খুব ভালোই তো ছিলাম রূপা,
হঠাৎ কেন এভাবে ফিরে গেলে?
স্তব্ধতায় ঘেরা প্রহররা করেছে আত্মহত্যা তোমার অপেক্ষায়,
ফুল শুকিয়ে গেছে সৈতপ্রতিভার অধরায়,
হারিয়ে গেছে তোমার অনুরক্তি তিক্ত জলশুন্য স্রোতের আঘাতে।

তোমার ফিরে যাওয়ার দিন
এক অসাধারণ আবওহাওয়া ছিল,
পশ্চিমের আকাশে ভেসে উঠেছিল প্রেমময় ঝড়

ভেবেছিলাম এই ঝড়স্রোত
আমায় ভাসিয়ে নেবে তোমার স্নিগ্ধতায়,
যেখানে তোমায় দেখব
এক স্বর্গের পরীর সাজে বসে ছিলে
আমার অপেক্ষায়।

ঘুম ভাঙলো আমার আকাশ ভাঙার শব্দে।

হ্যাঁ রূপা,
ওই রমরমা ঝড়ে সেদিন আকাশ ভেঙেছিল,
ফুঁসে উঠেছিল বাতাস ধ্বংসযজ্ঞের নির্মমতায়।
তোমার জন্য স্বীকার করা ত্যাগেরা সেদিন ঝরে গেছিল বসন্তের পাতার মতো।

আর আমার সেই ধূসর গোলাপ?
সে তো কবেই মরে গেছে, বিষাদগ্রস্থ অপরাহ্নে।

বাতাস তোমার কথা শোনেনি,
প্রকাশ করেনি তার একগ্রাস বিষন্নতা।
রিক্ততা বুঝে তুমি যে ওই চিঠিটাকে ছুড়ে ফেলে দিলে,
আর যে তাকে তুলেই নিলে না
অথচ, সেই চিঠিতে ছিল তোমাকে বলতে চাওয়া কতবর্ষের কথা।

তোমাকে কিছু বলতে চেয়েছিলাম সেদিন;
তুমি দেখতে পারতে, দেখলে না।

তুমি,
এমন ভাবে ঘুরে ফিরলে,
যেন তোমার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল এক আবর্জনার স্তুপ।

হ্যাঁ আমি অপরাহ্নের ধ্বংসক্ষেত্রে ধ্বসে গিয়েছি ঠিক,
কিন্তু তুমি আমাকে এভাবে ছুড়ে ফেলে দিবে তা কোনদিন ভাবিনি,
পরক্ষণেও না।

অতঃপর একদিন,
যত্নে তুলে রাখা কাশফুলেরও বাঁচার ইচ্ছে ফুরিয়ে এলো
কে জানে, কোন অজানা কারণে।

তুমি থাকবে, বহুকাল।
মিশে যাব তো আমি, মিশে যাব, রূপা।
আমি যে ভাসব অচীন মেঘসাগরের মাঝে,
সে সাধ কি আর পূরণ হওয়ার আছে?

বলতো, আত্মহত্যার আত্মা কি ফের মানুষ হতে চায়?

তাও কেন জানি আকাশ বাতাস কোন কিছুই আমার কথা শোনেনা,
ভাসিয়ে নিয়ে বেড়ায় না আর;
না আমাকে তোমার স্নিগ্ধতায়, না তোমাকে আমার নির্যাসে।
ওই উঁচু থেকে যে জল বয়ে আসে ভূমির কাছে,
তাতে যে এতো অনুরক্তি তোমার
যদি জানতাম,
তবে আমিও জল হয়ে ঝড়ে পড়তাম ওই পাহাড় থেকে,
ছুঁয়ে যেতাম তোমার পায়ের তল বেয়ে।

বলতে পারো,

"মানুষ, সে তো নিজেই মরে যায়,
নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় অচিরেই
সে তো অমর নয়,
তবে তার ক্ষণের ভালোবাসা,
কি করে অমর হয়?"

তা আমি জানিনা রূপা,
কোনদিন তো নিজে দেহচ্যুত হয়ে দেখিনি।
মৃত্যুর পরও কি কাউকে ভালোবাসা যায় কি না, তা তো জানিনা!
কে জানে
কেন মানুষ ঠেকে যায় আরেক মানুষের মাঝে
যদি না ঠেকতাম, তবে আরও ক'টা দিন বাঁচার ইচ্ছে করতো।

রূপা, এখানে একঝাঁক স্বার্থের স্রোত;
প্রহর গুনছি অপেক্ষার,
প্রহর গুনছি।

তুমি আসলে হেমন্তের শেষে আকাশ ভেঙে নামবে বর্ষা,
তুমি হতে যদি কোন ধুমকেতু, আমি হতে পারতাম অমাবস্যা।

কবে আসছো রূপা?
এত্তগুলো গল্প যে জমে আছে ফাল্গুনের পাতায়, পড়বে না?