https://www.bangla-kobita.com/bcdaskil/post20151111054215/
জরায়ুজ
----------------
বিকাশ দাস
থাক বয়স দূরে অনেক দূরে গিয়ে
থাক বয়স পাহাড় পাথর চাপা দিয়ে
থাক বয়স বন অরণ্যের কালান্তরে
থাক বয়স সাগর জলধির ওপারে।
বয়সকে
দিও না ঘেঁষতে কোন কৌশলে কুশল চিঠি সই পাতার হিল্লোলে
পরিচর্যার অযুহাতে শরীরের ভেতরের ঘরে।
বয়স ধরলে
শরীরের কল্লোলে ক্রমশঃভাঙন ধরে শরীরের বিনুনির গিঁট অালগা করে
শিরদাঁড়ায় কালচে পড়ে।
পাপপুন্য জল শূন্য জীর্ণ মাটি সামান্য ফসলের গন্ধে
অাকাশ মেঘময়।
নিঃসঙ্গ বাতাসের সন্ততি থাক নিত্য পোষাকের ছন্দে
শরীর অস্তিময়।
শরীরের ভেতর অারেক শরীর বয়সের মূর্ধায় থির।
যদিও শরীর.....
অালো অন্ধকারের গমক গমক অাঁচের গভীরে
ষোল অানা লোভ অারো বেঁচে থাকার বৃষ্টি সরস সরোবরে
অন্তর্বাস তত্ত্বের বর্ণের ঝনৎকারে।
দু হাত কোলাহল হাতড়ে অারো বেপরোয়া অারো যত্নশীল
সব বয়সের দিন দিগন্ত অাঁকড়ে।
শরীর....ভিখিরির জাত ক্ষুধিত স্বভাব
জরায়ুজ
শরীর....পুরুষ নারীর স্নাত সংশোধিত পল্লব
জরায়ুজ
শরীর...সংকল্পিত বাস্তব ভাস্কর্য
জরায়ুজ
বিকাশ দাস
মুম্বাই
--------------------------------------------------------------
★★
এই অাসরে এমন কিছু কিছু কবিতা সৃষ্টি হয়েছে যা বহু বিখ্যাত কবিদের চেয়ে কোন অংশে কম নয়।অামি তা দৃঢ়চিত্তে বলতে পারি।তবে এটা ঠিক সেধরনের কবিতার সংখ্যা খুবই কম।
★★
"শরীর....ভিখিরির জাত ক্ষুধিত স্বভাব
জরায়ুজ
শরীর....পুরুষ নারীর স্নাত সংশোধিত পল্লব
জরায়ুজ
শরীর...সংকল্পিত বাস্তব ভাস্কর্য
জরায়ুজ"----
অামি এক নগন্য পাঠক।এই কবিতাটি যে কবির হাত ধরে বেরিয়ে এলো তাঁর সামনে মাথা নত করে বিনম্র শ্রদ্ধা জানালাম।কি অসামান্য,কি অসামান্য।খ্যাতির ভাগ্য সকলের জোটেনা কিন্তু প্রকৃতি অাসল প্রতিভাকে টিকিয়ে রাখে যুগের পর যুগ।অামি চাই এই কবিতাটি বেঁচে থাকুক বাংলা সাহিত্যে অনন্তকাল......অামার মত বেরসিক, ঠোঁটকাটা মানুষও অস্বীকার করতে পারবেনা,এ কবিতা নিঃসন্দেহে এক সেরা সৃষ্টি।অামি জানি, কবির প্রতি দৃষ্টিপাত কখনোই কাম্য নয়,কবিতার প্রতি পাঠকের দৃষ্টি দেয়াটাই মূলকথা।
★★
কেন এই কবিতা এতোটা মানসম্মত?
ছয়টি স্তবকের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় প্রতিটি লাইন,প্রতিটি কথা স্ব-মহিমায় উজ্জ্বল।
"যদিও শরীর.....
অালো অন্ধকারের গমক গমক অাঁচের গভীরে
ষোল অানা লোভ অারো বেঁচে থাকার বৃষ্টি সরস সরোবরে
অন্তর্বাস তত্ত্বের বর্ণের ঝনৎকারে।"----চমৎকার উপমা,ভাব,ভাষা,শব্দচয়ন।
"গমক গমক অাঁচের গভীরে"-------ব্যতিক্রমী শব্দচয়ন
"ষোল অানা লোভ অারো বেঁচে থাকার বৃষ্টি সরস
সরোবরে"------চিরসত্য,নিগূঢ় ভাব।এ অাত্মদর্শন প্রতি ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
★★সবচেয়ে শক্তিশালী কথা----"শরীর....ভিখিরির জাত ক্ষুধিত স্বভাব"----মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই যৌক্তিকভাবে।
★★ পুরো কবিতাটির মাঝে যে বাক্যটি পাঠকদের ভাবিয়ে তুলবে--------
"শরীরের ভেতর অারেক শরীর বয়সের মূর্ধায় থির।"
১ম স্তবকঃ
-------------------
"থাক বয়স দূরে অনেক দূরে গিয়ে
থাক বয়স পাহাড় পাথর চাপা দিয়ে
থাক বয়স বন অরণ্যের কালান্তরে
থাক বয়স সাগর জলধির ওপারে।"-----
"থাক"শব্দটির পুনরাবৃত্তি ঘটলেও এক ধরনের ঢেউ খেলে যায় অন্তরে অন্তরে।অাত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। মানুষ স্বপ্ন দেখতে পায় অজান্তেই.....অার শূন্যতার মায়াপাশ কাটিয়ে প্রকৃতির পাশে দাঁড়িয়ে জীবনের চিরায়ত দর্শন অবলোকন করা যায় বয়স নামক ব্যাধিকে পরাস্ত করে......
২য় স্তবকঃ
-----------------
"বয়সকে
দিও না ঘেঁষতে কোন কৌশলে কুশল চিঠি সই পাতার হিল্লোলে
পরিচর্যার অযুহাতে শরীরের ভেতরের ঘরে।"----
অনবদ্য স্তবক।
প্রথম স্তবকের সাথে দারুণ সঙ্গতি বজায় রাখা হয়েছে।কবি বলছেন----
"বয়সকে দিও না ঘেঁষতে"---"দারুণ অাহ্বান।সবার জন্য প্রযোজ্য।
কৌশলে কুশল চিঠি"----সুন্দর উপমা।
"সই পাতার হিল্লোলে"----মনোমুগ্ধকর।
"পরিচর্যার অযুহাতে"------ইঙ্গিতবাহী।
"শরীরের ভেতরের ঘরে"----কে থাকে?অাত্মা?বিবেক?পাঠক ভাববে অার ভাববে......
৩য় স্তবকঃ
-----------------
"বয়স ধরলে
শরীরের কল্লোলে ক্রমশঃভাঙন ধরে শরীরের বিনুনির গিঁট অালগা করে
শিরদাঁড়ায় কালচে পড়ে।"---
২য় স্তবকের সাথে সঙ্গতি রেখে ৩য় স্তবকে এসে সুন্দর বর্ণনা দেয়া হলো---
"শরীরের কল্লোলে ক্রমশঃ ভাঙন ধরে"-----সব মানুষের ক্ষেত্রেই এটা চিরসত্য।
"বিনুনির গিঁট"-------দারুণ শব্দচয়ন।
৪র্থ স্তবকঃ
------------------
কবিতাটি ক্রমশ গভীরে প্রবেশ করছে।ভাব-ভাবনা,উপমা অারো অারো নান্দনিকতায় যাচ্ছে।
"পাপপুন্য জল শূন্য জীর্ণ মাটি সামান্য ফসলের গন্ধে
অাকাশ মেঘময়।
নিঃসঙ্গ বাতাসের সন্ততি থাক নিত্য পোষাকের ছন্দে
শরীর অস্তিময়।
শরীরের ভেতর অারেক শরীর বয়সের মূর্ধায় থির।"---এই স্তবকে ভাবনা ও উপমা-অলংকার দারুণ রূপ লাভ করেছে।
৫ ও ৬ষ্ঠ স্তবকঃ
----------------------
জবাব নেই।এই দুটি স্তবক পুরো কবিতাটিকে অন্যতম পর্যায়ে দাঁড় করিয়েছে।
সমালোচনাঃ
-------------------*
অামি বড্ড বেরসিক।এই কবিতাটিতে সমালোচনা করা অাঁতলামি বৈ কিছু নয়।অামি অাবারো দৃঢ়ভাবে বলছি--যৌক্তিকভাবে যে কাউকে স্বীকার করতেই হবে এটি অনবদ্য কবিতা।ভাব-ভাষ্য অনুসারে একটি পরিপূর্ণ অাধুনিক কবিতা।তবে একটি কথা বিনয়ের সুরে বলবো এই কবি "জরায়ুজ" কবিতাটি লেখার পর যতটি কবিতা লিখেছেন সেগুলি এতোটা শক্তিশালী হতে পারেনি।কবির বানান সচেতনতা অানন্দের বিষয়।কবির বেশ কিছু কবিতা পড়ে অান্দাজ করতে পেরেছি এই কবিও প্রভাবমুক্ত হতে পারেন নি।(অাসলে অামি কিংবা অামরা কি কখনো পূর্ণরূপে প্রভাবমুক্ত হতে পারি????) কিন্তু কবিতায় ভাব ও চিত্রপট নির্মাণে তিনি দক্ষ।
নামকরণঃ
------------------
কবিতাটি পড়ার পর নামকরণের যৌক্তিকতা নিয়ে কথা না বলাই শ্রেয়।অামরা সকলেই জরায়ুজ।
★★পাঠক হিসেবে এটি অামার একান্ত অালোচনা।কবিতা প্রকাশ হওয়ার পর পৃথিবীর যেকোন পাঠক কবিতা নিয়ে অালোচনা/সমালোচনা কিংবা প্রশংসা করতেই পারে।
★★বিতর্ক কাম্য নয়!