তুমি সেদিন আসনি বলে
ফিরে গেছে সব মেঘদল
থেমে গেছে কোলাহল, মরে গেছে তৃণ।
তখন,
এ পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম ফুলটার পদতলে আঠারো
রোদেলা বিষন্ন প্রেয়স, ব্যালকনিতে ভ্রমের প্রতিচ্ছবি
ঐ বাইশ প্রহর যাবৎ ব্যবকলনীয় জলছাপ
আর বৃহঃস্পতিবারের অনুরণন;
তোমার হয়ে যাক, নৈঃশব্দে।
দেখা হোক অচিরেই
আকাশগঙ্গার
খুব কাছে!
আমরা এত কাছে, তবু
ট্রামলাইনের দুইপাশ জুড়ে
চলমান বর্ষার ক্রোন্দন থেমে
অনুরক্তির আড়ালে ঘৃণ্য প্রভেদ মিশে যায়।
কোথাকার সব তুচ্ছ বালিকণা
ডুবিয়ে দিয়েছিল আমাদের প্রণয়,
কেন বুঝলাম না আমরা?
কোথায় আজ আমাদের সেসব পারস্পরিক বিভেদ?
আর কোথায়'ই বা আমাদের ঐ সাতদুপুরের অহংকার?
তুমি সরে গেছ অনীহায়, তারা সরে যায় উচ্ছ্বাসে।
ততক্ষণে বহু দেরি হয়ে যায়
আমরা বুঝে যাই এ প্রমাদ:
আমরাই দিয়েছি আমাদের আলোকবর্ষের ব্যবধানরে জন্ম
দিয়েছি আমরাই তারে অধিকার,
তাই মিশে গেছি আমরা তমিস্র গহ্বরে।
মূলত আমরা কি'ই বা চেয়েছি?
রিক্তহত্যায় আদৌ কি আমরা নিজেদেরই ডুবিয়েছি?
আকাশের বুকে প্রভাতের সংশয়,
এরই মাঝে বয়ে চলে তরু, বয়ে যাবে নদ তাহারই পৃষ্ঠতলে।
আজ কোথায় তুমি প্রেয়সী?
কোথায় আজ তোমার নক্তের ভালোবাসা?
কোথায় আছো, কেমন আছো - ভাবছ কি একাকী, আনমনে?
একদিন হুট করে দুঃস্থ ছায়ার পাদদেশে
দেখা দেয় অঙ্কুরিত বীজ, আচমকা!
তোমাকে দেখবার আশায় বপেছিলাম
যদি এরই টানে চলে আসো কোনদিন
আকাশগঙ্গার খুব কাছে?
তারপর,
আকাশের অভিমান হলো, ধ্বসে গেল পাপড়ি
বিষাদময় নেতিভাপ্রাঙ্গনে ঝুলে রয় প্রণয়
হতচ্ছাড়া ফাল্গুনের মনখারাপ, মিশে গেছে তার হরিণী রেণুসুবাসের আধারে!
এভাবেই বুঝে যাই, তুমি ভালো নেই...
তোমাকে দু'হাত দিয়ে দূরে ঠেলে দিলাম এই ভেবে
তুমি থাকবে ভালো তাই,
তুমি ভালো আছো খুব দারুণ - আমি নাই।
এবারে আমাদের কায়া,
অভিন্ন আকাশের তলে ভিন্ন মাত্রায় ভেসে বেড়ায়
কিছু প্রহরের ব্যবধানে, আমরাও আলাদা হয়ে যাই
কদাচিৎ মনে হয়, বহুকাল দেখা নাই।
তুমি পৌছলে অতট হেয়ালিকায়,
ওখানে দূর-দূরান্তে দেখতে পাবে
কিছুমাত্র অশরীরী কুয়াশা,
আমরা কে কোথায় আছি, কে বা কার খোঁজ পায়?
ফুলটার চরণে বালু-পিষে থাকা একালেরে
তাই নিছক মরিচীকা ভাবা, দোষের কিছু নাই।
ফোটেনি কোন কৃষ্ণচূড়া, জোটেনি দুমুঠো ত্রাশ!
রোদেলা বিষন্ন প্রেয়স,
আজ আমাদের জিজীবিষা ফিরে যাক ওখানে
দেখুক না গিয়ে রেণুদের প্রতিক্ষা
ভালো আছে কি তারা এখনো?
এখনো কি তাদের গায়ে ছিটে পড়ে বৃষ্টির ছিটেফোঁটা?
তাদের হাতের নাগালে মাত্র কিছু প্রিয় বিষয়বস্তু;
শহুরে মানুষদের ভিড়ে, তারাও আজ নিখোঁজ।
দেখা হোক অচিরেই, দুর্ঘটনা অতি নিকট।
তোমার আকাশ আলোকিত হোক, জন্ম নিক নয়া ফিকে
একঝাঁক স্বপ্ন মরে যায় অকালে, নেই আকুতির রিকে।
তুচ্ছ এ ভোর, কেটে গেল নিশাদলে।
একঘর বই, এক দেওয়াল ভরা প্রিয় কিছু ছবির অ্যালবাম
সঙ্গী হবে এক নারী, এক আকাশ, এক সমুদ্র!
মনবিষাদের দিনে গা ভিজবে গরম বাতাসে
সময় কাটবে চিরচেনা নীল আকাশে
এক রেণু অতট, এক চুমুক হেয়ালিকা!
মনে হয় ছেড়ে দে আমায়, বাধন আমার খু'ল্
প্রেমিকার আমি ছিলাম এক অগোছালো ভ্রম-ভুল
রয়ে যাক অধরা, মরে যাক ফুল।
হারালে কোথায় আজ,
হারালে কোথায়?
তুমি,
যেন এক বিষাদগ্রস্ত অধরা;
তোমারে পাই না ছুঁয়ে দেখতে কোনবার
পাই না'কো তোমার দেখা।
তবু তুমি আসো, চলে কেন যাও তবে?
বলো কবে?
বলো কতদিন তুমি নীরব রবে?
ভেবে দেখেছ কি,
ঐ বাইশ প্রহর যাবৎ ব্যবকলনীয় জলছাপ
যদি গ্রাসে ফেলে আমায়, তবে?
যদি
পেয়ে যাই কোনদিন
তোমার দেখা
করে নেব জিগাসা কয়েকবার,
"কেমন আছ তুমি, কেমন ছিলে একা?"
উত্তরে বলবে কি আমি জানি,
"ভালো আছি, ভালোই ছিলাম
তোমায় ছাড়া, নিঃসংকোচে অবিরাম"
যদি মন চিৎকারে কয় "দ্বিধা"
নিজেরে জিগাও না আরেকবার,
"কেমন আছ তুমি, কেমন ছিলে একা!"
মনে হয় নি একবারও, "যদি আর না'ই পাই ওর দেখা?
কবে আইব তোমার কাছাকাছি, পাইব তোমার লেখা!