সারারাত ধরে, একটু একটু করে
জমে থাকা কুয়াশা ঝরে ঝরে পড়ে ।
বৃষ্টির শেষে যেন, ছুঁয়ে থাকা জল
গাছের পাতা থেকে, টিনের চাল বেয়ে
অনেক ধীরে ধীরে, ঝরে ঝরে পড়ে ।
খুকুমণি'র ঘুম ভাঙ্গে, চোখ মিটমিট করে
নিজেকে সে বড়, আলসে বলে ভাবে ।
বাবা চলে গেছে, লাঙ্গল কাঁধে মাঠে
মা'র ব্যস্ততা যেন, সারা উঠোন জুড়ে ...
পরিচিত চিত্রটা চোখ বুঁজে থেকে
খুব সহজেই সে, নেয় অনুমান করে ।
গুটিগুটি পায়ে বেরোয় খুকুমণি
তারও যেন অনেক কাজের ছড়াছড়ি ।
সরষে ক্ষেতে ক্ষেতে খেলবে লুকোচুরি
খেজুর গাছে উঠে, নামাবে রসের হাড়ি ।
ক্ষেতের মাঝ দিয়ে-দৌড়ে যাবে পুকুর পাড়ে
ঐ চাষীকে আজ তার, হারাতেই হবে দৌড়-এ ।
ঝিলের জলে নেমে, তুলবে শাপলা-শালুক
গেঁথে মালা তারই, গলায় পড়বে সবাই মিলে ।
সারা গ্রামের আঁনাচে-কানাচে, ঘুরে ফিরে নেচে
চড়ুইভাতি করবে সবে, দুপুর হলে শেষে ।
প্রজাপতির পিছে ছুটে, পাখির বাসা খুঁজে খুঁজে
ফিরবে যখন ক্লান্ত হয়ে, সূর্য যাবে পাটে ।
মুখ লুকোবে খুকুমণি, মায়ের আঁচল তলে
শীতের হিমেল দমকা বাতাস, রাগ উড়িয়ে নেবে,
সারাদিন খাসনি কিছু, চল-এবার খাবি তবে
সমস্ত রাগ ভুলে, মা বলবেন হেসে ।
খানিক পরে বাবার গলায়, মাটির গানের সুরে
খুকুমণি স্বপ্ন দ্যাখে, অনেক বড় হবে ।
রাত্রি হলে মায়ের, আদর মাখা গলে
ঘুম পাড়ানির সুরে, চোখ জড়িয়ে আসে ।
যে উষ্ণ কোমল আদর, এই ছেঁড়া কাঁথার তলে
খুকুমণি ভাবে, আর কোথাও কি কেউ পাবে ?