সাঁঝবাতী জ্বলে উঠল গাঁয়ের কুড়ে ঘরে,
শেয়ালের ডাক শুনি বেশ জোরে -জোরে।
জেলেদের তরীগুলি ফিরে এল তীরে,
মেঠো পথে পথ চলি আমি ধীরে -ধীরে।
কৃষকেরা লাঙল নিয়ে ঘরে ফিরে যায়,
গাঁয়ের বধূরা বুঝি শঙ্খ বাজায়।
খালিগায়ে শিশুরা সব পড়াশুনা করে,
মন দিয়ে অ-আ-ক-খ জোরে -জোরে পড়ে ।
বড় হয়ে হতে চায় তারা নামী কিছু ,
বড় হয়ে গাঁয়ের নাম করবে যে উঁচু।
নাই থাক গায়ে জামা ,শরীরে বল তবু আছে,
গরীবের সম্মান যায় নাকো তাতে।
মাষ্টারী করে আমি শিখিয়েছি তাদের ,
পড়া কর মন দিয়ে অভাব হবে না ভাতের।
আমিও তো ছিলাম একদিন গরীব হাভাতে,
প্রায়দিনই থাকতাম না খেয়েই রাতে।
জেদ ছিল মনে মনে পড়তে যে হবে,
কঠোর পরিশ্রম করবো যে তবে ।
বিএ, এম্ এ পাশ করে এখন মাষ্টারী করি ,
গাঁয়ের ছেলেমেয়েদের আমার হাতেই হাতেক্ষরী।
কৃষকের কাজ করে যাই হয় আয়,
তাই দিয়ে ছেলেমেয়েদের তারা যে পড়ায়।
শিক্ষিত নয় তারা তবে পড়ার মর্ম তারা বোঝে,
তাদের ও পড়াই আমি কখনও মাঝে-মাঝে।
আজ এই নুড়ি গ্রাম সব দিকে এগিয়ে ,
চাই যেন আরও যায় সে সব গ্রামকে ছাপিয়ে।
মান্য করে আমায় তারা মাথায় করে রাখে,
রোজ তারা খোঁজ নেয় কাজের ফাঁকে -ফাঁকে।
মনে মনে নিজেকে বড় গর্বিত লাগে,
এমনটা যে হবে একদিন ভাবিনিতো আগে।
সাঁঝ হল পাঠশালায় তাই তালা চাবি দিয়ে ,
ফিরছি যে ঘরে আমার এই বইপত্র নিয়ে ।
একদিন আসবে জানি এমন প্রভাত ,
কুড়ে ঘর ভেঙে হবে সবার পাকা ছাত।
কারো ঘরে থাকবেনা কোনও খালী পাত,
ভরপেট খাবে তারা আসবে সুখের রাত।
নুড়ি গ্রাম সেজে উঠবে মনের মতন,
সব গ্রামের সেরা হবে ,হবে যে রতন।
জগতের মাঝে তাকে শ্রেষ্ট স্থান দিতে,
শিক্ষাকে আপন করে হবে তাকে মেনে নিতে।
জগতে এমনই হয় শিক্ষার প্রভাব ,
দূর করে মানুষের নৈতিক অভাব।
চাও যদি তোমরা সবাই গাঁয়ের উন্নতি,
শিক্ষিত হব আমরা স্থির কর মতি।
একদিন পাবে তোমরা শিক্ষার আসল দাম,
শ্রেষ্ঠ স্থান পাবে সেদিন আমাদের নুড়ি গ্রাম।।