি ভালো
নয়তো সব ওলট পালট করে দেয়।
কবিতাও তেমনি, যখন এলো তো এলোই।
আর যাদের ফেলে এসছি, অতীতে
তারা অভিশাপ দেয় আমাকে, সে জন্যই নতুন কিছু
ভাবনা, লেখা ধরা দিতে চায় না।
কবিতা স্বার্থপর, পাষাণ
কবিতা অপ্রত্যাশিত, কবিতা স্বাধীন তার স্বত্বায়।
আমি কেবলই দাস মাত্র
কলমে কাগজে সে হুকুম মেনে চলি,
ঋণ শোধ করি।