সেদিন ছিল সকাল সাড়ে দশটা , রবিবার , বাজার করতে গেছি দুরের বাজারে , সেদিন আমার বাড়ীর সামনের বাজারে প্রায় সবই ফুরিয়ে গেছে , সব্জি , ফল , তরকারি কিছুই নেই , অগত্যা যেতেই হল দুরে , তা নাহলে তো আবার ঘরেই ঢুকতে দেবে না গিন্নি , তাই বাজারে ঢুকেই প্রথমে তরিতরকারি , মাছ সব কিনে পয়সা দিচ্ছি দোকানদারকে , হঠাৎ অন্যদিকে গোলমাল হচ্ছে জানতে পারলাম , দোকানদারকে জিজ্ঞেস করতেই সে বলল আর বলবেন না মশাই , একজন লোক রোজই এসে তরিতরকারি কেনে অথচ পয়সা না দিয়ে হাঁটা দেয় তাই রোজ ই তাকে মারধর খেতে হয় দোকানদারদের কাছে , আজও হয়ত তাই হয়েছে ,জান না গিয়ে নিজে চোখে দেখে আসুন , আমিও কৌতুহল চেপে রাখতে না পেরে হাঁটা দিলাম সে দিকে, সামনে গিয়ে দেখি একজন চুলগুলো বড় ,এলোমেলো , পরনে ছেড়া জামা , প্যান্ট মনে হল মার ধর করাতে ছিড়ে গেছে , মাটির উপর হুমরি খেয়ে পরে আছে , আমি লোকেদেরকে সরিয়ে ওনার হাতটি ধরে তুলতেই অবাক হয়ে গেলাম প্রায় হতবম্ব , একি কাকে দেখছি আমি , এই তো আমার সেই কবি বন্ধু নবীন। একি হাল হয়েছে ওর , বড় বড় চুল , চোখে মোটা চশমা , কাঁচা পাকা দাড়ী । আমি নবীন বলে ডেকে উঠতেই আমাকে দুরে ঠেলে দিল , আমি বললাম , নবীন আমায় চিনতে পারছিস না ? আমি তোর স্কুলের বন্ধু বিমল , বিমল দাশ , আমি তোর লেখা কবিতাগুলো সবাইকে ক্লাশে পড়ে শুনাতাম , তুই আমার কবিতা পাঠ করাকে বাহবা দিতিস , ও অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখল যেন কিছু মনে করার চেষ্টা করছে , একবার মাথার চুলগুলো ঘাটছে , আবার চশমাটা খুলে চিনবার চেষ্টা করছে , আমি তাকে ধরে নিয়ে এসে একটি চেয়ারে বসালাম , দোকানদারের তার সব পয়সা মিটিয়ে , পাসে এসে বসতেই ,আমার দিকে তাকিয়ে বলল , আমি তো নবীন নই , সবাই বলে পাগল , দেখ ওরা ও বলে , শুনে মনে হল খুব বড় মানষিক চাপে পরে সে আজ প্রায় অর্দ্ধ পাগল হয়ে গেছে , যার কবিতা একদিন সমাজকে নাড়া দিয়েছিল , আজ সেই কবি প্রায় হারিয়ে ফেলেছে তার অস্তিত্ব ! অবাক হলাম তার উপর সমাজের অবিচার দেখে , তার মাথায় হাত রেখে বললাম চল্ আমার বাড়ী , নিয়ে গেলাম , গিন্নি তো অবাক বাজার করতে গিয়ে কাকে সঙ্গে করে নিয়ে এলাম , জিজ্ঞেস করতেই সব ঘটনা খুলে বলাতে , সে আতিথেওতার কোনো অভাব রাখলো না , নবীন বাড়ী তে এসে অনেকটা স্বাভাবিক বোধ করছে , সেদিন অনেকক্ষন সময় ওর সাথে কাটানোতে জানতে পারলাম , ওর লেখা কবিতাগুলো কেউ ছদ্ম নামে লিখে নিজের নামে নামী ব্যক্তি হয়েছে , আর ও সব জেনেও অর্থাভাবে তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছে , অথচ কিছু করবার জো নেই কারন সেই ছদ্মনামী ব্যক্তি এখন বিশাল ক্ষমতাশীল তার কাছে নবীন সমাজের এক অতি সামান্য ব্যক্তি।
( নবীন হলেন আমার স্বামীর স্কুলের বন্ধু যার কথা স্বামীর কাছেই শোনা , তাই মনে হল ঘটনাটি সকলের সাথে শেয়ার করি , লেখাতে গিন্নি হলাম আমি ,স্বামীর বলা কথাগুলি আর কিছু নিজে প্রত্যখ্য করা অভিজ্ঞতাই শেয়ার করলাম)