আজ ভীষণ জানতে ইচ্ছে করছে
শৈশবের না পাওয়ার অতৃপ্তিই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে কিনা?
এক টাকার ধোয়া ওড়া বারুদের পিস্তল মেলায় হারিয়ে গিয়েছিলো
খুঁজতে খুঁজতে মেলার মাঠটিকে আমি দৌড়োবার ট্র্যাক ভেবেছিলাম ।
স্কুলের ক্লাসরুমে মায়ের হাতে বানানো সাদা খাতাটি একদিন হারিয়েছিলাম
ভয়ে-মায়ায় এতটাই কেঁদেছিলাম যে পথচারীও ব্যথিত হয়েছিল ।
মাঠ পুকুরে ডুব সাঁতার দিতে দিতে হাতের আংটিটি কখন যে তলিয়ে গেলো
অতঃপর খুঁজতে খুঁজতে একদুপুরেই আমি মাইকেল ফেলপ্স হয়ে গেলাম !
বাজারে সুকুমারের দোকানে চা খাবার লোভে মামার দেয়া হারমোনিকা ফেলে গেলাম
সন্ধ্যা রাতে মনে পড়তেই এক দৌড়! তবু খোঁজ পেলামনা, সেই থেকেই সুর হারালাম !
আজ ভীষণ জানতে ইচ্ছে করছে
সেদিনের সেই কাঁচা মাটির পথ খুব বেশি ব্যাথা পেয়েছিলো কিনা
আমি চামড়ার নতুন জুতো পায়ে কিযে দ্রিম দ্রিম শব্দে হেটেছিলাম
মা বলেছিলো বাবু সোনা মাটি ব্যাথা পাবে! আমি মায়ের কথা কানেই তুলিনি !
কাদা মাটি-তাকে কেউ বাবু সোনা বলে ডাকেনি, তার ব্যথাই এখনো আমার বুকে !
একদিন শরৎ সকালে গুলতি হাতে নিপুন নিরিখে দোয়েল পাখিটার মাথা ঘুরিয়ে দিলাম
বন্ধুদের নিয়ে কিযে উল্লাস ! রীতিমতো আমার বুকটা চওড়া হয়ে গেলো,
সব মৃত্যুইতো কাউকে না কউকে আচমকা নিঃস্ব করে দেয়
নিশ্চয়ই মা পাখিটা ভীষণ কেঁদেছিলো, তার কান্না এখনো আমার চোখে লেগে আছে !
আজ ভীষণ জানতে ইচ্ছে করছে
ক্লাস ফাইভে থাকতে যে মেয়ে বন্ধুটির বিয়ে হয়েছিল
সে ভালো আছে কিনা ?
ক্লাসের মাঝখানে যখন ওর বাবা বাড়িতে কুটুম এসেছে বলে ওকে নিয়ে যাচ্ছিলো
আর কেউ না বুঝুক ও বুঝেছিলো!
নিরুত্তাপ নয়নে শেষবারের জন্য ক্লাস রুমটাতে তাকালো
আমি ভাবলাম বোধহয় মাথা গুনছে কুটুমের আনা মিষ্টি পাঠাবে,
দশ বছর বয়সে বন্ধুত্বই বুঝতে পারিনা আর অসহায়ত্ব কি করে বুঝবো !
নিশ্চয়ই ওর অপারগতা অসহায়ত্ব অভিমানে কষ্টচাপা ছিল
না হলে কার অভিশাপে এখনো আমি অসহায়!