বৃষ্টির পানিতে ভর্তি ধানক্ষেত,
পুকুর,ডোবা
চোখ বন্ধ করলেই ভেজা কচুরিপানার গন্ধ ভেসে আসছে।
দল বেধে হাঁসেদের চলে যাওয়া
ঠুকরে ঠুকরে শামুক খাওয়া।

গ্রামে খুব লক্ষণীয় একটা বিষয় আছে,
এখানে একেক বাড়ির লোকেরা, তাদের হাঁসেদের
বাহারি রঙে মাখামাখি করে রাখে
যাতে চিনতে সুবিধে হয়।
সবুজ ধানক্ষেতের মাঝ দিয়ে সেসব
রঙিন হাঁসেদের চলে যাওয়া দেখতে বেশই লাগে।

ভরা পানির মৌসুমে চেনা অচেনা নানান মাছেদের
দেখা যায়।
পুকুরে বাঁশের কঞ্চে ফেলে রাখা হয়।
ওতে মাছেরা এসে জড়ো হয়, খাবার খায়।
মাঝে মাঝে নানান পাখি এসে বসে,
মাছরাঙা বড্ড চনমনে
কখন যে মাছ নিয়ে উড়াল দেয়,
চোখের পলকে বোঝাই দায়।

ভোর বেলা ঘুম থেকে ওঠার পর যখন,
হাত মুখ ধুতে যেতাম
খেয়াল হতো,ছোট ছোট মাছেরা সব হালকা মুখ ভাসিয়ে
খাবার খেতে আসতো।
পানির এতটা ওপরে যে, মনে হয় খপ করে ধরে ফেলা যাবে।
চেষ্টা করেছিলামও বহুবার, পারিনি।
পানি একটু নড়তেই ওরা পানির নীচে চলে যায়
অন্য এক পাশে আবার ভেসে ওঠে।
এ এক মজার খেলার মতো।

তবে বিকেলটাতে, রোদ চলে যাবার পর
বাঁশঝাড়, নারকেলর গাছের ছায়া যখন পুকুরে পরে
তখন পুকুর বেশ শান্ত হয়,মাছেদের চলাচল তখন
পানির নীচে।
ওপরের স্তরের পানি হালকা গরম, তলানির ঠান্ডা।
এক ডুবেই শীতল মন।

সন্ধ্যেতে কাঠঠোকরা,বাতাসে বাঁশঝাড়ের কড়মড় আওয়াজে
অন্ধকার নেমে আসে।
পুকুরে ভেসে যাওয়া শ্যাওলার মতো ধীরে ধীরে
দূরে চলে যায় – ডুবে যায় সূর্য।

দূর থেকে ভেসে আসে আযানের ধ্বনি,
কলপাড়,পুকুর ঘাটে হাতমুখ ধোয়া,
ওযু করার তাড়া।

মাটির বাড়ির মেঝেতে,হ্যারিকেনের আলোয় পড়তে
বসে যায় কেউ কেউ।
কানে আসে জোরে জোরে নামতা পড়ার আওয়াজ,
আঙুলের কড় গুণে গুণে যোগের হিসেব কষতে থাকে
কোমলহাতের ছোট্ট ছেলেটি।
মা বলেছে,এবার অংকে বেশি নম্বর পেলে
মেলায় বায়োস্কোপ দেখাতে নিয়ে যাবে।

রাত বাড়ে, বাড়ে মা ছেলের কথোপকথন
ফের শুরু হয় বৃষ্টি।
তারপর, মা ছেলের বলা কথাগুলো আর শুনতে পাইনা।

ঝরছে বৃষ্টি,
ক্রমশ আঁধারের বুকে তলিয়ে যাচ্ছে রাত।
লেখা ছেড়ে; জানালার পর্দাটা টেনে,
আমিও ঘুমোতে গেলাম।

© Farhan Noor Shanto

(২০১৮)