মাগো!?
ওরা কি আমায় বাঁচতে দেবে না!?
নয় মাস বড্ড বেশি সময় মা,
নরপিশাচের শিবিরে বন্দী এক হতভাগিনী।
দুমড়ে নিজের মধ্যে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি।
খান সেনাদের হিংস্র থাবায় বিবস্ত্র করেছে সেই কবেই!
এখন কেবল খুবলে খাওয়ার ধুম।
শরীরটাকে আর পবিত্র বলে মনে হচ্ছে না মা।
নয় মাস ধরে যেমন মায়েরা প্রসব বেদনায় ছটফট করে?
আমরা প্রতিদিন তেমনই যন্ত্রণায় ঘৃণায় প্রহর গুনছি।
কবে!? কবে এ দেশের বুকে উড়বে স্বাধীন একটা পতাকা!?
কবে মুক্তি পাবো এই নরক যন্ত্রণা থেকে!?
নিজেদের শরীরটাকে নিজেদেরই ঘেন্না হচ্ছে!
মাগো ওরা এই শরীরটাকে খুবলে খাচ্ছে ক্ষিপ্ত রাক্ষসের মতো!
আর ছিন্নভিন্ন করছে নরম চামড়ার প্রলেপ!!
মাগো ওরা তোমার মেয়ের শরীর থেকে খুলে নিয়েছে বস্ত্র,
তোমার শাড়ীর আচঁল ধরে হেঁচকা টানে খুলে ফেলার চেষ্টা
করছ তোমার গায়ের বসন।
কিন্তু না তোমার সন্তানেরা এখনো,
এখনো জীবিত, এক বিন্দু রক্ত শরীরে অবশিষ্ট থাকতে
তোমাকে বিবস্ত্র হতে দেবে না তোমার সন্তানেরা!!
মাগো তোমার বুকে স্তনে শরীরে খান সেনাদের নখের আচঁড়ে
হওয়া ক্ষত চিহ্ন গুলো, আমার এবং আমাদের শরীরে আগুন
জ্বালছে, এই আগুনে ভস্ম হবেই জিন্না'র পেয়াদারা!!
ওরা ইসলামের দোহাই দিচ্ছে!? কলেমা পরীক্ষা করছে!?
কিন্তু ইসলামতো কাউকে ধর্ষণ করার অনুমতি দেয়নি?
দেয়নি অসহায় ভিন্নধর্মী মানুষদের সম্পদ সম্ভ্রম লোটার অধিকার!?
তোমার কিছু কুলাঙ্গার সন্তানেরা খান সেনাদের সাহায্য করছে,
দিয়েছে আমার এবং আমার মতো আরো সহস্র নারীর সন্ধান!
তোমার সাথে করেছে বিশ্বাসঘাতকতা!
আল্লাহও এদের ক্ষমা করবে না মা, কক্ষনও না!
মাগো আজ ডিসেম্বরের পনেরো,
ছয় মাস ধরে লোলুপ কুত্তা গুলোর বিভৎস অত্যাচারে
যোনিটা আমার পচে গেছে,
যন্ত্রণায় ব্যথায় টনটন বুকের দুটো মাংসপিণ্ড!
একি! কিসের যেনো শব্দ পাচ্ছি!!
কারা যেনো উল্লাসে ছুটে আসছে শিবিরের দিকে!
ভেঙেচুরে মুক্ত করলো আমি সহো আরো ধর্ষিতা নারীদের,
বিবস্ত্র শরীর ঢাকতে দেয়া হলো যথাসম্ভব কাপর!
দূরে আকাশে দেখতে পেলাম দপদপ করে উড়ছে
সবুজের বুকে টকটকে লাল সূর্য খচিত একটা পতাকা!
মাগো তুমি বুঝি আজ শত্রু মুক্ত হলে!?
নয় মাসের প্রসব যন্ত্রণার পরে...... ফেলো স্বস্তির নিঃশ্বাস!
কান পেতে শোনো “জয় বাংলা” ধ্বনি!  আহ কি প্রশান্তি!
তোমার সাহসী সন্তানেরা কি জানি ঘোষণা করছে মা!!
কি বলছে ওরা!? “এরা ধর্ষিতা নয়, এরা বীরাঙ্গনা”
আমাদের কথা বলছে!? তবে কি কলঙ্কের বোঝা বইতে হবেনা বাকি জীবন!
আমার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে মা!
আমি ধর্ষিতা নই!! আমি বীরাঙ্গনা।।

নোটঃ আবৃত্তির সুবিধার্থে বিরাম চিহ্নের এরূপ ব্যবহার।

©আমি বীরাঙ্গনা
০৮-১২-২০২০ ইংরেজি
মঠবাড়ীয়া, পিরোজপুর, বরিশাল।