http://www.bangla-kobita.com/makhembrom/post20140628110134/

শূন্য দর্শন
------------------
ম্যাক হ্যামব্রম

অামার কীর্তন ও ঘর্মাক্ত শরীর
নির্লিপ্ততায় দাহ্য হয়......
বিচূর্ণ করে পদাবলী,নামতা অার
কবিতার বিন্যস্ত অাঙ্গিক ও শব্দ শরীর।
ব্লাড ভ্যাসেলে রক্তের চাপ.....
বিস্বাদে ন্যুয়ে পড়ি।
রাসেল ও হেগেলের দর্শন বিড়ম্বনায়।
মূরের নৈতিক শাস্ত্রমত অার মার্ক্সের দ্বান্দিক সংঘাতে
মনন কোষের যোজন ব্যাপ্তি।
অামি খুঁজে পাই অামার শূন্যতা
গাজ্জালির কার্য-কারন সমাপ্তি ও অষ্টমার্গের অারাধনায়
ই ই্যকুয়াল্টু এম সি স্কয়ারের ঘর্ষণে,
অামি অাবর্তিত হতেই থাকি
বৃত্ত ও ব্যাসার্ধের নিরন্তর অাবর্তনে।
এ্যাটম দেখি মহাশূন্যে-
জাগতিক মস্তিষ্কের কোষে।
জলজ চাঁদের ছায়া নামে
থ্যেলেসীয় জল সীমানা-
অামি ও অামিত্বের অঙ্কুরোদগমে।
----------------------------------------------------------
★★ এই কবিতাটি ছোট হলেও কবিতাটি বেশ গভীর।এই কবিতা সকল স্তরের পাঠকদের জন্যে নয় কারণ এই কবিতা অাত্মস্থ করতে গেলে সাহিত্যের পাশাপাশি বিজ্ঞান সম্পর্কেও কিছুটা ধারণা থাকতে হবে।অর্থাৎ একই সাথে অনেকগুলো বিষয় মাথায় রেখে কবিতাটি বুঝতে হবে।এই কবিকে অামি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই।তিনি চোখে অাঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন এখন পরিবর্তনের যুগ।প্রাচীর্ণ জীর্ণতা ভেদ করে সাহিত্য জগতেও একই সাথে ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ের সমন্বয় ঘটিয়ে কবিতা নামক শিল্পকে সমৃদ্ধ করা যায়।

নামকরণঃ
----------------
★★"শূন্য দর্শন"---মাত্র দুটি শব্দ অথচ কি বিশাল তার চিত্রপট!

জগতটাই শূন্যের খেলা।অামি এই কবিতা অালোচনা করার পাশাপাশি কিছু তথ্য দেয়ার চেষ্টা করবো যাতে অামরা জানতে পারি-------

বৌদ্ধিক দর্শন থেকেই অাধুনিক যুগে শূন্য দর্শন কিংবা শূন্যবাদের প্রচলন ঘটেছে।

শূন্যবাদের প্রবক্তাগণ হলেন-----
১/নাগার্জুন(খৃঃ১৫০-২৫০)
২/অার্যদেব(খৃঃ১৭০-২৭০)
৩/রাহুল ভদ্র(খৃঃ২০০-৩০০)
৪/বুদ্ধপালিত(খৃঃ৪৭০-৫৪০)
৫/ভব্য(খৃঃ৪৯০-৫৭০)
৬/চন্দ্রকীর্তি(খৃঃ৭ম শতক)
৭/জ্ঞানপ্রভ(ঐ)
৮/শান্তিদেব(খৃঃ৬৫০-৭৫০)
(তথ্যসূত্রঃগৌতম বুদ্ধের ধর্ম ও দর্শন)

জড়বাদ,অাধাত্ম্যবাদ,গণিতশাস্ত্র,পদার্থ বিজ্ঞান --এইসব ক্ষেত্রে শূন্য সংখ্যাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।ভাববাদী জগতেও "শূন্য" নামক অস্তিত্বটি(?) গুরুত্বপূর্ণ।

ভাবের জগতে হৃদয় শূন্য হয়ে যায় কারণবশত।কারণের পিছে  অাবার ছুটে চলে শক্তি।সত্যি এ রহস্যময় জগৎ....বড়ই রহস্যময়!

গীতায় বিষ্ণু যখন কৃষ্ণরূপে রাজপুত্র অর্জুনের সামনে উপস্থিত হন তখন নিম্নোক্ত কথাগুলো ওঠে অাসে----

"হে ঈশ্বর, তোমার দেহে অামি দেবতাদের দেখি,
অার বহু প্রাণের অস্তিত্ব;
মহাবিশ্বের স্রষ্টা ব্রক্ষ্মা,
বসে অাছের পদ্ম সিংহাসনে,
দেবতা সকল অার স্বর্গীয় সরীসৃপ"।
(ভগবত গীতা)

অর্থাৎ একের মাঝেই বহু।তবে শূন্য গেলো কোথায়?প্রশ্নাতীত অন্তত অামার দৃষ্টিতে.........

শূন্য দর্শন নিয়ে অালোচনা করতে গেলে মূল কবিতাটির বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে খুব একটা অালোকপাত করা যাবে না।তাই অামার দৃষ্টি শুধু কবিতাতেই রাখছি------

এই কবিতার অদ্ভুত উপমাসমূহ----
★★"এটম দেখি মহাশূন্যে"----বেশ ভাবিয়ে তুলবে পাঠকদের।পদার্থ বিজ্ঞান নির্ভর ভাবনা ও সাহিত্যের সমন্বয়।ভাবনার সাথে বিজ্ঞানের সন্ধি।সুতরাং,উপমাটিকে অনবদ্য বললে ভুল হবেনা।

★★"জলজ চাঁদের ছায়া নামে"----ভারী সুন্দর।চাঁদের সাথে জল।যুক্তিসঙ্গত কেননা জলের মাঝে চাঁদকে দেখা অসম্ভব নয়।

★★"মনন কোষের যোজন ব্যপ্তি"----অসামান্য।"মনন কোষ"---চোখে পড়ার মত দু'টি শব্দ।বাহ্যিক শরীর যেমন কোষ বা টিস্যু দ্বারা গঠিত ঠিক তেমনি মনেরও কোষ অাছে।এখানেই কাব্যিক কল্পনার যথাযথ প্রয়োগ ঘটেছে বলে অামি মনে করি।

★★শক্তিশালী তিনটি বাক্য------
#(১)"অামার কীর্তন ও ঘর্মাক্ত শরীর
নির্লিপ্ততায় দাহ্য হয়...."

সত্যি অসামান্য।অামাদের জীবনের চরম সত্য একটি দিক ওঠে এসেছে।কালের পরিক্রমায় শূন্যতেই একদিন হব বিলীন।অামার সব কর্ম,অামার সব ইতিহাস একদিন নির্জনে বসে থাকবে সবার অাড়ালে......।

★★(২)"অামি খুঁজে পাই অামার শূন্যতা"-----এখানেই সব রহস্য।কবির দৃষ্টি শূন্যের দিকে নিবদ্ধ হয়ে ছড়িয়ে যায় পাঠকের অন্তর থেকে অন্তরে।শূন্যে শূন্যে অমোঘ খেলা বয়ে চলে অাবহমান কাল হতে........

★★(৩)"অামি ও অামিত্বের অঙ্কুরোদগমে"----বেশ জটিল ও ভাবিয়ে তোলার মত দার্শনিক অাবহময় উক্তি।মুগ্ধতা.........

★★এই কবিতায় কি কি বিষয়ের সমন্বয় ঘটেছে শব্দবন্ধনের দ্বারা?
অাসুন দেখা যাক---

(১)শূন্যবাদ-----বৌদ্ধ দর্শন
(২)ব্লাড ভ্যাসেল,রক্তের চাপ,মনন কোষ---প্রাণি বিজ্ঞান
(৩)অঙ্কুরোদগম-----উদ্ভিদ বিজ্ঞান
(৪)বৃত্ত ও ব্যাসার্ধ,অাবর্তন,এটম,মহাশূন্য
শক্তির সূত্র E=mc2,------গণিত ও পদার্থ।
সুতরাং,এই কবিতাটি সত্যি অদ্ভুত।অাধুনিক ভাষ্য-রীতি বজায় রেখে শৈল্পীক প্রয়াসের তাড়নায় উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখে দিবে অাশা রাখি......

★★"অষ্টমার্গের অারাধনায়"?অষ্টমার্গ অাসলে কি?
১ দৃষ্টি-----সত্য দর্শন বা জ্ঞান।
২/সংকল্প----উত্তম।
৩/বাক্য---সত্য এবং যথাভূত বাক্য
৪/কর্ম-----সৎ বা পবিত্র এবং বিশুদ্ধ কর্ম
৫/জীবিকা----হালাল(বিশুদ্ধ) উপায়ে।
৬/প্রচেষ্টা----মানসিক অথবা শারীরীক
৭/স্মৃতি----সজাগ দৃষ্টি দ্বারা.....
৮/সমাধি---শেষ গন্তব্য....

★★"রাসেল ও হেগেলের দর্শন"---বেশ অালোচনার বিষয়।
পুরো বিশ্বে দর্শন দ্বারা বিশ্বাসী মানুষদের কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়।যেমন-
অাস্তিক
নাস্তিক
অতীন্দ্রীয়বাদী
সংশয়বাদী
জড়বাদী।
রাসেল ও হেগেলের দর্শন অনেকটা সংশয়বাদী।

হৃদয়ে শূন্যতা  ও ভাব কেমন হতে পারে তা কবি বায়রনের কিছু উক্তি দেখলেই বোঝা যায়----

"সে অানন্দমূর্ছনা এই বিশ্ব নাহি পারে দিতে যাহা সে লয়ে গেছে ফিরে,
চিন্তার অালোকশিখা ডুবিছে যখন অাবেগের অতল গভীরে"

অথবা

"অামি জীবনের অনল স্রোতে দুটি হাতে উত্তাপ গ্রহণ করেছি
তাতে ধরেছে পঁচন অামি তাই বিদায় নিতে তৈরি"

★★এই কবিতাটির সম্পূর্ণ অালোচনা করা অল্প সময়ে সম্ভব নয়।দর্শন সবসময়ই রহস্যময়।তাই সংক্ষিপ্ত করাটাই কাম্য।

★★সমালোচনা
-----------------------------
কবিতাটি দার্শনিক ভারাক্রান্ত(?) হয়ে পড়েছে অত্যাধিক।ছন্দ তেমন নেই।প্রথাগত ছন্দ নয়(!);ছন্দের ঢেউ অাপনা-অাপনি যতটা খেলা করবে সাগর-পাড়ে, ঠিক ততখানি পাওয়া যায়নি।পড়তে গিয়ে জড়তা কাজ করে।কাব্যিক ভঙ্গিমা কম।কবিতা যদি শান্ত দিঘীর ঘাটের ছায়া না হয়,তবে পাঠকের বিশ্রাম নিতে কষ্ট হয়। কিছু কিছু জায়গায় কবি অস্পষ্ট রেখে দিয়েছেন,এটা হয়ত প্রয়োজন,তবে অতিমাত্রায় নয়।
বানানঃ
কার্য-কারন<কার্য-কারণ
এ্যাটম<এটম
থ্যেলেসীয়<থেলেসীয়(এভাবেই উত্তম)


★★সিদ্ধান্তঃ
---------------------
শুধু এই কবিতায় নয়,এই কবি নতুন মাত্রায়,নতুন অাবহে,নতুন ভাবনায় কবিতা রচনা করতে বেশ দক্ষ যা উনার অারো কয়েকটি কবিতা পড়লে সহজেই দৃষ্টিগোচর হয়।উপরিউক্ত কবিতায় দার্শনিক অাবহের অাড়ালে সূক্ষ্ম ভাবনা দ্বারা বেশ কয়েকটি বিষয়ের সমন্বয় ঘটিয়ে যে শৈল্পীক চিত্রকল্প তুলে ধরেছেন নিপুণ হাতের স্পর্শে তা সত্যি প্রশংসনীয়।এসব বিবেচনায় এই কবিতাটিকে সুন্দর ও মুগ্ধকর একটি কবিতা বললে অাশা করি দোষের কিছুই হবেনা।

★★যেকোন কবিতা প্রকাশ হওয়ার পর পৃথিবীর যেকোন পাঠক অালোচনা/মতামত/সমালোচনা করার অধিকার রাখেন বাংলা সাহিত্য জগতে।

★★বিতর্ক কাম্য নয়!