চলে গেল অনেক বছর
বাতাসে পাল তুলে,
জলের গন্ধে বিজন বনে
গানেতে সুর দোলে।
কত বধূ করলাম পার
পাড়ের রঙে আলো,
ছড়িয়ে গেছে কুসুম কলি
মেঘ ছুঁয়েছে পালও।
বৈঠা জুড়ে বৃষ্টি প্রণয়
শাপলা বিলের ঢেউ,
ধানের শীষে পরশ বোলায়
হৃদয়পুরের কেউ।
এখন আমার বৈঠা ভাসে
দূর গগণের মেঘে,
নৌকা ভাসে গহীণ বিলে
স্রোতের ধারায় জেগে।
কিশোর বধূর চোখ দেখেছি
ফেলে আসা স্মৃতি,
বিলের ফোটা পদ্ম ফুলে
ভ্রমর বসা রীতি।
বয়স বিকেল সন্ধ্যা আনে
অনেক গেছে রাতি,
ডিঙি জুড়ে অন্ধকারে
জোনাক জ্বালায় বাতি।
রাত-দুপুরে বিলের জলে
একলা ভাসি একা,
জমা আছে বহু কথা
যেদিন হবে দেখা।
পাল তুলেছে জীবনতরী
তাল তুলেছি তাতে,
কেউ আসে না কেউ আসে না
হাট ভাঙা খুব রাতে।
এখন শুধু সদূর দেখি
হাল ধরেছি নীড়ে,
এদিক ওদিক নৌকা ছোটে
পাল গিয়েছে ছিড়ে।
ছেঁড়া পালে বাতাস আসে
যায় না ছোটে আর,
ঘাটের পাড়ে বসে ভাবি
কবে হবো পার।
উড়ে আসে ময়ূরপঙ্খী
বুকে পেখম তুলে,
ঘাটের জলে বরষা আসে
হিজল বনের ফুলে।
ডুবে গেলাম যুগের জলে
সূর্য ডোবার ক্ষণে,
দু'মুঠো জল হিজল পাতায়
কে বা রাখে মনে।
মাঝি আমি ছিলাম মাঝি
হবো আবার তাই,
জন্ম যদি জলেই তবে
জল পুড়ে হোক ছাই।