বাবারা এরকমই হয়,
খানিকটা চেনা, বেশীর ভাগটাই অচেনা।
রাগি, অহংকারী, একরোখা,
কখনোও ভীষণ আত্মভোলা।
ফিজিক্সের মধ্যেও যে খানিকটা ফিলজফি আছে
সে শিক্ষা আমার বাবার কাছে।
মা, ভাইবোনেরা জানেনা কিন্তু আমি জানি,
জানি যখন প্রবল জ্বরে আচ্ছন্নের মতো পরে থাকবো
তখন চোখ মেললেই তাকে দেখবো।
শৈশবে যখন বিশাল বাবাকে লম্বা পা ফেলে
হেটে যেতে দেখতাম তখন লাফিয়ে লাফিয়ে তার
সাথে তাল মিলিয়ে চলতে চাইতাম।
আজ শৈশব থেকে বার্ধক্যে পৌঁছেও সেই পথটাই চলছি।
প্রতি মুহূর্তে সংগ্রাম করি তবু আদর্শচ্যুত হই না।
পথটা আমার চেনা, এ পথেই একদিন আমার বাবা
বীর দর্পে হেটে গেছেন ভীষণ অহংকারে।
বাবাকে নিয়ে আমার যে অহংকারের রাজ্য সে
রাজ্যে আছে কেবল সৃতির পদচারণ, নস্টালজিয়ার সুর।
বাবাকে হারিয়েছি অনেক দিন, তবু আজও
প্রতিটি পতনের পর তিনিই আমাকে দু’পায়ে
উঠে দাড় করান,
আমার কান্না মুছে দেন তার উজ্জ্বল হাসি দিয়ে।
আমার সামনে এখন একটা খোলা দরজা, সেখানে
কিছু পুরাতন কিছু নতুন।
দরজার বাইরে তাকালেই চোখের সামনে
বিশাল চাঁদের মতো দেখা দেয় আমার বাবার
অপূর্ব মোলায়েম মুখখানা।
ঐ মুখ বাঁশীতে আঙুল না লাগিয়েও অলৌকিক
সুরে মধ্যরাতে আমাকে ঘুম পরায়,
শরীর না ছুঁয়েও মায়াময় আদরে কাছে ডাকে, তার
ভালোবাসার তাপে সিক্ত হই, জীবনকে মনে হয়
সুন্দর পবিত্র,
তার কথা কবিতার ছন্দে আমাকে দাণ করে
এক স্পর্শহীন স্বর্গসুখ।
আজ জীবনের শেষ সীমায় দাঁড়িয়ে তাকে ডাকি,
ঘড়ির কাঁটা থেমে গেছে সেই কবে তবু
দেখে নেই অমূল্য অতীত; থেকে যায় কেবল শূন্যতা;
তার বাক্যহীন সৃতি-পদচিহ্ন।
তার মায়াময় ছায়া শুধু ছুঁয়ে থাকে আমার হৃদয়।
তারই আশ্রয়ে মুখ লুকিয়ে ফিরে যাই শৈশবে।
সূর্যাস্তের মতো ডুবে গেছে তার জীবন, আমার
সমস্ত ইচ্ছারা তাকে জড়িয়ে ধুরে, বলে,
উঠে এসো আধার থেকে আমার বর্তমানে,
তবেই না পাবো তোমাকে ভবিষ্যতে।