সৈকতের কন্ঠ ছিল খুবই দরদী, দরাজ কন্ঠে যখন গান গাইতে বসতো ,
কোনো কথা মনে থাকতোনা , তার গানের ভক্ত ছিল তখন শুধু তার স্বজনেরা।,
তার কত সাধ ছিল বড় গাইয়ে হবে , বিশ্বজোড়া নাম হবে, তার গানের রেকর্ড বাজবে ঘরে ঘরে,
ক্রেতারা ভীড় জমাবে দোকানে দোকানে, দেখবে সকলে তাকে সম্মানের নজরে।
একদিন এক পাড়ার জলসায় প্রথম ডাক আসে গানের , সে আসরে নামও হয় সৈকতের,
কিছু টাকা হাতে পাওয়ায় সে আত্মবিশ্বাসি হয়ে ওঠে , গান গেয়ে চলে একের পর এক , লাগাতার,
তার দরদী গলা শ্রোতার হৃদয়াসনে বিশিষ্ট স্থান লাভ করে , গান গেয়ে পার হয় মাসের পর মাস,
কিন্তু , হঠাৎ একদিন এক আসরে সারারাত গান গাওয়ার ফলে সৈকত অসুস্থ হয়ে পড়ে , গলায় প্রচন্ড ব্যাথা শুরু হয়,
হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার তার গলা পরীক্ষা করে বলে , তার ভোকাল কট্ নষ্ট হয়ে গিয়েছে ,
তার আর গান গাওয়া চলবে না , সৈকত চেচিঁয়ে বলে "না গান আমার জীবন , গান ছাড়া আমি বাঁচবনা, তার গলা চিড়ে রক্ত বার হয়ে আসে , চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে নেমে আসে, তার সাথে তখন শুধু আমি ছিলাম পাসে।
বাড়ী ফিরে সকলে তাকে সান্তনা দেয় একদিন সে সুস্থ হয়ে আবার গান গাইবে আসরে ,
সকলের কথা যেন বিঁধছে কাটা তারের মত , ক্ষত করছে আঁচড়ে আঁচড়ে ,
গান তার রক্তে মিশে আছে , কি করে রক্তকে বইতে করবে সে মানা,
আনচান করে মন , রাত রাত জেগে থাকে সে একটানা।
একদিন রাতে চুপিসারে সকলের অজান্তে বাড়ী থেকে বেরিয়ে এসে আমাকে বলল" চল বন্ধু নিয়ে চল
আমাকে পাসের পাড়ার জলসায় যেখানে আমি সব কিছু ভুলে শুধু গান গাইব আমার অনুরাগীদের জন্য,
জানি বেশিদিন আর আমি বাঁচব না, সব শুনেছি আড়াল থেকে ডাক্তারের কথা , গলায় হয়েছে ক্যান্সার ,
তবে জানিস বন্ধু দু:খ শুধু এই রয়ে গেলো , মারণ রোগটা কেন শুধু গলাতেই বাঁধল বাসা,
চিরদিনের মত জীবন থেকে আমার গান কেড়ে নিল, যা ছিল একমাএ বাঁচার আশা"।
সেদিন , সে আসরে সৈকত রাতভর মাতাল আসর, গলা দিয়ে মুখে রক্ত উঠে আসল তবু গেয়ে গেল জীবনের শেষ গান,
চলে গেল সে এই পৃথিবী ছেড়ে, স্মৃতি হয়ে রয়ে গেল তার গান,
বিদায় বেলায় সাথে নিয়ে গেল শুধু মনে জমে থাকা অভিমান।