মাঝে মাঝে নিজেকে ,
একটা বৈঠকখানা মনে হয়।

মস্ত বড় বাড়ি,
অনেক গুলো শোবার ঘর, বারান্দা
সামনে বিশাল আকারের উঠোন।

আর,
এসবের মাঝে আমি এক নান্দনিক বৈঠকখানা।

ছোটখাটো বললে ভুল হবে,
তবে খুব বেশি বড় যে তাও কিন্তু নয়।

কোণে একটা কলের গান রাখা,
পাশে সেতার পিয়ানো।
বাঁ দিকটায় ঘড়ি,
এক পৃথিবীর হাসি ভরা একটা বাচ্চা ছেলের ছবি টাঙানো।

বৈঠকখানা একটা রাজকীয় নাম,
তবে এখানে রাজকীয়তার ছোঁয়া নেই বললেই চলে।
মধ্যবিত্তিয় পরিপাটি গোছানো পরিবেশ।

দখিনের দিকটায় মস্ত বড় খিড়কি,
সকাল বিকেল নরম রোদটা বেশ ভালো মতোই
এসে উঁকি দেয় এখানে।

হাতে আয়না নিয়ে বাচ্চা ছেলেটা ,
পাশের বাড়িতে থাকা,তার বন্ধুর সাথে আলো নিয়ে খেলা করে।

এ খিড়কিতে,
এক কোণে রোজ আচার শুকোতে দেয়া হয়।

বৈঠকখানা এক শান্তির আশ্রয়স্থল,
ক্লান্তি অবসাদ হৈ হৈ করে হাসা,
এসবে যেন রমরমিয়ে থাকে সকল মুহূর্ত।

ছোট বাচ্চাটা এক দৌড়ে এসে মা'য়ের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে,
দাদু দাদু বলে পাগল করে দেয়।
ওর হাসি পুরো বৈঠকখানাকে মাতিয়ে তোলে।

ঘুমের ঘোরে জড়িয়ে থাকা ভারী কন্ঠস্বরের আলসেমি,
দূর করে এক কাপ বৈঠকি চা।

বাড়ির বড়বড় সিদ্ধান্ত গুলো এখানে বসেই নেয়া হয়,
সকল আয়োজন, বিয়ে,জন্মদিন,
কিংবা খারাপ মুহূর্তে একে অপরের কাঁধে ভরসার হাত
এখানেই বসেই রাখে।

বৈঠকখানা কারো কারো কাছে একটা ক্যানভাস,
হরেক রকমের আঁকিবুকি, ছবি,
প্রিয় ব্যক্তিদের স্কেচ স্বযত্নে রেখে দেয়া হয়।
ছোটখাটো লাইব্রেরির দেখাও মেলে কখনও কখনও।

এসব বাড়িতে বৈঠকখানায়
গান বাজনা, সাহিত্যর বড্ড চর্চা হয়।
বাঙালিয়ানা,বাংলা ভাষা,সবেতেই জড়িয়ে রাখে এরা নিজস্বতাকে।

এ বৈঠকখানায় রোজ শুক্রবার নিয়ম করে,
ভিক্ষুকদের ভাত খেতে বসানো হয়।
ফিরিয়ে দেবার ইচ্ছেটা এ বাড়ির লোকেদের তেমন নেই।

একা কি ভালো থাকা যায়, বাঁচা যায়?
সবে মিলেই তো বাঁচতে হয়।

বৃষ্টিতে ভিজে চুপচুপে হয়ে যাওয়া রিক্সাওয়ালাকেও,
এখানে এসে বসতে দেয়া হয়েছিলো।
কাঁপছিলো বেচারা।

বৈঠকখানা এক আড্ডাবিলাশ,
বাড়ির মধ্যমণি এ ঘরটা।

ফড়িং এর পাখার মতো জোরে বইতে থাকে বাতাস,
জোনাকির আলো মশালের মতো উজ্জ্বলতা এনে দেয়
সন্ধ্যেতে।

বৈঠকখানা একটা ভালোবাসার জায়গা,
বড্ড ভালো লাগে আমার।

আমি একলা এ বাড়ির বৈঠকখানা,
আড়ি পেতে গল্প শুনি ওদের,
এছাড়া বাজে অভ্যেস নেই আমার।