না, এখন আর তোমায় মনে পড়ে না।
দু'রাত নির্ঘুম,
প্রচুর সাহস জুগিয়ে কতবার যে ডাকলাম তোমায়,
"নীহারিকা, ফিরে এসো এ অনুজ্জ্বল রূক্ষতার পথে - চেয়ে দেখো একবার, আকাশগঙ্গার খুব কাছে দাঁড়িয়ে আছি..."
তাও পিছ ফিরে দেখনি একটিবারের জন্য।
এরপর?
এরপর তোমার আমার ব্যবধান কয়েক গজ হয়ে কয়েক আলোকবর্ষ,
তারপর নতুন আরেক পুঞ্জের মাঝে
যেখানে নতুন কোন সূর্য
নতুন কোন নক্ষত্রে,
আমার পরিচিত নীহারিকা - যার ওপর আমার বারো'শ বছর যাবৎ উদ্বিগ্নতা।
আমার আকাঙ্ক্ষিত অপ্রেমিকা, যদি তুমি সত্যিই তাই চাও, তবে তাই হোক;
- আমাদের ফের দেখা না হোক।
..
একজন নারীকে খুব করে চাইলাম,
আকাশ-বাতাস
পাহাড়-চূড়া
নদী-সমুদ্র
মাটি
ঘাসফুল
রজনীগন্ধা
কৃষ্ণচূড়া;
সবকিছুর মাঝে যাকে খুঁজে পেলাম,
গোধূলী বিকেল শেষে তাকে একটাবারের জন্য ছুঁয়েও দেখতে পেলাম না।
আচ্ছা যাক না,
সে যদি আমার না হয়ে ভালো থাকে - তবে থাক?
নিজের আকাঙ্ক্ষিত নারীকে না পাওয়ার মাঝেও, এক অনবদ্য তৃপ্তি রয়ে গেছে।
সে তৃপ্তি অনন্তকাল অসীমের নদরায়,
যেখানে ভেসে ওঠো তুমি, বিষাদগ্রস্ত অধরায়।
তুমি যে সন্ধ্যায় ফেলে গিয়েছিলে আমাকে,
তার আলো এ নক্ষত্র ছাড়িয়ে গেছে সে কবেই!
কিন্তু সে সন্ধ্যা আজও গড়ায়নি পশ্চিমের কোলে,
ঝুলে রয়ে গেছে অসহ যন্ত্রণার সাথে।
সে নগন্য সন্ধ্যায় শ্মশানের বাহিরেই পুড়ে ছাই হয়ে উড়ে গেছে
এক ব্যর্থ যুবকের বারো'শ শতাব্দি ধরে জমিয়ে রাখা অতিদীর্ঘ অনুরক্তি,
তার পোড়া গন্ধটুকুও কি তুমি পাওনি?
বিমর্ষ আগুনের তাপে পুড়ে গেছি, ঝলসে গেছি
তাও বেঁচে আছি নিদারুণ প্রেমিকার বিচ্ছিন্ন করুণায় ছুড়ে দে'য়া চাদর মুড়ে।
কি অদ্ভুত, মানুষ এভাবেও বেঁচে থাকতে পারে?
আমার পৃথিবীকে যদি চারটি খন্ডে বিভক্ত করে
তোমাকে ওই আকাশ দেখাতে পারতাম
তবে দেখতে,
চাঁদের উজ্জ্বলতা বেড়েছে অনেক
সাদা মেঘ নীরব-বিচ্ছিন্নতায় ভাসছে কালো আকাশে
ভোর হতে না হতে ব্যালকনিতে নাম না জানা কত পাখিরা ভিড় জমায়
হালকা আবছা রোদ ছিটকে এসে পড়তো তোমার মুখে
আলোকিত হয়ে যেত আকাশ পেরিয়ে যাওয়া।
পরক্ষণেই পেতে বাতাসে বয়ে যাওয়া অনন্য সুগন্ধি
পদতলের ঘাসেরাও তাতে মনরোম,
উঁচু মগডালে বসে থাকা পাখিরাও গান গাইছে শ্রাবণের বর্ষায়।
দেখতে,
সেখানে এক বিশাল উদ্যান তোমার জন্য,
তার দুইপাশে সূর্যমুখী ফুলের বাহার,
আর তার মাঝে, শুধু তুমি।
যদি চারটি খন্ডে ভাগ করতে পারতাম,
যদি পারতাম।
এভাবেই,
তোমার অবহেলায় আমার রক্তাক্ত গোলাপ
কোন বসন্তের রাতে ফানুস হয়ে উড়ে যায়
হারিয়ে যায় বিভ্রমের প্লট পেরিয়ে
বিস্তীর্ণ আঁধারে।
আহা প্রেয়সী,
তোমার ওই আয়সের হৃদয় - এ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিষ্ময়।