আমি মৃত,
নিথর দেহখানি পড়ে আছে আমার চোখের সামনেই।
বন্ধ দু'চোখ, পরনে ফতোয়া
এখনও মুখটা সাদা কাপড়ে ঢেকে দেয়া হয়নি।
বেঁচে থাকতে যারা দেখতে চাইতো না
খোঁজ রাখতো না,
জমিয়ে রাখা অভিযোগ রাগ তুচ্ছতাচ্ছিল্য - ওসব নিয়েই
ওরা দেখতে এলো আমায়।
না জানি কত গালমন্দ করছে!
আমার শরীরে দু'ফোঁটা চোখের জল ফেলে দিয়ে গেল
কে যেন!  
দু'ফোঁটা জল এত ওজন, ভার বইতে পারছিলাম না,
ইশ্ চোখটা খোলা থাকলে একটু দেখে নিতাম।

আমি মৃত
ভেতর ভেতর মারা গেছে আমার বিশ্বাস,
অচল এ ভরসার হাত।
পকেটে খুচরো পয়সা থাকলেও, ছোট্ট বোনটার জন্য
চকলেট কিনে নেবার জোরটা হাতে নেই যে,
পকেটে হাত ঢোকাবো, পয়সা বের করার জন্য।
ও বরং মুখ ফিরিয়েই কাঁদুক।

আমি মৃত
আমি অবহেলিত অনেকটাই,
কবিতার কাছে।
তবে বানান ভুল করার মতো সুযোগ হবেনা আর
ভুলভাল ছন্দ, মাত্রাবৃত্ত নাকি পূর্ণমাত্রা
এসবের প্যাঁচে পড়ার দায় নেই আমার।
মানুষ মরে গেলে, অন্যর লেখার পাতায় আবিষ্কার হয়
নানান ভাবনায়, রাগ অভিমান,
হাস্যকর ক্যারেক্টার ভেবে, লিখে ফেলে কতশত লেখা।
বেকার কবিতা, নয়তো উদ্ভট ভাবনায়।

আমি মৃত
কানে কলিং বেলের আওয়াজ টা আর পৌঁছাচ্ছে না।
রোজ আমাকেই বিছানা ছেড়ে উঠতে হতো,
মা বোন পড়ে পড়ে ঘুমোয়।
খবরের কাগজওয়ালা কি ভিক্ষুক,
রোজ রোজ কতো লোক আসে, আমি দেখি।
এবার আর সেসবের বিরক্তি নেই,
আসুক ওরা,হয়তো কষ্ট করে দু'চার বার কলিং বেলটা বাজাতে হবে,
কেউ না আসা অবধি।

আমি মৃত
শেষবার যখন বইয়ের তাকগুলো থেকে বেছে বেছে
বই হাতে নিচ্ছিলাম,
পাতা উল্টে পাল্টে দেখছিলাম
হাত জড়সড় হয়ে আসছিলো।
বইয়ের ভেতর লাল রঙের ফিতে,
পৃষ্ঠা ভাঁজ করে রাখা আধপড়া উপন্যাস।
শেষবার যখন পড়ে যাওয়া বইগুলো তুলতে গিয়েছি
পকেট থেকে কলমটা পড়ে গিয়েছিলো।
ব্যাস!
ঐ হাতছাড়া হলো সব।

আমি মৃত
মৃত আজ।