কাল চলে গেল বিনা আমায় একা ফেলে রেখে ,
বহুদিন যাবত সে শয্যাশায়ী ছিল , কষ্ট হত তার এমন অবস্থা দেখে ,
হৃদ রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় অচল হয়ে গেছিল তার দেহ, একেবারে অসহায়,
প্রায় একমাস এইভাবে লড়তে-লড়তে কাল সে হাল ছেড়ে দিল , শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল সেই বিছানায়।
প্রায় সাতাশ বছরের বিবাহিত জীবন আমাদের , কত সুন্দর মুহূর্ত কাটিয়েছি একসাথে ,
আজ মনে পড়ে যাচ্ছে সেই সব সুন্দর অতীতের কথা , বেঁধে ছিলাম ঘর সেই স্বর্নালী সন্ধ্যাতে।
সুখের গৃহে অভাব ছিলনা কোনো কিছুর, একে একে সন্তানেরা এল জীবনে ,
সংসার ভরে উঠল , পরিপূর্ণ হল আমাদের জীবন , তাদের প্রতিপালনে কুড়িটি বছর পেরিয়ে গেল,
বড় হয়ে যে যার মত বেঁছে নিল পথ, পড়ে রইলাম আমরা দুজনে একা এই ভাঙা সংসারে,
বিনা কখনও দু:খ করেনি সন্তানেদের চলে যাওয়ায়, বরং হাসিমুখে মেনে নিয়েছিল তাদের স্বার্থপরতাকে,
আমিই বরং কতবার বলেছি তাদের , পারলি তো তোরা এভাবে তোদের মাকে মনে দু:খ দিতে!
গত চার বছর তবুও দুজনে অনেকটা সময় আনন্দের মধ্যে দিয়ে পার করেছি , খবর নেয়নি একবারও তারা,
মায়ের অসুখের খবর পেয়ে প্রতিবেশির মত খোঁজ নিতে এসে ছিল , দেখে মনে হল ভালই আছে আমাদের ছাড়া ।
কালও এসেছিল মায়ের শেষকৃত্য নয় নিজেদের ভাগ বুঝে নিতে ,
এমন অমানুষ তারা মায়ের মৃত্যুর থেকে সম্পত্তির ভাগ বড় হল ওদের পৃথীবিতে।
এই হল আজকের সন্তান যাদের পৃথিবীর আলো দেখাতে প্রতিটি মা নিজে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে,
সম্পত্তির ভাগ বুঝে নিতে কড়ায়-গন্ডায়,
তারাই অপেক্ষায় থাকে মা বাবার মৃত্যুর
পরে,
বিনা ,ভালই হয়েছে তুমি দেখনি ওদের আসল রুপটা, কত কুৎসিত ছিল, কত ছিল ভয়ংকর ,
কি করে এরা তোমার মত মায়ের সন্তান হল , কোথায় ঘাটতি রয়ে গেল এদের মানুষ করবার !
তোমার স্মৃতিটুকু ছাড়া সব দিয়ে দিয়েছি তাদের ,তোমার শেষ কথা মত ,
তাদের ভাগ পেয়ে তারা তো ভুলে গেল তোমায় , শুধু আমি রইলাম শোকাহত ।।