এ কবিতাটি যখন অালোচনা করতে যাব তখন অামার একটি কথাই মনে হচ্ছে--অামি যত দ্রুত এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যাব ততই অামার জন্যে মঙ্গল,বেঁচে থাকলে অামাকে এই পৃথিবীর নির্মম দিকগুলোই দেখে যেতে হবে।উহ্ উহ্...

কবিতা নিয়ে কী অার অালোচনা করবো,অামার মস্তিষ্ক অচল হয়ে পড়েছে যেন।এ কবিতাটি খুব সোজা সাপ্টায় বর্ণিত হয়েছে।কবি জয়দেব বিশ্বাসের সব কটি কবিতাই অামার খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়া শেষ হয়ে গেছে,কেনো জানেন?কবি জয়দেব বিশ্বাসের বয়স অামার চেয়েও দুই বছরের ছোট অথচ তার লেখা এতই পরিণত যে, অামি খুব অবাক হয়ে যাই।তাঁর অন্যান্য কবিতার  চেয়ে এ কবিতাটিতে নেই কোন ভাবের উপমা,নেই কোন ছন্দবোধ,নেই কোন অলঙ্কার,তবে কেনো অামি তার সেরা সেরা কবিতা রেখে এটিই বেছে নিলাম,এর একটা উদ্দেশ্য অবশ্যই অাছে।সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাবলীও তার একটি কারণ।

মূলত এসব সেনসেটিভ বিষয়ে উপমার প্রয়োজন পড়েনা,অলংকারের প্রয়োজন পড়েনা বরং সোজাসাপ্টা প্রতিবাদ করে পাঠকের কাছে পৌঁছে দেয়াই কর্তব্য।এখানে রূপকতার অাশ্রয় বাঙ্ময়...

এ কবিতার মূল বিষয়বস্তু ধর্ষণ।ধর্ষণের কারণ ও এর প্রতিকার লিখে শেষ করা যাবে না,তবু কবিতার সাথে প্রাসঙ্গিকতা বজায় রেখে কিছু কথা বলার চেষ্টা করবো।


কবিতার শুরুতেই কবি বলছেন---
"কি সুন্দর বাচ্চাটা
একটু হাত বুলিয়ে নেই"----এখানে শুরুটা খুবই চমকপ্রদ।প্রথমে মনে হবে হয়তো কোন বাচ্চার প্রতি পবিত্র অাকর্ষণে ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে কিন্তু অাসলে তা নয়!

পরবর্তীতে অাসলো---

"অাঃ কি তৃপ্তি!"---এই যে অাশ্চর্যবোধক চিহ্ন তা বহু ভাবনায় ফেলে দেয়।

এর পরেই কবি বলছেন----

"ও এসবের কি বোঝে?"---প্রশ্নবোধক চিহ্নে এতো মর্মান্তিক দহন লুকানো যা অকল্পনীয়।

"অামি তো বুঝি অাঠাশ দিনের শিশুর
দু'পায়ের ফাঁকে মজা অাছে"---উফপপ,কী পাশবিকতা!!!মানষের মানসিকতা কতখানি নীচে নামতে পারে তা ভাবতেই লজ্জা হয়।বুঝতে পারছেন কিছু  এ দুলাইনে কত নির্মমতা অাছে?

বাকি চরণগুলিতে ফুটে উঠেছে কবির অন্তর্দহনের প্রতিচ্ছবি।কবিও সরল, শুদ্ধ মানুষের মতো অাজ ব্যথিত,লজ্জিত।তিনি ঐ সব কীটদের "অন্ধ কাপুরুষ হিসেবে অাখ্যা দিয়েছেন।
যেমন--"তবু অন্ধ কাপুরুষ তার যোনি খুঁজে পায়"

অাজকাল ধর্ষণের অপরাধ এতোই বেড়েছে যা নিয়ে বলতে গেলে পাতার পর পাতা শেষ হয়ে যাবে।একে অামাদের নির্মূল করতেই হবে।অামাদের উঠে দাঁড়াতে হবে,স্ব-স্ব স্থানে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠতে হবে।বিকৃত যৌনমানসিকতার সামাজিক কারণ নিয়ে এখানে কিছু বলতে চাচ্ছিনা তবুও কবিতার কিছুটা বাইরে গিয়ে খুব সংক্ষেপে বলতে চাই এটিও একধরণের মারাত্মক মানসিক ব্যাধি।

অামি Genetic Engineering  এর উপর পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করার সুবাদে এ বিষয়ে কিছু তথ্যের অবতারণা ঘটাতে ইচ্ছে করছে।সেক্স বিষয়ে অামাদের প্রচুর পড়াশোনা করতে হয়েছে একসময়,অামার সাবজেক্টিও হুবহ মেডিক্যাল পড়ার মতোই,শুধু হিউমেন এনাটমি ছাড়া।

এই যে ধর্ষণ প্রতিনিয়ত হচ্ছে এর কারণ শুধু পরিবেশ নয়,জিনগত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যও বিদ্যমান।পিতা-মাতার চরিত্র সন্তানের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।অাপনি যেকোন ধর্ষকের কেস স্টাডি যদি ফলো করেন তবে দেখবেন তার পিতা -মাতা নতুবা তার কোন পূর্বপুরুষের মাঝেও এ ধরণের প্রবণতা ছিলো।

অামি কবিতার বিষয়বস্তুর প্রেক্ষিতে কিছু তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করছি পয়েন্ট অাকারে খুব সংক্ষেপে এবং বিশ্লেষণ ছাড়া।

(1)শিশুদের প্রতি কোন পুরুষের যৌন অাকর্ষণ একধরণের মানসিকবিকারগ্রস্ততা,যাকে বলা হয় পেডোফিলিয়া।

(2)মৃত লাশের প্রতি যৌন অাকর্ষণ অনুভব করাকে বলা হয় নেক্রোফিলিয়া।এটা চরম পর্যায়ের মানসিক রোগ।

(3)পশুর প্রতি যৌন অনুভব করাকে বলে বিস্টিয়ালিটি।অনেকে গরু,ছাগল অার ঘোড়ার প্রতি যৌন অনুভব করে থাকেন।এটিও বিকারগ্রস্ততা।

(4)কেউ প্রশ্রাব করছে,তার পেনিস দেখে কেউ যদি যৌন অনুভব পায়,তবে তাকে বলে ইউরোল্যাগনিয়া

(5)মা,তার বাচ্চাকে দুধ খাওয়াচ্ছে,এটি দেখে যৌন অনুভব অাসলে তাকে বলে গ্যালাকটোফিলিয়া।

(6)সর্বশেষে,যে সমস্ত পুরুষ তাদের যৌনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা তাদের বলে "স্যাটিরিয়াসিস"-এ অাক্রান্ত।

অাসলে এসব মানসিক ব্যাধি তখনই সারানো সম্ভব যখন পারিবারিক শিক্ষা অালো নিয়ে অাসে,নৈতিকতাবোধের শিক্ষা দেয়,মানুষ হবার শিক্ষা দেয়।

যা হোক,কবি জয়দেব বিশ্বাসের এ কবিতাটি অাঙ্গিকের বিচারে মোটামুটি ধারার।তবে হৃদয় কাঁপানোর জন্য যথেষ্ট।

কবিতার অালোচনা অামার প্রধান উদ্দেশ্য নয়,অামার প্রধান উদ্দেশ্য ভালোলাগাবোধ হতে নিজস্ব মতামত প্রদান করা,একজন কবির লেখনীসত্তাকে পরিচয় করিয়ে দেয়া।কবি জয়দেব
খুবই সম্ভাবনাময়।এ অাসর কবিতার উত্তম মাধ্যম।

কবিতা চর্চা হোক সুন্দর ও অালোর পথে।সবাই ভালো থাকুন।