আজ এই বিছানায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে আছি প্রায় একমাস...
পথ দুর্ঘটনায় শরীর আমার পুরো অচল, শুধু মাথাটা কাজ করছে পুরোপুরি ..
হাত-পা একেবারে অবস, ঘাড়টা নাড়াতে পারছি শুধু এপাশ-ওপাশ।।
রোজ তুমি নিয়ম করে আমার সেবা করছো যাতে আমি সুস্থ হয়ে যাই তাড়াতাড়ি ...
তুমি রোজ গা মুছিয়ে ,পরিষ্কার জামাকাপড় পরিয়ে দিয়ে যাও ...
আবার খাবার বানিয়ে নিয়ে এসে খাইয়েও দিয়ে যাও , আমি শিশুর মত উপভোগ করি তোমার সেবা।
সারাগায়ে ভেষজ তেল দিয়ে যখন মালিশ করো তখন তোমার চোখের কোনে জল ছলছল করে ওঠে ,
তুমি ভাবো বোধহয় আমি বুঝতে পারিনা ,
তখন নিজেকে ধিক্কার জানাই , মনটা ভেতর থেকে বলে ওঠে "শেষ করে দে না নিজেকে "।
রোজ রাতে যখন রজনীগন্ধা ফুল রেখে যাও মাথার কাছে , কতক্ষন তাকিয়ে থাকি তোমার চাঁদপানা মুখটাতে ..
তুমি একবার দরজায় দাড়িয়ে মুখ তুলে চেয়ে দেখো ঘুমোলাম কিনা ...
আমি চোখটা বন্ধ করে দেই যাতে তুমি জানতে না পারো আমি তোমাকে দেখি রোজ রাতে ।
কাল তোমাকে দেখে মনে হল ভাল নেই তুমি ,রাখছো না বোধহয় নিজের খেয়াল!
স্বামীর দিকে নজর বেশি দিতে গিয়ে করেছো নিজের এই হাল।
তাই তো দেখোনা তোমার যত্নে আজ চলতে নিজেই পারছি ..
নিজেই নিজের জামাকাপড় নিজের হাতেই বদলাচ্ছি। এসে দেখে যাও তোমার স্বামি এখন নিজেই চলতে ফিরতে পা...
কিন্তু ,আজ এতটা সকাল গড়ালো কোথায় তুমি এলে না কেন এ ঘরে?
ভৃত্য মানিক খবর দিল "বাবু মা আর আসবেন না কখনও এঘরে ..
কাল রাত্রেই তিনি গত হয়েছেন ,চলে গেছেন আমাদের সকলকে ছেড়ে "।
আকাশ ভেঙে পড়ল যেন মাথায়, এ কি শোনালে তুমি ,
হায় বিধাতা ! কোথায় হে অন্তরযামী?!
এই ছিল যদি আমার কপালে , কেন আমাকে তবে দাঁড় করালে ?
যার সেবা পেয়ে আজ উঠে দাঁড়ালাম , তাকেই তুমি শেষে কেড়ে নিলে!