http://www.bangla-kobita.com/rabinroy/poem20130424102646/
শেষ কবিতা
---------------------
নাইবা গেলো জানা
লোপামুদ্রা,তোমাকে ভালোবেসেছি।
কোনও নিয়ম শিখে জন্ম নেইনি বলে
অনিয়মের এই ইট পাথর সংসারের ছোবল
নিতে নিতে অামার হাফ ধরা এযাবৎ মৃত অতীত
অার কাকতালীয় অালাউদ্দিনের প্রদীপে বিশ্বাস করে না।
মনের অতল সিন্দুকে,তোমার প্রতি সেই অদম্য অধিকার
যেন এই ডিজিটাল অনুভূতির,তুমি অামার পোষ মানা ইলেকট্রন
অামার এইমাত্র লিপ্ত শরীর,ইচ্ছে অনিচ্ছার ধার না ধরেই
নিরন্তর দাবি নিয়ে অাছে,দাড়িয়ে অাছে তোমার শরীরে।
ঘোলাটে চুমু শুধু চুমুতে থামেনা কখনো বলে,অামার
এই অতিন্দ্রীয় চোখ যেন স্যাটেলাইট পাহারায়,তোমাকে
অারও অনেক বেশি পণ্য করে,পানীয় করে।
তোমার পথ-বদল,সঙ্গী বদল বা অপরিবর্তন
তারাদের সাথে ঘুরে ঘুরে,এক নক্ষত্র থেকে অারো
ভিন্ন কোন গ্রহে এই ক্ষণ মুহূর্ত জীবনের
স্বাধীনতা এবং স্বেচ্ছাচারিতা সমার্থক হলেও
কেনোই বা এতো সংজ্ঞায়িত ভাঙ্গা গড়া,
শিখে শিখে ক্লান্ত,অাদিম এবং অনায়াতন হৃদয়-ভারে?
কেবলই মনে হয়,এই সেই সবুজে বা পাথুরে পথে
তুমি হেটে হেটে চলে গেলেই বলেই কি এত রাত ঝরল
জল চোখে,নাকি এ ব্যথাও শিখেছি এই সময়ে-যেভাবে
শিখেছি এত কাল এত যুগ ধরে এত সভ্যতা।
তুমি মেয়ে বলেই অামি ছেলে অার বিপরীতও তাই
এর মধ্যে এই রোজকার উজাগড়ি বাজার পত্তর এবং সভ্যতা
এ অামি চাইনি।চাইনি তোমার বানানো অর্ধপূর্ণ অাইন অার অসমাপ্ত পুঁথি।
একবারও অামি বিজ্ঞ হতে চাইনি,এই অনিশ্চিৎ,এক অদ্ভুত অনিশ্চিৎ
অার পৃথিবীর কালো রাস্তা অার কালো অাকাশ পেরিয়ে খ্যাতিময় জগৎে।
চেয়েছি,তুমি ভালোবাসলেই-অামার ভালোবাসায় এই পৃথিবী,
শুধু এই পৃথিবীর সমস্ত সংজ্ঞা থেকে চীর মুক্তি।
---------------------------------------------------
★★কবিতার নামকরণটির মাঝেই যেন একটি অাবেগ জড়িয়ে অাছে।সাধারণত একজন পাঠক যখন কবিতা পড়তে অাসেন তখন প্রথমেই তাঁর নজরে পড়বে শিরোনাম।শিরোনাম যত শ্রুতি-মধুর হবে পাঠক সম্পূর্ণ কবিতাটি পড়ার জন্য তত অাগ্রহবোধ অনুভব করবে তাঁর নিজস্ব অন্তর্লীন জগৎে।
এই কবিতায় সর্বমোট চারটি স্তবক অাছে।প্রথম স্তবকে শূন্যতা, প্রেম,নিত্য-সংসারের বেড়াজালের তীব্রতায় কবি মনের এক অমোঘ ব্যাকুলতা প্রকাশ পেয়েছে।প্রথমেই হৃদয়-ছোঁয়া বাক্য দিয়ে শুরু---"লোপামুদ্রা,তোমাকে ভালোবেসেছি"।এর পরের বাক্যটি বেশ সাদৃশ্যপূর্ণ কারণ ভালোবাসা কোন নিয়ম মানেনা।তাই কবি বলে উঠলেন----
"কোনও নিয়ম শিখে জন্ম নেইনি বলে"।বেশ যুক্তি ও সঙ্গতিপূর্ণ কথা পূর্বের বাক্য অনুসারে।
এবার প্রেমের এক সহজাত চিত্র।সংসারের পিছুটান -বন্ধন ইত্যাদি।কবির ভাষায়---"ইট পাথর সংসারের ছোবল"।এখানে একটি বিশেষ শব্দ কবি ব্যবহার করেছেন--"মৃত অতীত"।এই দুটো শব্দের মাধ্যমে পুরো কবিতা সম্পর্কে একটি অান্দাজ করা যেতে পারে।
★★ একজন পাঠক যখন এই কবিতাটি পড়বে তখন সে নিমেষেই গভীরে হারিয়ে যাবে।পুরো কবিতাটি পড়লে এমন কিছু উপমা পাওয়া যায় যা সত্যি বেশ অাকর্ষণীয়।চলুন উপমা গুলো একটু দেখা যাক-----
(১)"তুমি অামার পোষ মানা ইলেকট্রন"---বেশ উদ্ভুত উপমা।
(২)"চোখ যেন স্যাটেলাইট পাহারায়"---সত্যি অদ্ভুত ও চমকপ্রদ উপমা।
(৩)"অনায়াতন হৃদয়ভারে"---অাসলে কি হৃদয়ের কোন অায়তন অাছে?অনবদ্য উপমা।
*****কবিতাটির শক্তিশালী বাক্য দুটি----
(১)"শুধু এই পৃথিবীর সমস্ত সংজ্ঞা থেকে চির মুক্তি।"---দার্শনিকতার অাবহে চমৎকার উপমা।
(২)"অামার এই মাত্র লিপ্ত শরীর,ইচ্ছে অনিচ্ছার ধার না ধরেই"-----হুমমম দারুণ ও অসাধারণ উপমা।
নামকরণের সার্থকতাঃ
-----------------------------------
শেষ বাক্যের দিকে নজর দিলেই বুঝা যায় কবিতার নামকরণ সার্থক।
মন্তব্যঃ
-----------
প্রেম,সামাজিক চিন্তা-চেতনার প্রভাব,হতাশা,হৃদয়ের ভাবাবেগ,দর্শন ও প্রেমানুভূতি মিলিয়ে কবিতাটিকে একটি সুন্দর ও অনবদ্য কবিতা বললে কোন ভুল হবেনা বলেই অাশা করি।
অামার সমালোচনাঃ
--------------------------------
কবি মূল বক্তব্যের প্রতি তেমন মনোযোগী নন।তিনি অল্প কথাকে বেশি বেশি ঘুরিয়ে বলতে চেষ্টা করেছেন।কবিতার মধ্যে এক ধরণের মুদ্রাদোষ পরিলক্ষিত।যা সহজেই বলা যায়, তাকে জটিলতর করে তোলা হয়েছে।পাঠক পড়তে পড়তে অনেক সময় খেই হারিয়ে ফেলতে পারে।বানানের ব্যাপারে কবি তেমন সতর্ক নন, চিহ্নের প্রয়োগেও তিনি তেমন মনোযোগী নন।
ইট পাথর<ইট-পাথর(হাইফেন চিহ্ন হবে রীতি-অনুসারে)
দাড়িয়ে<দাঁড়িয়ে
হেটে হেটে<হেঁটে হেঁটে
ঝরল<ঝরলো
চীর মুক্তি<চিরমুক্তি
সিদ্ধান্তঃ
---------------
কবির নাম "নাইবা গেলো জানা"।অাধুনিক কবিতায় যে তিনি পারদর্শী তা তাঁর বেশ কয়েকটি লেখা পড়লেই পাঠকেরা বুঝে যাবেন।এই কবিতাটিও ভারী সুন্দর।
*** এটি অাসরে কারো কবিতা নিয়ে অামার প্রথম অালোচনা।অালোচনাটি একান্তই অামার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি।অামার সাথে কারো বিরোধ থাকতেই পারে।
★★বিতর্ক কাম্য নয়!