https://www.bangla-kobita.com/oniruddho/post20150218021128/

শর
---------
অনিরুদ্ধ বুলবুল

তীব্র যাতনার হলাহল পানে-
অব্যক্ত উল্লাসে মগ্ন হৃদয় প্রত্যয়ের ধ্যানে।
নিয়তির ছায়ে ভগবানে অাশ্বাস,
মরুবুকে জাগে প্রভঞ্জন উদ্দাম।
শীতল পায়ে দণ্ড গড়ায়,
অাবেশ মলিন,ধ্বসে যায় সুখ
বিশুষ্ক হৃদে,সময় যাতনা বাড়ে।

জীবন যখন শিকলে শালীন দুরাশার মরুতটে
অনন্ত তৃষা স্বপ্ন বুনে-
যাতনার কারাগারে।
নিঃশঙ্ক সোহাগ অমিয় প্রণয়,
মিছে অায়েশের অাশা।
বন্দিনী কায়া নির্বাসনে হায়
উচ্চাশার প্রশ্রয়ে জাগে কিছু সুর।

ঐ সিটি বাজে;সময় হ'ল যে যাবার
স্তব্ধ অাবেগ ইতি-উতি খোঁজে
সুজনের ব্যর্থ বাথান প্রেমহীন জীবনের তীরে।
বিহগের প্রাণে শেল বঞ্চনার অাঁচলে বাঁধা
নিগড় নিলয় ভূমে প্রেমহীনতার শিকড় গাঁথা
বিম্বিত প্রচ্ছদে"সময় হ'লো গো যাবার"-
ডাকে সে সুজন চুপিসারে।

অাজি এ বিদায়ের ক্ষণ
দুরন্ত ছলনার নিঠুর পীড়নে বাজে।
কুয়াশার মায়া বনানীতে লীন
সুখ সাগরের কম্পিত ধারা।

নিরাসক্ত যামিনীর ক্লান্ত শিরায়
স্রোতস্বিনী বহে অনন্ত ফল্গু-লয়ে,
নামে হিমেল হাওয়া,তেড়ে অাসে বিধি
সময়ের তাল বুননে অায়েস বিধুর
ক'র কল্যাণকর কিছু,অারো মঙ্গলময় কিছু।

------------------------------------------------------------

★★
জীবন-বোধ ও চিরন্তন অনুভূতির সাপেক্ষে অাকাশের নীচে দাঁড়িয়ে অামার মত এক তুচ্ছ পাঠক, কবিতাকে দেখে গেলো শুধুই রূপসী নারী রূপে।তাই রমণীয় বিশ্বাসের মত অামার হৃদয়টাকে কুরে কুরে খেলো চিরটাকাল........

★★
এই কবিতাটির মাঝে এমন কিছু গুণ অাছে যাতে কবিতাটিকে অাত্মস্থ করার প্রয়োজন পড়েনা,একধরনের মিষ্টতা-বোধ কাজ করে যাতে পাঠক অনায়াসে শত কষ্টের মাঝেও তাঁর হৃদয়টাকে নাচিয়ে তুলতে পারে অনাবিল ধারায়......

★★
কবিতাটিতে রয়েছে সর্বমোট পাঁচটি স্তবক,সর্বমোট ১৪৩ টি শব্দ অার ৩০ টি লাইন।
মাত্র ১৪৩ টি শব্দ দিয়েই কবি জীবন-বোধ,হতাশা,গ্লানি ও মনের একান্ত অনুভূতির কিছু চিত্রপট এঁকেছেন সুচারুভাবে।

★★
কেন এই কবিতা অাত্মস্থ করার প্রয়োজন নেই?তাহলে দেখুন----
"ক'র কল্যাণকর কিছু,অারো মঙ্গলময় কিছু"----হৃদয় তৃপ্ত হয়ে যায় অজান্তেই......মস্তিষ্কে শিরশির করেনা কোন অনাকাঙ্খিত স্নায়ুচাপে।পাঠক তৃপ্তি পায়।
"নামে হিমেল হাওয়া,তেড়ে অাসে বিধি"--- বাক্যের মাঝে একটা সুর অাছে,মিষ্টতা অাছে, পাশাপাশি অাছে চিরসত্য একটি কথা---"তেড়ে অাসে বিধি"---এই কথা অমোঘ সত্য মানুষের জীবনে।

★★
কবিতা পাঠ করার সময় পাঠক এক ধরণের বেদনা ও শূন্যতা অনুভব করবে।অবশ্যই করবে।কেনো করবে?
তাহলে দেখুন-----
"তীব্র যাতনার""বিশুষ্ক হৃদে"""যাতনার কারাগারে"""দুরন্ত ছলনার""নির্বাসনে হায়""নিঠুর পীড়নে"
--------এই শব্দবন্ধনগুলো পাঠকের অন্তরে শিরিষের পাতার মত মর্মর ধ্বনিতে বেজে উঠে স্ব-মহিমায়।পাঠক বেদনা -বোধ ও চেতনা-বোধের জগৎে কি যেন খুঁজে পায়!কি যেন খুঁজে পায়!এখানেই কবিতাটির সার্থকতা।

★★এই কবিতাটির শক্তিশালী দুটি বাক্য-----
(১)
জীবন যখন শিকলে শালীন দুরাশার মরুতটে
অনন্ত তৃষা স্বপ্ন বুনে-
যাতনার কারাগারে।-----ভারী সুন্দর।
(২)অব্যক্ত উল্লাসে মগ্ন হৃদয় প্রত্যয়ের ধ্যানে।-----অসামান্য।

মন্তব্যঃকবিতার চিত্রপট,সরলতা,অাবেগের অায়োজন বেশ ভালো।

সমালোচনাঃ
---------------------
এই কবিতায় একটি বাক্যের সাথে অারেকটি বাক্যের সামঞ্জস্যতা যতটুকু থাকা উচিত ছিল
ঠিক ততটা নেই বলেই অামার মনে হয়।মাঝে-মাঝে বেশ অগোছালো মনে হয়েছে।কবির কবিতায় মৌলিকতা  একেবারেই নেই।চিরন্তন ভাবনাকে প্রথাগত ধারায় বন্দি করা হয়েছে।রবীন্দ্রনাথ অার নজরুলের প্রভাব মারাত্মক।তবে কবি প্রথাগত ছন্দ ধারায় বেশ দক্ষ এতে কোন সন্দেহ নেই কারণ তাঁর অারও বেশ কয়েকটি কবিতা পড়লে সহজেই দৃষ্টিগোচর হবে।হতাশার কথা হলো এই কবিতায় অাধুনিকতার(অাধুনিকতা????হাস্যকর বটে!) ছাপ দেয়ার চেষ্টা করা হলেও অামার দৃষ্টিতে মোটেই তা হতে পারেনি।কবির কবিতার শব্দচয়ন নিয়ে পাঠক হিসেবে অামার ঘোর অাপত্তি রয়েছে।অারেকটি সুখের বিষয় হলো-----কবি বানানের ব্যাপারে বেশ যত্নশীল।বর্তমানে এই ২০১৬ সালে কবিতা নিয়ে অান্তর্জাতিক মহলে যে অালোচনা হচ্ছে তাতে দেখা যায় কবিতার ভাষ্য-রীতি বর্তমানে এতোটাই পাল্টে গেছে যে তা কল্পনা করা যায়না।কথ্যভাষার সাথে প্রায় সমান্তরাল হয়ে পড়েছে বর্তমানের কবিতা।কিন্তু এই ধরণের কবিতায় তাঁর ছিঁটেফোঁটাও নেই।হাংরী জেনারেশনও এখন পুরাতন হয়ে পড়েছে।যাই হোক,কবির কাব্যপ্রেম চোখে পড়ার মত।বাংলা-সাহিত্যে তাঁর কোন অবদান নেই ;একথা বললে মারাত্মক অপরাধ হয়ে যাবে অামাদের মত পাঠকদের।

সিদ্ধান্তঃ
-----------
"শর" কবিতাটি একটি সুন্দর কবিতা।বাংলা-সাহিত্যের ইতিহাস ও প্রথাগত ধারাকে বিবেচনায় রেখে বলতে গেলে এই কবিতাটি অসামান্য এক কবিতা।

★★অালোচনাটি একেবারেই অামার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি।একটি কবিতা প্রকাশিত হওয়ার পর পৃথিবীর যেকোন পাঠকই অালোচনা/সমালোচনা করার অধিকার রাখেন।এটাই সাহিত্যের রীতি....

★বিতর্ক কাম্য নয়!