পৌষের ধানশূন্য খাঁ খাঁ বিল আমায় গাঁয়ে ডাকে।
খেজুরের রসের সাথে মায়ের হাতে বানানো
ধোঁয়া ওঠা ভাপা পিঠা আমায় উস্কে দেয়
নানান অজুহাতে গ্রামে ছুটে যেতে।
বাজারে 'কুল' ফল দেখলে চোখে ভেসে ওঠে
ভোরে লাঠি দিয়ে বাবা গাছ থেকে 'কুল' পেড়ে
খাওয়ানোর চিত্র।
কী অপরূপ শীতের দৃশ্য —
সকালে ঘুম ভেঙ্গে চোখে পড়ে সূর্যের সোনালী রশ্মি প্রতিফলিত হচ্ছে ঘাসের ডগায় ঝুলে থাকা
শিশিরের মাথায়।
দূর্বা ঘাসে ঢাকা মেঠোপথ দিয়ে
হাঁকতে হাঁকতে চলে যায়  রস‌ওয়ালা।
সাত সকালের বাজার পূর্ণ হয়ে যায়
হরেক রকমের শাক-সবজি দিয়ে।
এই দৌরাত্ম চলতে থাকে পুরো শীতকাল জুড়ে।
তবে কুয়াশা-ভেজা এই শীত বয়ে আনে কিছুটা শুস্কতা।
এই শুস্কতায় বয়োবৃদ্ধদের পা আর 'বিলের বুক' ফেটে
হয়ে যায় একাকার।
শূন্য ধানক্ষেতে বিচরণ বাড়িয়ে দেয় কবুতর সহ আরো নাম না-জানা কতো অতিথি পাখি।
চিরায়ত সবুজ আবরণ খুলে গাছপালা
ধারণ করে রৌদ্রবর্ণ।
কর্মঠ উদ্যমী মানুষরাও হয়ে যায় কিছুটা বিড়ালের মত আরাম প্রিয়।
শীতের মৌসুমে আমার গ্রাম সাজে বর্ণনাতীত অপরূপে;
কৃষাণের সদ্য বিবাহিত নব বধূর মত।

আহ্!সেই সৌভাগ্য কী আর হবে আমার ?
গ্রাম্য ছেলের মত কুয়াশামক্ত দুপুরে
একটু রদ্দুরের উষ্ণতার খোঁজে ক্ষেতের আইল ধরে হাঁটা?
লক্ষ্যভ্রষ্ট জেনেও যত্রেতত্রে খাদ্যের খোঁজে আসা‌
পাখিকে ঢিল ছুড়া?
না-কেনা সত্বেও ছুটে চলা ফেরিওয়ালার মালপত্রের দামাদামি করা।

খরস্রোতা নদীর মত চলতে চলতে ছিটকে পড়েছি আমি বুড়িগঙ্গার তীরে।
জাগতিক নিয়মে আটকে গেছি কংক্রিটের ঢালায়ে গড়ে উঠা বায়ু দূষিত শহরে।
মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয় পালিয়ে যায় সাজাপ্রাপ্ত কয়েদির মতো এই অদৃশ্য কারাগার থেকে।
কিন্তু লাজ-লজ্জার ভয়ে যাওয়ার সাহস হয় না।
যদি গ্রামের ছেলে আবারো‌ গ্রামে ফিরে যাই,
'টি স্টল ইন্সটিটিউট' থেকে সদ্য ডিগ্রি নেওয়া পিএইচডিধারিরা বলবে— আরে,দেখ!দেখ!
মাস্টারের সেই একমাত্র ছেলে ব্যর্থ হয়ে ঢাকা থেকে গ্রামে ফিরে এসেছে।