http://www.bangla-kobita.com/maharaj/poem20130404014509/
★★★ফেরিওয়ালা★★★
------------------------
মহারাজ
অানন্দের ১১ নং গাড়ির চাকা ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়,
জৈষ্ঠ্যের চরম উত্তপ্ত নরম পিচ ঢালা রাস্তায়...
অানন্দের ১১ নং গাড়ির চাকা ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়!
ছুঁয়ে যায় কত অলিগলি;রাজপথ-
ছুঁয়ে যায় কত মন্দির,মসজিদ,গির্জা,গুরুদ্বারা-
ছুঁয়ে যায় কত অট্রালিকা,ছোট বড় পাকা বাড়ি!
অানন্দের গলা থেকে শুধু একটাই কাতর
অাবেদন-
ধুপ নেবে গোওওও...ধুউউউপ....!
সুন্দর গন্ধের ধুপ অাছে,জুই,চামেলী,গোলাপ,
বেলী.....
নাগরিক জীবন সুগন্ধে ভরাতে;
অাজ গোটা ফুলের বাগিচা;তাঁর অন্ধকার কাঁধের
ঝোলায়!
তবু মাপা কণ্ঠস্বর অার চাপা পদক্ষেপে জীবন তার
সংশয়েরই দোলায়।
সকাল গড়িয়ে দুপুর;দুপুর গড়িয়ে বিকাল....
অালতো চরণে সন্ধ্যা নামে ক্লান্ত ছেলের পায়...
সওদাগরী দিনের অালো দিগন্তে হারায়....
অারও একটা দিন বয়ে যায়...
সওদাগরী দিনের অালো ফের দিগন্তেই হারায়....
কাল কি অাছে ভাগ্যলেখা;অাজ জানেনা কেউ-
তবু অতল সমুদ্রে গুনতে চাই নাম না জানা ঢেউ
কাল কি অাছে ভাগ্যলেখা;অাজ জানেনা কেউ!
তবু জৈষ্ঠ্যের চরম উত্তপ্ত নরম পিচ ঢালা
রাস্তায়....
অানন্দের ১১ নং গাড়ির চাকা ছুঁয়ে ছুঁয়েই যায়!
ছুঁয়ে যায় কত অলিগলি;রাজপথ--
ছুঁয়ে যায় কত মন্দির,মসজিদ,গির্জা,গুরুদ্বারা-
ছুঁয়ে যায় কত অট্রালিকা,ছোট বড় পাকা বাড়ি!
অানন্দের গলা থেকে শুধু একটাই কাতর
অাবেদন-
ধুপ নেবে গো;ধুউউউপ....
সুন্দর গন্ধের ধুপ অাছে,জুই,চামেলী,গোলাপ,
বেলী.....
বিঃদ্রঃএটি একটি রূপকধর্মী কবিতা,তাই অামার
বিনীত নিবেদন এটি তোমরা একটু মন দিয়ে পড়ো?
তাড়া হুড়ো করে পড়লে লোকসান
তোমাদেরই গো....!
ধন্যবাদান্তে।
মহারাজ
--------------------------------------------------------
##প্রাথমিক কথাঃ
---------------
"কাল কি অাছে ভাগ্যলেখা;অাজ জানেনা কেউ-
তবু অতল সমুদ্রে গুনতে চাই নাম না জানা ঢেউ"----
অসামান্য কিছু কথা উঠে এসেছে এই কবিতায়....
অামরা কেউই জানিনা অাগামীকাল কি ঘটতে চলেছে।কিন্তু সকলেই অাশার তরী ভাসিয়ে দেই জীবন স্রোতে।কবি যখন বলে উঠেন--"তবু অতল সমুদ্রে গুনতে চাই নাম না জানা ঢেউ";ঠিক তখনই পাঠক মানসপটে কবির লেখনীর শক্তি সম্পর্কে একটা অদৃশ্য চিত্রপট অনায়াসে অাঁকা হয়ে যায়।
## রূপকধর্মী কবিতাঃ
------------------------------------
রূপক কবিতা সাধারণত ইঙ্গিতধর্মী হয়ে থাকে।ইঙ্গিতের অাড়ালে অনেক কথা বলা হয়ে যায়।একজন কবিতা শিল্পীর ঘন-নিবিড়-তন্ময়তা,অপার রহস্যের গভীরতার মাঝে একটি বিন্দুর খুঁজে ছুটে চলাই অামার ব্যক্তিগত দৃষ্টিতে রূপক কবিতার নাম অথবা সংজ্ঞা।
সুস্থির কিছু চেতনার মূলে জীবন- শিকড়ের প্রতিচ্ছায়া-ই অামার দৃষ্টিতে রূপকতা।
রূপক কবিতায় অামরা খুঁজে পাই কিছু বিষয়বস্তু।যা সাংকেতিকতার মাধ্যমে কবির নিগূঢ় মনের অনুভূতিগুলো বেরিয়ে অাসে।হতে পারে তা
মনস্তাত্বিক,অতিপ্রাকৃত,দর্শন,সমাজ,ডিটেকটিভ ইত্যাদি।
উপরিউক্ত কবিতায় একটি সংখ্যা উঠে এসেছে ১১।এত সংখ্যা থাকতে কবি ১১ কেই কেন বেছে নিলেন?এই প্রশ্ন থেকে যাবে পাঠকের অন্তরে।অাদৌ কি অানন্দের সংখ্যা অাছে?হয়তোবা অাছে অথবা হয়তোবা নেই।এটা কবিই ভালো বলতে পারবেন।পৃথিবীতে বহু কবির কবিতা অাছে যা অাজো পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
তবে সংখ্যাতত্ত্ব কিংবা জ্যোতিষশাস্ত্রের মতে,১১ একটি অশুভ সংখ্যা।অারো অাছে যেমন-৯,১৩।শুভ সংখ্যাও অাছে যেমন ৩,৮।
যাই হোক,এই কবিতা রূপকের অাড়ালে সূক্ষ্ম জীবন-বোধের হাতছানি দিয়ে ডাকে বারেবার...কাকে?এ যেন নিজেকেই!
অামরা সবাই ছুটে চলছি নিয়মের বেড়াজালে পা রেখে।সংসার, জীবন, প্রেম অর্থাৎ সবকিছুর জন্যেই অামাদের দেহ নামক গাড়ি দৌঁড়াচ্ছে অবিরাম....অবিরাম.....
অামরা প্রত্যেকেই ফেরিওয়ালা।কবির ভাষায়-
"নাগরিক জীবন সুগন্ধে ভরাতে;
অাজ গোটা ফুলের বাগিচা;তাঁর অন্ধকার কাঁধের
ঝোলায়!"
হ্যা,একেবারেই ঠিক।অামরা সকল শ্রম,কর্ম,রক্ত-ঘাম-ক্লেদ নিয়েই সুগন্ধে ভরাতে চাই অাশেপাশের সবকিছু।কিন্তু সংশয় নামক জিনিসটি অামাদেরকে প্রতি পদক্ষেপে বলে দেয়, অাজ অাছি তো বেশ,কাল কি থাকবো স্মরণপারের ছায়ায়?তাই অাবার কবির ভাষায় বলতে হয়-
"তবু মাপা কণ্ঠস্বর অার চাপা পদক্ষেপে জীবন তার
সংশয়েরই দোলায়।"।
## নামকরণঃ
------------------------
পুরো কবিতা পর্যবেক্ষণ করলে বুঝা যায়,এখানে কেন্দ্রীয় চরিত্রে যাকে দেখতে পাই তিনি অাসলে জীবনের ফেরিওয়ালা।প্রত্যেকটা স্তবকে তাঁর ভূমিকা লক্ষ্যনীয়।তাই নামকরণটিকে যথাযথ বললে অাশা করি ভুল হবেনা।
## শব্দচয়ন ও উপমা
---------------------------
পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, এই কবিতাটি বারংবার পড়তে ইচ্ছে করে শুধুমাত্র অাবেশিত শব্দচয়ন ও উপমার জন্যে।
যেমন-"অানন্দের গলা" "সওদাগরী দিনের অালো""অানন্দের ১১ নং গাড়ির চাকা"ইত্যাদি।
সুতরাং,পাঠক হিসেবে এতটুকু বলতে পারি শব্দচয়ন অার উপমায় কবিতাটি অনন্য।
## ভাবনা ও চিত্রপটঃ
-----------------------------------
এই কবিতাটি রূপকতার অাশ্রয়ে মনে হলেও অাসলে এটি নিগূঢ় অাত্ম-দর্শন মূলক কবিতা।বিষয়বস্তু গতানুগতিক।অাবহমান কাল ধরেই এরকম ভাবনা নানা রঙে-নানা বর্ণে,যুগের সাথে সঙ্গতি রেখে বিভিন্ন কবির কবিতায় ফুটে উঠেছে।সে যাই হোক,এই কবিতার ভাবনার গভীরতা অাসলেই ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়।যেমন-কবি বলেছেন-
"কাল কি অাছে ভাগ্যলেখা;অাজ জানেনা কেউ-
তবু অতল সমুদ্রে গুনতে চাই নাম না জানা ঢেউ"----
এই দুটো লাইন পুরো কবিতাকে অসামান্য উচ্চতায় নিয়ে দাঁড় করিয়েছে।সমস্ত চিত্রপট এখানেই যেন লুকায়িত।
★★
কবির নাম "মহারাজ"।নামের সাথে কর্মেরও মিল।উনার প্রায় সব কবিতাই অামার পড়া হয়ে গেছে।কারণ মাত্র একটি কবিতা দিয়ে কোন কবি সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া প্রায় অসম্ভব।তিনি এ অাসরের বহু পুরানো কবি।লেখার হাতও দুর্দান্ত।
## সিদ্ধান্তঃ
----------------------
অামার দৃষ্টিতে কবিতাটি খুবই ভালো সবকিছু মিলিয়ে।এটা বলা যায় একজন পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গী।অার কিছু নয়।
## অামার কিছু কথাঃ
-------------------------
"সংযত" শব্দটি কবিতার ক্ষেত্রে খুবই প্রযোজ্য।ভাষা-উপমা-অলঙ্কারে সংযত না হলে যেকোন কবিতা ললিত-মধুর হওয়া থেকে তিক্ত-গরলেই পরিণত হয়,অন্তত অামার দৃষ্টিতে।
বিবৃতিসর্বস্ব মূলক কবিতা ছন্দগৌরব সম্পন্ন কবিতার কাছে চিরকাল পরাজিত ছিলো এবং থাকবে।অবশ্য এটি একান্তই অামার দৃষ্টিভঙ্গী।অামার সাথে যে কারো দ্বি-মত থাকতেই পারে।
বর্তমানে প্রিন্ট মিডিয়ার জগতের মাঝে অাছে এক সাহিত্যের খেলার মাঠ।সেই মাঠে কবিরা(ফেবু কবি,ব্লগ কবি,নামি কবি,বেনামী কবি) খেলা করেন।কিন্তু অনেকেই প্রকৃত দর্শক হতে রাজী নন!
★★ একটি কবিতা প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলা সাহিত্য জগতের ক্ষেত্রে পৃথিবীর যেকোন পাঠক অালোচনা/মতামত/সমালোচনা করার অধিকার রাখেন।
★★ বিতর্ক কাম্য নয়!