http://www.bangla-kobita.com/arshad/post20150419015541/

অপেক্ষমাণ ১
-------------------
অারশাদ ইমাম

তুমি বিস্মৃতির কালো চাদরে
সেই কবে ঢেকে দিয়েছো মনের চোরাগলি,
অার অামি কোন কোন প্রাণান্ত জোছনার
কোরক খোলা রাতে-তোমাকে
অনুসন্ধান করি।যেন তুমি নও,
নিজেকেই খুঁজি অামি,নিজের পদচিহ্ন অনুভব করি
ভুলে যাওয়া পদরেখা ধরে।

তুমি প্রবল প্রার্থিত অালিঙ্গনকে
সেই কবে চুরমার করে এগিয়ে গেছো
নিরাভরণ স্নিগ্ধতার ভিতরে,একাকী-
কী প্রবল,তীব্র,অথচ নিস্তব্ধতাকে অটুট রেখে।
অথচ,দ্যাখো,এই অামি ক্লান্ত বিধ্বস্ত পথিক,
অাজো পথে পথে ঘুরছি,তীক্ষ্ণ,অতঃপর
ক্ষীণ হয়ে অাসা,দৃষ্টিটাকে জ্বালিয়ে রাখছি
তোমার অপার্থিব অাগমনের কাল্পনিক
পদশব্দের অশ্রুত অভিঘাতে।
------------------------------------------------------------------------
★★
"দৃষ্টিটাকে জ্বালিয়ে রাখছি
তোমার অপার্থিব অাগমনের কাল্পনিক
পদশব্দের অশ্রুত অভিঘাতে।"

----কী অসামান্য,কী অসামান্য।অামি কোন উপমা খুঁজে পাচ্ছিনা  প্রশংসা করার।একজন কবির কলম হতে কতই না শক্তিশালী কথা বেরিয়ে এসেছে।পাঠক হিসেবে বিনম্র চিত্তে স্যালুট জানাই হে সম্মানিত কবি।

★★অামার মতে সাহিত্য জগতের মাঝে বুদ্ধির মুক্তি পাওয়াটাই সর্বাধিক রহস্যময় হয়ে অাছে অাধুনিক নির্ভর ভাবের প্রবাহ স্রোতে......

★★অামার দৃষ্টিতে তাবৎ ব্যক্তিচেতনা,অাত্মচেতনা,অাত্মপ্রসার,জাতীয়তাবোধ,রোমান্টিকতা,মৌলিকতা,মুক্তবুদ্ধি অার স্মৃতিকথার সেতুবন্ধনই হলো অাধুনিকতার পূর্বশর্ত।প্রকৃতি ও মহাবিশ্বের মাঝে সাহিত্যের যত উপাদান অামরা খুঁজে পাই তা যুগ যুগ ধরে মানব অন্তরে ধ্রুব হয়ে ধরা দিলেও বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় প্রত্যেক লেখক/কবি তাঁদের নিজস্ব লেখায় নিয়ে অাসেন অাঙ্গিকের রূপান্তর।এই রূপান্তরই হলো অাজকের অাধুনিকতা।

★★অামি মনে করি সাহিত্যে "গোঁড়ামি"শব্দটা যুতসইভাবে গেঁথে অাছে কিছু কিছু কবিদের অন্তরে।নতুনত্ব,অভিনবত্বের কদর তাঁদের কাছে খুবই কম।পূর্বসূরী কবিদের প্রভাব এতোই তীব্রভাবে মগজে লালন করছেন যে,তারা পরিবর্তনে বিশ্বাসী নয়।অাজকের ২০১৬ সালে পুরো অান্তর্জাতিক বিশ্বে কবিতার ভাষ্য-রীতি একেবারেই পাল্টে গেছে.....যা তাঁদের নজরে অাসলেও মানতে ও পালন করতে নারাজ!

##এতোক্ষণ অামার নিজের কথাই বলে গেলাম।এটা এক নগন্য পাঠকের(ইথারের)বিবৃতি হিসেবেই অাপনারা ধরে নিতে পারেন।

এবার অাসি সম্মানিত কবির কবিতায়-------
★★"তোমাকে অনুসন্ধান করি"---স্বভাবতই অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টির পরিচয় পাওয়া যায় কবির মাঝে।কাউকে খুঁজা হচ্ছে। কিন্তু কাকে?

★★"তুমি বিস্মৃতির কালো চাদরে"----"তুমি"টা কে?
এই "তুমি"নামক সত্তার কি কি ভূমিকা অাছে?

অাসুন দেখা যাক।কবি কী বলছেন----
★★সেই কবে ঢেকে দিয়েছো মনের চোরাগলি"-

-অর্থাৎ এখানে কবির কল্পনায় অাঁকা "তুমি"নামক সত্তাটি বিস্মৃতির কালো চাদর দ্বারা ঢেকে দিয়েছেন কবি মনের চোরাগলি।
পয়েন্ট---"কালো চাদর"---এই উপমাটি "বিস্মৃতি"শব্দটির সাথে বেশ মানানসই।"কালো"--বেদনার প্রতীক......

পরবর্তীতে যে বাক্যটি অামরা দেখতে পাই তা হলো---
★★"কোরক খোলা রাতে তোমাকে অনুসন্ধান করি"--"কোরক"---অসামান্য শব্দচয়ন।"তুমি" নামক সত্তাটি মনের চোরাগলি ঢেকে দেয়ার পরপরই কবি অনুসন্ধান শুরু করে দিলেন। কবি অাসলে কি খুঁজে পেলেন?চলুন তবে তা দেখা যাক----

"যেন তুমি নও,নিজেকেই খুঁজি অামি"---বাহ!তুমিকে খুঁজতে গিয়ে নিজেকেই খোঁজা!সত্যিই তো! অামরা প্রত্যেকেই নিজেকে খুঁজে চলেছি অাজন্মকাল........

★★"নিজের পদচিহ্ন অনুভব করি ভুলে যাওয়া পদরেখা ধরে"-----এখানেই সব অর্থ নিহিত।জীবনবোধ ও অাত্মচেতনার সামগ্রিক রূপ খুঁজে পাওয়া যায়।

★★
"তুমি প্রবল প্রার্থিত অালিঙ্গনকে
সেই কবে চুরমার করে এগিয়ে গেছো
নিরাভরণ স্নিগ্ধতার ভিতরে,একাকী-
কী প্রবল,তীব্র,অথচ নিস্তব্ধতাকে অটুট রেখে"---

"তুমি"নামক সত্তাটির সামগ্রিক বর্ণনা রূপায়িত হলো সুনিপুণ হাতের স্পর্শে।সকল নীরবতাকে স্থির রেখে সে (তুমি)যেন চুরমার করে এগিয়ে যায় গোপনে গোপনে....হৃদয়ের পাশ ঘেঁষে......

★★
"অথচ,দ্যাখো,এই অামি ক্লান্ত বিধ্বস্ত পথিক,
অাজো পথে পথে ঘুরছি,তীক্ষ্ণ,অতঃপর
ক্ষীণ হয়ে অাসা,দৃষ্টিটাকে জ্বালিয়ে রাখছি
তোমার অপার্থিব অাগমনের কাল্পনিক
পদশব্দের অশ্রুত অভিঘাতে"।

---------অসামান্য স্তবক।কাব্যের সমাপ্তি কতইনা দক্ষভাবে রূপায়িত হলো।নামকরণ"অপেক্ষমাণ ১"সার্থক।

"দৃষ্টিকে জ্বালিয়ে রাখছি"
"পদশব্দের অশ্রুত অভিঘাতে"----বিস্ময়কর উপমার প্রয়োগ।

★★অাজ অার কিছু বলার নেই অামার।কাব্যরহস্য যথাযথভাবে বিদ্যমান।"তুমি"নামক সত্তাটি কে?পাঠক ভাববে অার ভাববে...........

কিছু কথাঃ
------------------
এই কবিতায় একটা মোহনীয় সুর পাওয়া যায়...বাক্যের সরলতা,যথাযথ মনোরম শব্দচয়ন অার উপমার প্রয়োগ কবিতাটিকে অন্যতম উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

কবি অারশাদ ইমামের প্রায় সব কবিতাই এই পাঠকের পড়া হয়ে গেছে।তাই অামি দৃঢ়চিত্তে বলতে পারি এই কবি অাসরের সম্পদ।সমালোচনা করতে গেলে অনেক কিছুই চাইলে খুঁজে বের করা যায়।এই কবির মাঝে জীবনানন্দের প্রভাব মোটামুটি অাছে।প্রকৃতি,জীবনবোধ নির্ভর কবিতাই উনার বেশি।

★★এই অাসরের সামান্য একজন পাঠক হিসেবে কবি অারশাদ ইমাম কে অন্তর থেকে অভিবাদন জানালে অাশা করি কবিসমাজের কাছে অামি দোষী বলে সাব্যস্ত হবোনা।

★★একটি কবিতা প্রকাশিত হওয়ার পর সাহিত্য-জগতের ক্ষেত্রে পৃথিবীর যেকোন পাঠক অালোচনা/মতামত/সমালোচনা করার অধিকার রাখেন।

★★বিতর্ক কাম্য নয়!