তোমাদের কাছে ফিরে যাবো না,
আর কোনদিন।
আমার শুভাকাঙ্ক্ষীগণ!
বন্ধু, শত্রু এবং আপন।
ফিরে যাবার কথা ভাবলেই মন জ্বলে,
চোখের দৃষ্টিতে জমে কুয়াশা।
কোথায় ছিল এত ব্যথা, অঙ্গার।
ধোয়ায় ভরে উঠে হৃদয়ের চার পাশ,
ঝোপ থেকে বেরিয়ে আসে বঞ্চনার কালো শেয়াল।
গিলে খেতে চায়,
দীর্ঘদিনের ভালোবাসায় সাজানো সংসার।

বাঁশ বাগানের মাথার উপর আর চাঁদ জেগে ওঠে না,
কাজলা দিদির স্মৃতিতে ভাগ বসায় লোডশেডিং এর অন্ধকার।
তোমাদের চেহারা ক্রমশ ঘোমটা টেনে হারায় দিগন্তে।
তোমরা যে কোনদিন ছিলে
একথা ভাবতে ভালোলাগে না,
কেন এমন হলো কে জানে!
অদ্ভুত বিষণ্ণতায় হৃদয়ের
অলিতে গলিতে খুঁজি সেই সব দিনগুলো,
যা ছিল ভীষণ আদরের।
ভালো লাগা ছিল ফুলের বিছানায়।
তোমাদের প্রতিটি কর্ম মনে হতো
যেন আমারই জন্য নিবেদিত।
কোথায় গেল সেই প্রেরণা!
প্রতারণা  বিনিদ্র পাখির কান্নায়
ধ্বনিত হয় হৃদয়ে।
ইচ্ছে হয় মুক্তি নেই এই মোহ থেকে,
এই শূন্যতা থেকে।

আমাকে ভুলে থেকো তোমরা।
নিঝুম কোন দ্বীপে চলে যাব আমি,
তোমাদের থেকে দূরে, নিরুদ্দেশ।
তোমাদের শরীরের উত্তাপ আমাকে
অর্থহীন আবেগে অস্থির করে।
এই মুহূর্তে আমি বাঁচতে চাই,
সেখানে চাই না তোমাদের মোলায়েম কপটতা, ভণ্ডামি।
তোমাদের ভালোবাসায় বিষ,
বেদেনীর সাপকে সম্মোহিত করার বাঁশির সুর,
শব্দহীন যেন কুয়াশায় শূন্যে নৌকা ভাসে।
তোমাদের নিয়ে আমার কোন দৃষ্টিভ্রম নেই,
নেই ভুল বোঝার অবকাশ।
তোমাদের মাঝেই আমি ধ্বংস দেখি,
দেখি আমার সর্বনাশ।
এখনো তোমরা আমার চারপাশে ফাঁদ পেতে রাখো,
বঞ্চনার।
কানামাছি খেলো আমার বিশ্বাস নিয়ে।
সুরা পাত্র সমো ভালোবাসায়
আমাকে মাতাল করে রাখার স্বপ্ন দেখো।
বিড়ালের মত ঘুরে বেড়াও আমার চারপাশে,
অপেক্ষায় থাকো;
অসতর্ক আমি কখন ইঁদুরের মত গর্ত ছেড়ে বেরিয়ে আসি।
আমি দৃষ্টিহীন নই,
ভীত হব না তোমাদের নিষ্ঠুরতায়।
স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে অনেক,
আমার আয়ু ক্ষয়িষ্ণু।
সময়ের জোয়ারে ভেসে ভেসে
চলে যাব বৃষ্টি ভেজা গোলাপ বাগানে।
গন্ধময় জীবনে এখন তীব্র তাপ দাহ;
আমার একাকীত্ব রৌদ্রময় ভেজা উঠোনে
আলো ছড়াচ্ছে।
বিচ্ছেদের বিরহ সুকণ্ঠ পাখির মতো গান গাইছে।
ধিতাং নৃত্যের তালে মোনাজাত রত
ভিখিরির কণ্ঠে শুনি লোক সংগীত।
তাই প্রতিজ্ঞা ফিরে যাব না।

যন্ত্রণা দিয়েছো, চুপ থেকেছি;
বিশ্বাস ভঙ্গ করেছো, চুপ থেকেছি;
ভালোবাসার মূল্য দাও নি, চুপ থেকেছি;
কথা দিয়ে কথা রাখো নি, চুপ থেকেছি;
মিথ্যে দোষারোপ করেছো, চুপ থেকেছি;
তাই প্রতিজ্ঞা কোনদিন ফিরে যাব না তোমাদের কাছে।
নীরবে থেকে যাব দূরে নিভৃতে,
একা,
একজন মৃত মানুষের মতো।
সাঁতার শিখিনী বলে মৃদু বকেছে মা কতবার।
তবু সাঁতার না জেনেও তোমাদের থেকে
দূরে থেকে যেতে,
অনায়াসে ঝাপ দেবো বিশাল নদীতে,
বেঁচে থাকার জন্য নয়;
শুধু ফিরে যেতে চাই না বলে।