ধরার মাঝে আছে যত চাষা, মজুর, তাঁতী, জেলে, মুচি, কুমার এবং কামার
কারো প্রতি নাই অবহেলা মোর, কারো প্রতি নাই কম কেয়ার;
সবার জন্যই আছে আমার সমান ভাগ ভালোবাসার
তাদের দ্বারাই হয়েছে পূরণ জাতির সকল প্রত্যাশার।
তাদের হাতেই হয়েছে গড়া ভিত্তি নতুন সভ্যতার
কঠিন শ্রমের জন্য যাদের বেরিয়ে এসেছে দেহের হাড়!
অথচ তারাই ধরার মাঝে সবচেয়ে অবহেলিত
ধনিক শ্রেণির পায়ের তলায় হচ্ছে তারা দলিত।
পারি না সহিতে তাদের উপর এই নিদারুণ অপমান,
যাদের শ্রমে ঊষর ধরণী ফিরে পেয়েছিল তার প্রাণ
আমি সেই সব কৃষক-মজুর-কুলিদের বন্দনা করি,
মাথার ঘাম পায়ে ফেলি যারা তুলিছে বসুধা গড়ি।
পৃথিবী-মাতার প্রাণ-পুত্রেরা দেখো সবখানে খাচ্ছে মার,
এত কিছু করে পাইতেছে তারা শুধু নিষ্ঠুর অবিচার!
অবাক আমি দেখি আজিকে সভ্য মানুষের বিকার,
ধরার শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা পায় না তাদের অধিকার!
ধরণীর ঋণ যারা করিল শোধ রক্তমূল্য দান করে,
হা অদৃষ্ট! মরছে তারাই অপমান আর মৃত্যুর সাথে লড়ে।
যাদের হস্তে হয়েছে গড়া অট্টালিকা-ইমারত,
তাদের পক্ষে করে না লড়াই দুনিয়ার আদালত!
অত্যাচারী-ধনিকের দল দিতেছে তাদেরে ব্যথা অবিচার-অপমানে,
বোঝে না তো তারা দিতেছে ব্যথা ধরণী-মাতারই প্রাণে।
সেই সব মজলুম-ক্ষুধিতের পক্ষে আমি কলম ধরি,
কূপমণ্ডূক জালিমদের আজ মুণ্ডপাত করি!
আর নয় অবহেলা, এবার তাদের বাসিতে হইবে ভালো,
তারাই ধরার সূর্য-সন্তান, এই পৃথিবীর আলো।
চলো করি সবাই মিলে নতুন দিনের অঙ্গীকার,
ফিরিয়ে দেবো ধরার সকল শ্রমিকের অধিকার
আজ সেই সব মূঢ়-মুক প্রাণে দিতে হইবে আশা,
শিখাইয়া দিতে হইবে তাদের প্রতিবাদের ভাষা।
দূর করিতে হইবে তাদের অজ্ঞানতার অন্ধকার,
ছড়ায়ে দিতে হইবে আলো সত্য-ন্যায়ের শিক্ষার
আত্মশক্তির বলে তাদের হইতে হইবে বলীয়ান,
তবেই তারা পারিবে বুঝিতে মানুষ মহীয়ান।
ভাইয়েরা আমার এখনই সময় রুখে দাঁড়াও আজ,
ছুঁড়ে ফেলে দাও যত ভয়, সংকোচ আর লাজ!
মরণ-জ্বালা কারে বলে বুঝিবে এবার যমরাজ,
অত্যাচারীর মাথার উপর পড়িবে ভীষণ বাজ।
নিজের ভাগ অন্যেরে দিয়া তারা মরিতে আসে নাই ধরায়,
শ্রম দিয়া তারা বাঁচায়েছে প্রাণ ভীষণ বৃষ্টি-খরায়
যদি আসে তাহাদের মাঝে প্রাণের জাগরণ,
ধরণীর বুকে শুভদিনের ঘটিবে আগমন।
জগতের সব ধূলিকণা গায় তাহাদের জয়গান
তাহাদের দ্বারাই হইবে আবার নতুনের উত্থান।