হয়ত ভুলে গেছ অগ্নিঝরা জুলাইয়ের সেই দিনগুলো
যখন রাতের আঁধারে নৃশংস স্বৈরশাসক
মসনদে বসে কষছিল ছাত্র জনতা হত্যার
সেই দুর্ধর্ষ রক্তক্ষয়ী নীল গর্ভ-নকশা
ওরা জানেনা আমরা এখানে মরতে এসেছি
মৃত্যু আমাদের কি করে শাসাতে পারে?
মিত্যুকে তুচ্ছ করে আলিঙ্গন করতে এসেছি
সত্য স্বাধীন পতাকা
হয়ত ভুলে গেছ যখন সাঁই সাঁই করে দিন দুপুরে
শত শত মরনাস্ত্রের গাড়ি ছুটে যেত
ছাত্র জনতার হৃদয় ছিন্নভিন্ন করতে
যখন বিদ্ধ করত এক একটি গুলি
বুক চিরে রক্ত গড়িয়ে পড়ত
আর এই রক্তের প্রতিটি ফোঁটায় লেখা থাকত স্বাধীনতা
কী ভয়ানক মিত্যু যন্ত্রণা
তবু মিত্যুর চিৎকারে ছিল সেই বিজয় উন্মাদনা
ঘৃন্য ,হৃদয়-বিধারক!
দাউ দাউ করে জ্বলছিল আগুনের লেলিহান শিখা
গুলির বিভৎস আওয়াজ বারুদে আচ্ছাদিত
ঘনঘোর অন্ধ পথে দিগন্ত জুড়ে বিস্তৃত বিভৎসতা
সন্তান হারানো মায়েদের সেই কঠিন আত্মচিৎকার
দুর থেকে দূরে ভেসে বেড়াত বাতাসের বেগে বেগে
গরম বাতাসে স্নিগ্ধ ঘামে ভেজা বীরের বাহু
যত্রতত্র পরে থাকত লাশ রক্তের ছোপ
ভ্যানের উপর রিক্সার উপর লাশের স্তূপ
শত শত লাশ গুম করেছিল নৃশংসরা
ছাত্র জনতার বুকে গুলি করার সেই নির্দেশগুলো
ফ্যাসীবাদি আদালতেও যখন খারিজ হয়ে যায়
বেঁচে থেকে লড়াই করার শেষ ভড়সাটুকু
পরাধীন দেশে কাপুরুষের মত কে বাঁচতে চায় বল
হয়ত ভুলে গেছ গনজাগরন মঞ্চে মেধাবীদের
সেই জলাময়ী ভাষন
রোদ্রে জ্বলে পুড়ে মিছিলে বাঘের মত গর্জে উঠত ওরা
হয়ত ভুলে গেছ জুলাইয়ের উত্তাল দিনগুলো
ঝড়া পাতার মত তাজা প্রান
শুকনো পাতা আর কাঠের মত
এক এক জন  ছাত্র জনতা একেকটি বৃক্ষের মত
দাঁড়িয়ে থাকত
ওরা ফিরে এসেছে
দেশের ছাত্রদের উপর গুলি করা হচ্ছে
নৃশংস পশুরা আবার ফিরে এসেছে
নৃশংস হায়েনারা ফিরে এসেছে
উতপ্ত উত্তাল দিনগুলো ফিরে এসেছে
সেই ৪৭ ৫২ ৬৯ ৭১ ফিরে এসেছে
ইতিহাসের বিরল এক লজ্জা
কারো মুখ থেঁতলে রক্ত ঝরছে
কারো বুক পীঠ রাবার বুলেটে ঝাঁঝরা হচ্ছে
কারো নিতম্বে ভয়াবহ অত্যাচারের ক্ষত চিহ্ন
ছাত্ররা ওদের ন্যায্য দাবি দাওয়া পেশ করছে
সরকার নীরব হস্তক্ষেপ করছে না
স্বৈরাচারের শেষ সীমায়
আগুন জলছিল দেশের অভ্যন্তরে
সরকার আর জনগণের মধ্যে
গোটা দেশের বিরুদ্ধে শুধু আওয়ামী ছাত্রলীগ
গোটা দেশের বিরুদ্ধে সরকারের পাচাটা বাহিনী
রাজপথে উতপ্ত কথপোকথন উতপ্ত স্লোগান
গোটা দেশের আনাচে কানাচে
পুলিশ সন্ত্রাসী লীগের সাথে
সাধারণ ছাত্র জনতার উতপ্ত বাক বিতণ্ডা
গুলি টিয়ারশেল রাবার বুলেট
ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া
খুন গুম নির্যাতন
জোড় পূর্বক স্কেপ্টেড বিবৃতি
জনরোষে জনস্রোত বিক্ষোভ বিক্ষুব্ধ জনতা
আগুন জ্বলছিল চোখে মুখে আগুন ছিল মনে
আগুন ছিল ঝাঁঝরা বুকে আগুন আন্দোলনে
সমন্বয়কদের বাজখাঁই নাদ বাঘের গর্জন
যেন দেশটা কারা লুট করেছে
দুঃসহ স্বৈর শাসনে পুরে ছাই হয়েছে
সেই চিৎকারে
এ অগ্নি রুদ্র জনতার বিক্ষুব্ধ স্রোতের
এ অগ্নি বিপ্লব ইনকিলাব অভ্যুত্থানের অগ্নি
এ অগ্নি শহীদের মৃত লাশের
এ অগ্নি শহীদের পবিত্র রক্তের
যাতে মিশে হাজার বছরের দেশপ্রেম
স্বৈরাচারের সীমা লঙ্ঘন
জলন্ত আগুনের অঙ্গার কাঠ ফাটা তৃষ্ণা
অগ্নিদগ্ধ হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিলো নব্বই ভাগে
মনের দরজায় কপাট এটে বসে আছ
তুমি কি স্বাধীন দেশে বাস করতে
তুমি কি সভ্যদের দেশে বাস করতে
তোমার মস্তিষ্কের সমস্ত বিশ্বাস আর চেতনায় ছিল ভুল
যেখানে আবদ্ধ করা হয়েছিল অন্ধ পর্দার আড়ালে
আমি কবিতা লিখি সাধারণ মানুষের জন্য
আমার কবিতায় থাকে স্বাধীনতা
আর সেই দুঃসহ ছবিটা
হয়ত ভুলে গেছ শিকারী মত পুলিশের মরনাঅস্ত্র অভিযান
অগ্নিদগ্ধ হাসপাতাল বেড বার্ন ইউনিট
জরুরী বিভাগে
হাত পা চোখ হারিয়ে কাতরাচ্ছে
কেউ মুমুর্ষ বিছানায় মিত্যুর প্রহর গুনছে
তিল ঠাঁই নেই চিৎকার চেঁচামেচি
কারো কাটাছেঁড়া পায়ে আগুনের মত রক্ত ঝরছে
কে ফিরিয়ে দেবে ওদের হাত পা চোখ
কে ফিরিয়ে দেবে মায়ের শেষ আশাটুক
কুন্ঠিত শিরে লজ্জিত পুরুষ মাথা উঁচু করে দাঁড়াও
গনবিষ্ফুরনের আগুন লাগবে তখন
হয়ত ভুলে গেছ ভুলে যাবে তোমার হৃদয়ের সৎকারে
আমি কিছুই ভুলিনি
সবকিছু লিখে রেখেছি তোমাদের তরে