"বিদেশ ফেরত পাত্র রে ভাই,স্বভাব অনেক ভালো।
চুল কিছুটা কম বটে তার,রঙটা ঈষৎ কালো।
এটা কোন ব্যাপার নাতো,আসল দেখ কামাই।
কপাল লাগে, ভাগ্যি লাগে, পেতে এমন জামাই।"
দাঁতের ফাঁকে খিলাল চালাই, মুচকি হাসে ঘটক।
শাদীর আঞ্জাম শুরু কর,সাজাও বাড়ীর ফটক।
হোসেন মাঝির খুশির রেখা,হঠাৎ গেল মিলে।
মেয়েটার সুখ কিসে হবে,কি জানি কি দিলে!
শঙ্কা নিয়ে, শুকনা গলায় বলে,"ঘটক ভাই,
আমিতো ভাই গরীব মাঝি,সাধের সাধ্যি নাই।"
খিলখিলিয়ে ঘটক কহে,"চিন্তা কেন পাছে?
পাত্র পক্ষ চায়না কিছুই, ওদের অনেক আছে।
তিন ভরিতে গা সাজাবে,কাপড় দিবে ছয়।
চায়নি বলে,খালিই যাবে,তা কি করে হয়!
চার পদের ঘরের জিনিস হাঁড়ি-পাতিল সাথে,
স্বপ্না মায়ের ও বাড়িতে মান বাড়বে তাতে।
মেয়ের খুশি আগে, মিঞা, বেচ ঘরের তলা
জোর-জুলুমি করছিনা ভাই,আপন বলেই বলা।"
নাও আর বাড়ি বন্ধকী দেয়,মেয়ের খুশি আগে
চোখের কোণে বিদায়-অশ্রু, সুখের খোয়াব জাগে।
বিদায়কালে বাপের বুকে অশ্রু দিয়ে ছাড়ি
বলে," বাজান, আইস কিন্তু, আমার শ্বশুর বাড়ি।"
দিন দশেক তার ঘোরে কাটে পেয়ে, স্বামীর সোহাগ।
একাদশেই উঠল বেজে, দু:খের করুণ বেহাগ।
জামাই বলে," সব ফুরাল, করতে গিয়ে বিয়ে।
হাজার তিরিশ ধার আননা,বাপের বাড়ি গিয়ে।"
বাপের বাড়ি এল মেয়ে, দুরু-দুরু বুক কাঁপে।
ভিটে-বাড়ি সব আগেই গেছে,কন্যা সুখের চাপে।
সব শুনে সে মেয়েরে কয়,"আমিতো মা আছি,
দুধেল গাইটা কসাইর কাছে দিব নাহয় বেচি।"
টাকা দিয়ে স্বপ্না ভাবে, স্বামীর সোহাগ পাবে!
পাষাণ সাথী ভাবে কখন আরো টাকা পাবে।
মধুর ঝাঁজে ডাক দিয়ে কয়," যাওনা বাপের বাড়ি।
বিদেশ গিয়ে পাঠাব সব টাকা কাড়ি-কাড়ি।"
স্বামীর আদেশ! গাঁয়ে গেল, শঙ্কা মনে জাগে।
হোসেন মাঝি দেনার দায়ে গাঁও ছেড়েছে আগে।
খালি হাতে ফেরত কেন ? জামাই ভীষণ রাগে।
শ্বশুর বাড়ির লোকগুলো সব,কথার কামান দাগে।
উঠলি কেন? বসলি কেন? মুখটা কেন কালা?
কথায় কথায় স্বপ্না সহে অত্যাচারের জ্বালা।
গরীব ঘরে জন্ম তাই,স্বপ্না ছাড়ে শ্বাস।
পরের ভোরে,দেখে সবাই ঝুলছিল তার লাশ।
২৭/০৪/২০১৯