পৃথিবীর সব দেশের খবর জানিনে তবে অনুমান করতে পারি বাংলা তথা বাঙালি পরিমন্ডলে কবিতা লেখার মানুষের সংখ্যা আনুপাতিক হারে বেশিই হবে। আগ্রহ ও অনেক । আজ আলোচনা করবো কবিতার পাঠ নিয়ে। বলা হয়ে থাকে আমাদের পঞ্চ ইদ্রিয়, যার চারটি দ্বারা বহিঃবিশ্ব থেকে গ্রহন করি আর একটি দিয়ে আমারা প্রকাশ করি। চোখ, নাক, কান, জ্বিবা ও ত্বক, এখানে জ্বিবা ছাড়া বাকি গুলার কাজ মোটামুটি তথ্য গ্রহন করা শুধু জ্বিবা ব্যবহার করি কথা বলতে। ভালো কথা মন্দ কথার কত মালা গাঁথী, কখনও ফুলের কখনও কাঁটার।তা যাই হোক কথাটা বলা এ কারনে যে আমরা যদি দেহকে দেখি তাহলে লক্ষ্য করব যে আমরা চার গুন অনুভুতি গ্রহন করি এক গুন প্রকাশ করি। তাই জ্ঞানী মাত্রই বলেন চার গুন অর্জনে এক গুন প্রকাশই যথার্ত। যেমন বরফ খন্ড সিংহ্ভাগই ডুবিয়ে রাখে তাই দেখে তার শক্তি বোঝা দুরুহ, তার জন্যে অভিজ্ঞতার আশ্রয় নিতে হয়। সোজা কথায় কোন কিছু বলা বা প্রকাশের জন্যে অধিক তর জ্ঞানের প্রয়োজন হয়। এখন কবিতা পাঠ আর কবিতা মূল্যায়ন কী এক? মোটেও না। দেখুন কোন কবিতা যদি একটা অনুস্ঠানে পড়া হয়, আবার সেই কবিতা যদি বিশ্ব্ববিদ্যালয়ের ক্লাশে পড়ানো হয় তাহলে দুটোর কাজ ও উদ্দেশ্য হয় সম্পুর্ণ ভিন্ন। পার্লারে সাজানোর পর বিয়ের কনে আর অপারেশন টেবিলের কনের ফারাক অনেক।
কবিতাকে সব সময় অপারেশন টেবিলে নিতে বলছিনা, তবে সৃষ্টির পরে তো একটু কাটা ছেঁড়া চলতে পারে, নাকি? আপনি ইউরোপে পোস্ট ইম্প্রেশনিজম চিত্রশিল্পীদের সময়টা দেখুন, মহ্ৎ সৃষ্টির জন্যে আপনাকে যথার্ত পাঠকের সমালোচনার প্রয়োজন অবশ্যই লাগবে।
তবে তা অবশ্যই নির্মোহ কষ্ঠিপাথরের মতো হতে হবে। প্রস্ংশা কবি ত বটেই এ স্ংসারের প্রান, তবে তার জীবনীশক্তি হল সমালোচনা। লোহাকে নতুন রুপ দিতে গেলে তাপ দিতে হয় তবে এত তাপ নয় যাতে তা আবার বাষ্প হয়ে যায়। একজন কবিকে আগে যোগ্য সমালোচনা নিতে হবে। সবার আগে তো তিনি একজন দার্শনিক, নিজের দর্শনের প্রতিফলন রুপটা তো কবিতায় ধরা চাই নাকি? হ্যা, এটা বলছি না যে বহু বিচিত্র ভ্রমন থাকাটা দোষের, তবে সামগ্রিক অর্থে কবির দার্শনিক জগৎ না থাকাটা মোটেও প্রকৃত কবির পরিচয় না।
আপনি এক এক জন কবির বেশ কিছু কবিতা পড়ে তাঁর মনস্ত্ব ও দর্শন বুঝতে চেস্টা করুন, দেখবেন কয়জন কবির সেটা পান।
বেশিরভাগ কবিই খুব সস্তা আবেগের প্রকাশ ঘটাতেই ব্যস্ত, তার একটা বড় কারন যোগ্য পাঠকের ভুমিকার অভাব। কবি যদি চিন্তাশীল পাঠক তৈরি করতে পারেন তাহলে সেই পাঠকই একদিন কবির কাছ থেকে সৃষ্টিশীল লেখা আদায় করে নিবেন। কবির মধ্যে যেমন পাঠককে তার নতুন সৃষ্টির সাথে পরিচয় করাবার ব্যাকুলতা থাকে তেমনি পাঠকের ও একটা আকাঙখা থাকে কবির থেকে নতুন কিছু পাওয়ার, এর ব্যাতিক্রম হলে বন্ধ্যাত্ব তৈরি হয়। অপসৃষ্টি রুচির বিকৃতি ঘটায়। আর মহ্ৎ সৃষ্টিতে থাকে সত্য ও সুন্দর।
ভাল থাকবেন।