প্রিয়কবি আল মাহমুদের সাথে কিছুক্ষণ
-এনামুল হক মানিক
পাহাড়টাকে হাত বুলিয়ে লাল দিঘীটার পাড়
এগিয়ে দেখি জোনাকিদের বসেছে দরবার ।
আমায় দেখে কলকলিয়ে দীঘির কালো জল
বললো, এসো, আমরা সবাই না ঘুমানোর দল-
উপরের লাইনগুলো প্রখ্যাত কবি আল মাহমুদের ‘না ঘুমানোর দল’ কবিতার অংশ বিশেষ। আমি যখন উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ি তখন এই কবিতাটি আমাদের পাঠ্যসূচীতে ছিলো। আমি কবিতাটি প্রায়ই আবৃত্তি করতাম আর কল্পনাতে কবির সাথে সাক্ষাতের কথা ভাবতাম। সেই যে কবিতাটি মূখস্থ করেছিলাম এখনো আমার পুরোটাই মুখস্থ আছে। কবির ‘নোলক’ শীর্ষক কবিতাটিও আমার এখনো মূখস্থ আছে। কবি আল মাহমুদের এই দুটি কবিতা এখনো মাঝেমাঝে উচ্চস্বরে আবৃতি করতে আমার ভালোলাগে।
গত ২৫/০৪/২০১৫ তারিখে প্রিয়কবির সাথে সাক্ষাত করার জন্যে গিয়েছিলাম কবির বাসভবনে। দারোয়ানের অনুমতি নিয়ে বাসার কলিং বেল টিপতেই কাজের বুয়া দরজা খুলে দেন। বাসায় প্রবেশ করতেই প্রথমে নজরে এলো দেয়ালে ঝুলানো একটি দেয়ালিকা, দেয়ালিকাটির নাম ‘না ঘুমানোর দল’। দূর হতে ভালো করে দেখতে পাচ্ছিলাম না কারা এবং কোথায় এই দেয়ালিকাটি প্রকাশ করেছিলো। তখনই আমার ‘না ঘুমানোর দল’ কবিতাটি আবার মনে পড়ে যায়।
নারকেলের ঐ লম্বা মাথায় হঠাৎ দেখি কাল
ডাবের মতো চাদঁ উঠেছে ঠান্ডা ও গোলগাল।
ছিটকিনিটা আস্তে খুলে পেরিয়ে এলেম ঘর
ঘুমন্ত এই মস্ত শহর করছিলো থরথর ।
কবিতাটি আমার অতীতকে স্মরণ করে দিলো। কিছুক্ষণের মধ্যে কবি এলেন, সালাম দিয়ে করমর্দন করলাম, তিনি শোফাতে বসলেন এবং আমাকেও বসতে বললেন। এরপর বিভিন্ন বিষয়ে কিছুক্ষণ আলাপ করলাম, অবশ্য কবির সাথে আগেও কয়েকবার দেখা হয়েছে কিন্তু এত কাছাকাছি আসতে পারিনি কখনো। আলাপের পর কবির হাতে তুলে দিলাম আবার ছড়া-কবিতার বই ‘কাশফুল দোল খায়’। কবি অনেকক্ষণ ধরে আমার বইটির প্রচ্ছদ দেখলেন। তারপর বললেন আমি বইটি পড়বো।
কবির লেখা আমি অনেক বই পড়েছি, এবার কবি পড়বেন আমার লেখা বই। যা ভাবতেই আমার মনে কেমন একটা আনন্দ দোলা দিয়ে গেলো যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। যাক, কবি থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে গেলাম। জানিনা আবার কবে দেখা হবে প্রিয়কবির সাথে।
আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি, ঔপন্যাসিক এবং ছোটগল্প লেখক আল মাহমুদ। তিনি ১৯৩৬ সালে ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর প্রকৃত নাম মীর আব্দুস শুকুর আল মাহমুদ। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের প্রধান কবি। কবির প্রকাশিত গ্রন্থসমূহের মধ্যে লোক লোকান্তর, কালের কলস, সোনালী কাবিন, মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো, আরব্য রজনীর রাজহাঁস, বখতিয়ারের ঘোড়া , দিনযাপন , মিথ্যাবাদী রাখাল, একচুক্ষ হরিণ, যেভাবে গড়ে উঠি, পানকৌড়ির রক্ত , পাখির কাছে ফুলের কাছে, আগুনের মেয়ে পাঠক মহলে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে।
বর্তমানে কবি বার্ধক্যে উপনীত। মহান আল্লাহ পাকের কাছে কবির সুস্থতা এবং দীর্ঘায়ু কামনা করছি।