সেই অচেনা লোকটি-
বাবা হয়ে এসেছিলে সুদূর প্রবাস থেকে,
বয়স কতই বা তখন আমার!
তখন বুঝিনি এভাবে মনে ও প্রাণে,
বাবা মানে ভালোবাসার অপার আধার।
আমার লেখা প্রথম চিঠিখানি-
বার বার পড়েছ তুমি,
রেখেছ পরম যতনে, যেন অমূল্য সে ধন,
তখনো বুঝিনি এভাবে বাবা-ছেলের মানে;
এ যে এক অবিচ্ছেদ্য মমতার বাধন।
আমার কন্ঠ-
ফোন এর ওপাশ থেকে শুনতে চাইতে বার বার,
যেন তা অতি সুমধুর,
তখনো বুঝিনি বাবা তোমার মানে,
বুঝিনি বাবা-ছেলের দূরত্ব কতটা বেদনা বিধূর।
মাথা ব্যথায় যখন কাতর আমি-
ভালোবাসায় হাতের পরশ বুলাতে এমন,
যেন ব্যথায় কাতর হতে তুমিও সাথে,
তখনো বুঝিনি এভাবে বাবার আদর সে কী;
এ যে মহৌষধ আমার যাতনা ভরা পৃথিবীতে।
নতুন জামা গায়ে যখন পরিপাটি আমি-
দেখতে আমায় অপলক দৃষ্টিতে
যেন এক অদ্ভূত প্রশান্তি,
বুঝিনি সেদিন তোমার সুখের মানে,
সে যে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ছেলের প্রতি।
সুদূরে পড়তে গিয়ে যখন আমি রোগ শয্যায়-
কেঁদেছ তুমি অবিরাম, ফিরে পেতে চেয়েছ আমায় পাশে,
যেন কখনো আমার অসুখ হবার নয়!
বুঝতে পারিনি সেদিন তোমার অনুভূতি,
সে যে কত কষ্ট আপন হারানোর ভয়।
সিএ'র ভর্তি পরীক্ষায়-
সাথে নিয়ে গিয়েছ সেদিন আমায়, খুঁজে দিয়েছ ঠিকানা,
যেন তখনো আমি ছোট্ট বাবুর মতন,
দেখিনি সেদিন তোমার মনের আড়ালে তাকিয়ে,
ছেলের সময় তোমার কাছে কতটা অমূল্য রতন।
বাবা আমি বুঝিনি সেদিন তোমার কিছুই,
তোমার ভালোবাসা, তোমার আদর,
বুঝিনি তোমার বুকের গভীর লুকিয়ে রাখা অবুঝ ভাষা;
প্রতিদান তার দিইনি কিছুই
পূরন করিনি আমাকে নিয়ে তোমার কোন আশা।
বাবা তুমি যেদিন ছেড়ে গেলে আমায়-
ঠেলে দিলে দূরে,
যেদিন ফেলে গেলে কঠিন পৃথিবীর গহীন তলে
আমি বুঝেছি তোমায় গভীর ভাবে,
বুঝেছি সেদিন আমার জীবনে বাবা তুমি কী ছিলে।
বাবা অনেক কেঁদেছি আমি-
অনেক খুঁজেছি উপায় কী করে তোমায় ফিরে পাই!
বাবা আমি ব্যর্থ, শুধু পারি ভেজা চোখে দাঁড়াতে তোমার পাশে,
বলতে পারি, বাবা ক্ষমা কর আমায়,
ভাল থাক তোমার অন্তিম শয্যায়।