https://dupurmitra.wordpress.com/2014/07/26/%e0%a6%a6%e0%a7%81%e0%a6%aa%e0%a7%81%e0%a6%b0-%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ab%e0%a7%8d%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%ab-%e0%a6%95%e0%a6%ac%e0%a6%bf/

দুপুর মিত্রের ফ্লারফ কবিতা ( flarf poetry by Dupur Mitra in Bangla)


ফ্লারফ কবিতা
১।

ওমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমম
মানে চুম্বনের শব্দ নয়
আপনার হয়ত জিহ্বায় পানি চলে এসেছে
আপনি অবশ্য মেয়ে হলে সমস্যা নাই
ওমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমমম
এর মানে
এর মান্নে
ভেঙে পড়ে
পড়তে পড়তে
পড়তে পড়তে
কোকা কো……………..লা
দূষিত কোলা খাও
আর বিশুদ্ধ জলে পুটু পরিস্কার করে যাও।

ফ্লারফ কবিতা

২। প্রায়ই আমি আমাকে ফেসবুকে দেখি
দেখি সে কি করে
কেমন করে হাসে
কথা বলে
কি নিয়ে কথা বলে
তার এখনও কোনও প্রেমিকা হল কিনা
নাকি সে একাই থাকে

কখনো কখনও আবার আমি নিজেকে গুগলে সার্চ করি
দেখি কোথায় কোথায় আমি পড়ে আছি
কোথায় আমার ছবি পড়ে আছে
কোথায় পড়ে আছে আমার লেখা
অথবা কোথাও কেউ হয়ত আমাকে নিয়ে টানাহিঁচড়ে করছে
বির রা……ট একটা ব্যাপার
কতজন আমাকে কেন্দ্র করে কত কিছু নিয়ে বলছে
আমি চুপচাপ গুগলের সুড়ঙ্গ দিয়ে আমাকে দেখছি
আর মানুষদের

তারপর আমি ঘুম থেকে উঠে পড়ি
কম্পিউটার চালাতেই টের পেলাম
মাকড়সার মত অসংখ্য জাল আমিও ছড়িয়ে রেখেছি
কেউ এই জালে জড়িয়ে গেলে
পুরো জালটিই কেঁপে উঠে
তাই আমিও নড়ে উঠি
মানে টের পেয়ে যাই
কে জড়াল জালে
কে দেখতে এল তার মুখ মুখোশের অন্তরালে।

ফ্লারফ কবিতা

৩।

যারা সফ্টওয়্যার তৈরি করে
তারা এমন সফ্টওয়্যারও তৈরি করে
যা ভাইরাস
ভাইরাস এই কারনে যে
ওই সফ্টওয়্যারটি
একটা থেকে দুইটা
দুইটা থেকে চারটা
চারটা থেকে আটটা
এভাবে বাড়তেই থাকে
আর কারও কম্পিউটার থেকে
কোনও কোনও ভাইরাস নিয়ে যেতে থাকে
যা কিছু গোপন

আমি ভাইরাস তৈরি করি না
তবে আমি কীবোর্ডে ব্যাকটেরিয়া ছড়াই
ব্যাকটেরিয়াটি তোমার চিন্তার দুধ নষ্ট করে দেয়
একেবারে নষ্ট করে না
যাতে তুমি সেই দুধ থেকে ছানা বানাতে পার
ব্যাকটেরিয়াটি তোমার পঁচে যাওয়া মগজটিকে আরও পচতে সাহায্য করে
যাতে সেখান থেকে তৈরি হতে পারে সার
যেখানে অনায়াসেই জন্মাতে পারে আরও সবুজ প্রাণ

ফ্লারফ কবিতা

৪।

ওএমজি
বৃষ্টির ফোঁটা দেখলেই
তোমার ক্লাইটোরিসের কথা মনে পড়ে
মনে পড়ে এটিই তোমার একমাত্র অঙ্গ
যেখানে নারীবাদ ঘোটকীর মত উত্তেজনায় কাঁপতে থাকে

ওএমজি
আমি তোমার সেই তীব্র শীৎকারকেও স্বাগত জানাই
স্বাগত জানাই সেইসব যৌনমিছিলকে
যেখানে ফাক আমেরিকা ফাক আমেরিকা বলে তুমি
বিশ্ববিখ্যাত পর্নস্টার হয়ে উঠেছিলে

ওএমজি
আমি তোমার সেই চোখকে স্পর্শ করতে চাই
যা সবকিছুকেই দেখে
এবং আমার বিশ্বাস
বিখ্যাতদের কান্না কেউ দেখতে পারে না।

ফ্লারফ কবিতা

৫।

কবিতা হাসতে পারে না
ব্লা ব্লা ব্লা

কবিতা কথা বলতে পারে না
ব্লা ব্লা ব্লা

কবিতা প্রেম করতে পারে না
ব্লা ব্লা ব্লা

কবিতা আগের মত হাসে না
ব্লা ব্লা ব্লা

কবিতা আগের মত কথা বলতে পারে না
ব্লা ব্লা ব্লা

কবিতা আগের মত প্রেম করতে পারে না
ব্লা ব্লা ব্লা

কবিতার কোনো অর্থ নেই
ব্লা ব্লা ব্লা

কবিতার কোনো হাসি নেই
ব্লা ব্লা ব্লা

কবিতার কোনো প্রান নেই
ব্লা ব্লা ব্লা

আগের কবিতা এখন নেই
ব্লা ব্লা ব্লা

এখনকার কবিতা কোথায় জানে নেই
ব্লা ব্লা ব্লা

কবিতাও নেই প্রেমিকাও নেই
ব্লা ব্লা ব্লা

চল তবে মরি কবিতার দিকে চেয়ে
ব্লা ব্লা ব্লা

চল তবে মরি কবিতাকে না পেয়ে
ব্লা ব্লা ব্লা

ফ্লারফ কবিতা

৬।

কতদিন চুপ করে বসে থাকতাম
দেখতাম
কিভাবে ছবি তুলে
মনে হত যিনি ছবির কারিগর
তার হাতে কত যাদুই না আছে
তাই সুন্দর হয়ে উঠে ছবি
কখনো কখনো ছবির কারিগরকে
বেশি বেশি টাকাও দেওয়া হয়
যেন সে ছবিটি ভাল করে তুলে
যেন তার তোলা ছবিটিই এমন কিছু হয়
যা নাম লেখাবে ইতিহাসে
কাউকে কাউকে দেখেছি
ছবির কারিগরের সাথে বিশেষ খাতির রাখতে
হুরররররেরেরেরেরেরেরেররেররেরেররেরের
হুরররররেরেরেরেরেরেরেররেররেরেররেরের
এখন তুমিই আমার ছবি তুলি
দিনে একশতবার
দিনে একহাজার বার
দিনে এক লক্ষ বার
তুমি নিজেই ছবি তোলার কারিগর
তুমিই সেলফি
তোমার আর কারও সাথে খাতির রাখতে হবে না
বেশি টাকা দিতে হবে না
তুমি নিজেই তোমার নাম লেখাবে ইতিহাসে
আহা সেলফি
তোমার বিজয় তাহলে একাকী
তোমার একাকী বিজয়ই
তাহলে ডুকরে কেঁদে ওঠে একাকী

ফ্লারফ কবিতা

৭।

তুমি দুই ইঞ্চি হাসো
দুই ইঞ্চি কথা বল
দুই ইঞ্চি ফিরে তাকাও

তারপর তুমি চলে যাও

রোড নং ২/৪, বাড়ি নং ৪০
মাধবপুর শেরপুর টাউন শেরপুর

তুমি কিছু একটা আবিস্কার করে
সারারাত চিৎকার করলে
ইয়াহুহুউউউউউউউউউউউউউউউ
ইয়াহুহুউউউউউউউউউউউউউউউ

তখন তোমার পূর্বাপাশে সেই আবিস্কার মানুষ ব্যবহার করতে শুরু করেছে
আর পশ্চিমপাশ এসবের কিছুই জানে না

তুমি দুই ইঞ্চি হাসো
দুই ইঞ্চি কথা বল
দুই ইঞ্চি ফিরে তাকাও
তখন টিভিতে বিজ্ঞাপন দেখাচ্ছিল
একটি জিনিস কিনলে ১০০টি এসিড ফ্রি
আর ৯৯ ভাগ মানুষ মনে করে
যারা ডাকাতি করে সুন্দর ভাবে জনগণের সামনে এসে বলে এটা তাদের
তখন সেসব তাদেরই হয়ে যায়
এবং ৯৯ ভাগ মানুষ তাই করত

ইয়াহুহুউউউউউউউউউউউউউউউ
ইয়াহুহুউউউউউউউউউউউউউউউ

একটি বেবি ফুডের সাথে ১০০টি এসিড ফ্রি
একটি রং ফর্সাকারী ক্রিমের সাথে ১০০টি এসিড ফ্রি
একটি ভালবাসার সাথে ১০০টি এসিড ফ্রি

তারপর তুমি চলে যাও

রোড নং ২/৪, বাড়ি নং ৪০
মাধবপুর শেরপুর টাউন শেরপুর

ফ্লারফ কবিতা

৮।

কে তুমি জানি না
তুমি ছেলে না মেয়ে তাও জানি না
আমার চোখের সামনে কম্পিউটার স্ক্রিনে ভেসে ওঠা ছবিটাই সত্য
অন্য কিছু নয়
তাই অন্য কিছু জানার দরকার নেই

আর তুমি কিভাবে কথা বল
তোমার গলার স্বর কেমন
রুক্ষ্ম না সুরেলা সেটারও জানার দরকার নেই

কারন তোমার কথাগুলো বিভিন্ন ফন্টে ভাসছে আমার চোখের সামনে
আমি সেসব কথা পরিস্কার শুনতে পাই

তুমি যখন shift key চেপে ধরে কথা বল
আমি বুঝতে পারি এই কথাটি তুমি জোর দিয়ে বলছ

আমি তাই তোমার ঠোঁটের ওপর
তোমার স্তনের ওপর
স্তনের বোটার ওপর
ক্লাইটোরিসের ওপর
কারসর নিয়ে যাই

কারসর দিয়ে তোমার ঠোঁট, স্তন, স্তনের বোঁটা, ক্লাইটোরিস
একবার বড় করি
আরেকবার ছোট করে দেখি
দেখি সত্যি আমার ভেতরে কেমন এক অনুভূতি তৈরি হচ্ছে

তুমি যেইই হও
বা তুমি যদি কেউ নাওও হও
এই মুহূর্তে তোমার ছবিটি আমার কাছে জীবন্ত আর অদ্ভুত সুন্দর
আমার ভেতরে শুধু যৌনতা নয় প্রেমও অনুভূত হচ্ছে
যেমন সঙ্গমের পর কেউ কেউ একে অন্যকে দীর্ঘক্ষণ আদর দিতে থাকে

তোমার পাঠানো টেক্সটগুলোকেও কেমন শীৎকারের মত মনে হচ্ছিল
যখন তুমি space bar এ চাপ দাও
মনে হয় এই বুঝি শব্দটি আহ্লাদে গোঙাতে লাগল
আর যখন তুমি Enter এ চাপ দাও
মনে হয় তুমি আনন্দে হেসে ওঠছ
আনন্দে চিৎকার করে ওঠছ

আমি তাই Delete বাটনের দিকে তাকাই না
মনে হয় যা হচ্ছে
যেভাবে আমরা প্রতিদিন ভাসছি প্রেম আর সঙ্গমে
তাতে তোমার ফেইক হওয়ার কোনও সুযোগ নাই।

ফ্লারফ কবিতা

৯।

কম্পিউটারের স্ক্রিন যখন কালো হয়ে যায়
তখন কী বোর্ড দিয়ে মনে হয়
আমি অসংখ্য অন্ধকার কম্পিউটারের ভেতর ঢুকিয়ে দিয়েছি
অন্ধকার স্ক্রিনের ভেতর তাই আমি কী বোর্ড দিয়ে লিখে চলি

একটি গ্রহ থেকে আরেকটি গ্রহ বা উপগ্রহ বা নক্ষত্রের যে ফাকা জায়গা
তাকে বলে মহাকাশ
আর এই মহাকাশের যা কিছু পদার্থ তাই মহাবিশ্ব
আমার মনে হয় অন্ধকারের ভেতর
আমি সেই মহাকাশে ঢুকে পড়েছি
আর ছায়াপথ ধরে ঘুরছি
যেমন গ্রহ,উপগ্রহ কাউকে কেন্দ্র করে ছায়াপথে ঘুরে
কিন্তু আমার কেন্দ্র কে
কাকে কেন্দ্র করে আমার আবর্তন
মহাকাশের ছায়াপথে থেমে থাকা যায় না
আমি যাই ভাবি না কেন
যাই করি না কেন
চুপ করে দাঁড়িয়ে বা বসে থাকি না কেন
বস্তু বা আমি আসলে কাউকে না কাউকে কেন্দ্র করে ঘুরবই
কাজেই তুমিই কিনা জানি না
কাউকে কেন্দ্র করে আমি ঘুরছি
এখনকার মত এইই সত্য।

ফ্লারফ কবিতা

১০।

Backspace দিয়ে কি আর অতীত মোছা যায়

আমি হয়ত যে শব্দটা লিখেছি
বা যে বাক্যটা
তা Backspace দিয়ে মুছে অন্য আরেকটা শব্দ বা বাক্য লিখতে পারি

কিন্তু Backspace দিয়ে কি আর অতীত মোছা যায়

এই যে ধর
তুমি হয়ত সময় কাটানোর জন্য আমার সাথে প্রেমের অভিনয় করেছ
ভেবেছ তোমার বাবা তো তোমার সাথে অনেক ধনী বরের কথা বলেই রেখেছে
বা ভেবেছ ধনী বরের সাথে তো তুমি আমেরিকা বা অষ্ট্রেলিয়া চলেই যাবে
বা ধনী বর তোমাকে যা দেবে
তাতে এইসব অতীত পুড়ে নাই হয়ে যাবে

কিন্তু তা কি হয়

Backspace দিয়ে কি আর অতীত মোছা যায়

আমাদের ঘুরে বেড়ানো
হাতে হাত ধরে বসে থাকা
দুজনেরই প্রথম চুম্বন
দুজনেরই প্রথম সঙ্গম

Backspace দিয়ে কি এইসব মুছে দেওয়া যাবে
যাবে না
যায় না

কারণ জীবন সফটওয়্যার নয়

ফ্লারফ কবিতা

১১।

আগে আমি প্রায়ই গুগলে সার্চ করতাম
কিভাবে কোটিপতি হওয়া যায়
কিভাবে ভাল ক্যারিয়ার করা যায়
কিভাবে ভাল হাজবেন্ড হওয়া যায়
কিভাবে ভাল বাবা হওয়া যায়

দেখতাম এক এক জায়গায়
অজস্র নানা ধরনের নানা কিছু লেখা আছে
আমি একটি একটি করে সেসব মনে মনে পালন করার চেষ্টা করতাম
কিছু কিছু কথা বেশ ভালই মিলে যেত
ঠিকই ছিল
আবার কিছু কিছু কথা মিলত না
এমনকি বিপরীত কিছুই ঘটতে পারত

এখন আমার টাকা পয়সার দরকার
দিনে ৫০০ টাকা হলেই আমার চলবে
এখান থেকে দিনে ৫০ কি ১০০ টাকা বউয়ের হাতে দিতে পারব
সঞ্চয়ের জন্যে

আমি গুগলে সার্চ করলাম
দিনে ৫০০ কেন আরও বেশি টাকা কামানোর কথা কৌশল সেখানে লেখা আছে
কিন্তু কোনোটাই কেমন যেন যুতসই নয়
একটা হলে থাকে না আরেকটা
শেষমেষ এসবে ৫০০ টাকা কেন
দিনে ১০০ টাকাও আমার হল না
সত্যি দিনে ৫০০ টাকা কামানো সহজ না
পৃথিবীর কোথাও এমন টাকা কামানোর সঠিক কৌশল নেই
লেখা নেই
এমনকি গুগল সার্চ ইঞ্জিনেও নেই

আমি টাকা কামানোর কথা বাদ দিয়ে
পৃথিবীর থেকে মুখ সরিয়ে
ফ্রি ওয়েব হোস্টিং এর কথা ভাবছি

ফ্লারফ কবিতা

১২। আমরা যখন স্কাইপেতে বসে কথা বলি
কয়েক ঘণ্টা ধরে
বা কখনও বা প্রায় একদিন ধরেই
তুমি আমেরিকায়
আর আমি হয়ত বাংলাদেশের কোনো এক বনে
আমাদের সত্যিই কোনও দূরত্ব থাকে না
ল্যাপটপের স্ক্রিনে তুমি সবসময়ই জীবন্ত
ঠিক ওই প্রান্তে তোমার ল্যাপটপে আমি
আমি কি করছি না করছি সবকিছুই তুমি দেখতে পাচ্ছ
এক সেকেন্ডেরও দূরত্ব নেই আমাদের

কিন্তু তুমি কি আমার চোখ দেখতে পাচ্ছ
সেটা লাল হয়ে আছে কিনা
পারছ না

তোমার ল্যাপটপে তুমি সুদূর আমেরিকা থেকে
আমার অনেক খোঁজ-খবরই নিচ্ছ
কিন্তু যেসব কথা আমি বলি না তুমি উদ্বিগ্ন হয়ে যাবে বলে
তুমি হয়ত কয়েকবার জিজ্ঞেসও কর
তোমার শরীর কেমন
আর আমি অকপটে বলে দিই ভালো
যা আমি আড়াল করতে চাচ্ছি
তা কখনই তুমি ধরতে পারবে না
জোর দিয়ে বলতে পারবে না
তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন
চোখ লাল কেন
শুয়ে পড়
বিশ্রাম কর
বা তুমি আমার মাথা তোমার কুলে রাখবে না
মাথাটা কুলে রেখে তুমি আমার চুলগুলো হাতড়িয়ে দেবে না

কারণ তুমি আমেরিকায় আমি বাংলাদেশে
স্কাইপে আমাদের দূরত্ব কমিয়েছে
কিন্তু ভালবাসা থেকে গেছে আড়ালেই
ফ্লারফ কবিতা

১৩। আমি সারাদিন লগ ইন করে থাকি
যাতে তুমি বুঝতে পার
আমি সারাদিন তোমার সাথেই আছি

তোমার কানের পাশে
তোমার চোখের সামনে
তোমার হৃদয় ঘেঁষে

সাইটের পর সাইট ঘুরে ঘুরে তোমার কাছে এসে থামছি
তোমাকে হায় বলছি

আমি সারাদিন সাইন ইন করে থাকি এই কারনেও
যে আমাকে তোমার মনে পড়ার সাথে সাথেই যেন
আমাকে তুমি পেয়ে যাও

কখন তোমার যে আমাকে মনে পড়ে
সাইন ইন করে বসে থাকি
যাতে তুমি বুঝতে পার আমি অন লাইনেই আছি
যাতে তুমি বুঝতে পার
তোমার সাথে কথা বলার জন্য
তোমার সাথে খুনসুঁটি করার জন্য
উদগ্রীব হয়ে বসে আছি আমি

আমার লগ ইন করে বসে থাকা
আমার সাইন ইন করে বসে থাকা
মূলত তোমাকে লক্ষ্য করেই
অন্য কোনও কারনে নয়
যেমন ব্রাউজিংয়ের চাকাটি ঘুরতে থাকে
সাইটটি চোখের সামনে ভেসে ওঠার জন্যই

ফ্লারফ কবিতা

১৪। আমি জানি না
গোপনে কে কোন আইডি থেকে আমাকে
ডেকে যাচ্ছে
বলছে এখানেই বিপ্লবের শুরু
বিপ্লবের সমস্ত পরিস্থিতি বিদ্যমান
রণনীতিও ঠিকঠাক
এখন কেবল রণে যাবার পালা
বলছে বিপ্লবই সব
আমরা আপনাকে চিনি

কিন্তু আমি তাদের চিনি না
এমন করে বিপ্লবের কথা কেউ আমাকে বলেনি
এমন করে বিপ্লবের ঝাঁপ দেবার আহ্বান কেউ দেবে
আমি কল্পনাও করিনি

এক এক দিন এক একটি আইডি থেকে
আমাকে ওরা অবিরাম বিপ্লবের কথা বলে
আর বলে আমাদের আপনি চিনবেন না
আমরা কাউকে আমাদের পরিচয় দেই না
আমাদের কিছু ধাপ আছে
সেসব ধাপ পেরুলেই আমরা কেউ কেউ আমাদের পরিচয় দেই
কিন্তু অনেককে কখনই দেখাই হয় না
কারন আমাদের বিপ্লব শুরু হয়ে গেছে
আর আমাদের শত্রু এখন অনেক

আমি এমন আইডির কথা ভাবিনি
ভাবিনি এমন আইডি যাকে আমি কখনই চিনব না
কিন্তু সে বিপ্লবের কথা বলে যাবে
কিন্তু সে মুক্তির কথা বলে যাবে

আর আমারও কেবল সমস্যা হয়
কেবল ধন্দ লাগে
আতকে ওঠি
বাস্তবে কেউ যখন বিপ্লব নিয়ে কথা বলে
মার্কসবাদ নিয়ে কথা বলে
শ্রেনি সংগ্রাম, লেনিন-মাওবাদ নিয়ে কথা বলে
মনে হয় সেইই বোধহয় সেই ফেক আইডি
যে আড়ালে থেকে আমাকে তাদের বিপ্লবে যোগ দিতে বলছে

আমার ভয় লাগে
আমার গা শিউরে ওঠে
আমি এমন বিপ্লবের কথা ভাবিনি
যেখানে আমাকে লুকিয়ে থাকতে হবে
লুকিয়ে লুকিয়ে আড়ারে থেকে
যুদ্ধ করতে হবে পুলিশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে

এমন বিপ্লব আমার ভাললাগে না
ভাললাগে না ফেক আইডিগুলোও।
ফ্লারফ কবিতা

১৫। ক্যামেরায় বন্দী আর ওয়েবে বন্দী এক কথা নয়

ক্যামেরায় যখন নিজেকে কেউ বন্দী করে
তখন হয়ত এক সেকেন্ডের জন্য
এক সেকেন্ড সময়কে
যে সময়ে সে হেসে ওঠেছিল
বা এমন কোনও ঘটনা ঘটেছিল
যা বন্দী রাখা হলে
সে বন্দী অবস্থা দেখে আনন্দ পায়

কিন্তু ওয়েবে বন্দী

ওয়েবে তো কেউ এক সেকেন্ডের জন্য বন্দী হয় না
ঘণ্টার পর ঘণ্টা
দিনের পর দিন
বছরের পর বছর
বা সারাটা জীবনই হয়ত কেউ কেউ বন্দী করে রাখে ওয়েবে

ক্যামেরার মত ওয়েবেও হয়ত সে দেখে
এক মাস পর
এক বছর পর
এক যুগ পর
বা অনেক অনেক পর

কিন্তু ক্যামেরায় নিজের বন্দীত্ব দেখে যেভাবে মানুষ
হেসে ওঠে
কেঁদে ওঠে
প্রাণ খুঁজে পায়

ওয়েবে সেভাবে দেখে সে কি হেসে ওঠে
কেঁদে ওঠে
প্রাণ খুঁজে পায়

আমার ধারনা পায় না
কারন এক সেকেন্ড আর অনেক বছর এক জিনিস নয়
এক জিনিস নয় ক্যামেরা আর ওয়েব
এক জিনিস নয় মানুষের এক সেকেন্ডের বন্দীত্ব
আর অনেক অনেক সময়ের বন্দীত্ব

ফ্লারফ কবিতা

১৬। গত রাতে আমি একটি অদ্ভুত মোবাইল নম্বর পাই
কোনো মোবাইল কোম্পানিতেই এরকম নম্বর নেই
আমি ইচ্ছে করে
আসলে এমনিতেই মোবাইল নম্বরটিতে কল করার চেষ্টা করি
এবং এটা অবিশ্বাস্য হলেও সত্য
মোবাইল নম্বরটিতে আমার কল ঢুকে যায়

একজন নিখুত বাংলা ভাষায় কথা বলছিল
এবং বলছিল তুমি যেখান থেকে এই নম্বরটি পেয়েছ
সেখানেই সে থাকত
তবে এটা ছিল তখন আরেক সভ্যতা

আর তখনও মোবাইল ছিল
কম্পিউটার ছিল

তবে এখনকার মত নয়
আন্য আরেক রূপে
যে কারনে সে এখনও জীবিত আছে
মোবাইলের নম্বরটিও ঠিক আছে
এবং সেই মোবাইলটি বাজে
আর সে ধরে কথা বলতে পারে

ফ্লারফ কবিতা

১৭। সমাজের ভিতরেই সব মিডিয়া
অনেক মিডিয়াই জন্ম হয়েছে
কিছু মিডিয়া আন্তর্জাতিক
এখানে অনেক কিছুই থাকে না
সমাজের অধিকাংশ কথাই
কারন তা আন্তর্জাতিক

কিছু মিডিয়া জাতীয়
এখানেও অনেক কিছু থাকে না
সমাজের অনেক কথাই
কারন তা জাতীয়

কিছু মিডিয়া স্থানীয়
এখানে কিছু কিছু সমাজের কথা আসে
আমাদের কথা আসে
কিন্তু তা সামান্য

কিন্তু কিছু মিডিয়া আছে
যাদের নামই সোশ্যাল মিডিয়া
আমি এখানে আমার কথা খুঁজি
সমাজের কথা খুঁজি

সবাই এই মিডিয়ায় তার একান্ত নিজের কথা বলে
এইসব কথাগুলো অন্য কোনও মিডিয়ায় পাওয়া যাবে না
যা একদম সত্য
এবং যা পোস্ট হয় সবই তাদের হতাশা আর ব্যর্থতার
তাহলে কি আমাদের সমাজের ভেতর
আমাদের ভেতর যে সত্যটি এতদিন কোনও মিডিয়াই প্রকাশ করতে পারে নি
তার নাম হতাশা আর ব্যর্থতা

ফ্লারফ কবিতা

১৮।

তুমি যখন রেল স্টেশনে কারও অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাক
সূর্য তখন তোমার দিকে চেয়ে চেয়ে নিজের বাড়ির দিকে যেতে থাকে

তোমার শরীর তখন কনে দেখা আলোয় জ্বল জ্বল করছে
সেরম হয়ে ওঠছে সব কিছু

তোমার হাসি
তোমার চোখ
তোমার দুই বাহু

সেরম
সত্যি সেরম

কেবল কু ঝিক ঝিক করে একটি ট্রেন চলে যাবার পর
তোমাকে আর কোথাও পাওয়া যায় না

তুমি চলে যাবার পর
নাই হয়ে যাবার পর
সেরম আর কিছুই থাকে না

ফ্লারফ কবিতা

১৯। গুগলে আত্মহত্যা নিয়ে সার্চ দিলাম সেদিন
অধিকাংশ লিংক এল
যেখানে লিখা
আত্মহত্যা করা ঠিক নয়
ধর্মীয় নানা বিধি নিষেধ ইত্যাদি

এসব লিংকের মাঝে আমি একটি ব্যতিক্রম জিনিস পেলাম
তাতে লেখা
আত্মহত্যা করার সহজ উপায়
আমি লিংকটা খুললাম
দেখতে থাকলাম কোন উপায়টি আমার জন্য যুৎসই

শুনেছি কারও যদি আত্মহত্যার ইচ্ছে হয়
তাহলে সেই ইচ্ছেকে কখনই অগ্রাহ্য করা উচিত না
কেননা তা সত্যিকার আর তীক্ষ্ণ অনুভূতি

জানলাম ৮৫ ভাগ আত্মহত্যাকারী বিষণ্নতায় ভুগে
কিন্তু আমার তো বিষণ্নতা নেই
কারণ আমি বিষণ্নতাকে উপভোগ করি

ঘরে একা থাকলে আমার আনন্দে লাফাতে ইচ্ছে করে

আত্মহত্যার সহজ উপায়গুলো বেশ মজার

কিন্তু বিষণ্নতা আমার ভাললাগে
একা থাকতে আমার ভাললাগে

আমি আত্মহত্যা করব না।

ফ্লারফ কবিতা

২০। প্রতিদিনই ঘুম থেকে ওঠে আমি ইমেইল চেক করি
কারও একজনের মেইল খুঁজি
না পেয়ে যেসব মেইল এসেছে তা সিলেক্ট করে ডিলিট করে দেই
এরপর আমি স্প্যাম চেক করি
কোনও কারণে যদি সেই আক্ঙ্খিত মেইলটি স্প্যামে চলে যায়
সেখানেও না পেয়ে আমি বাকি যেসব স্প্যাম ইমেইল এসেছে
তা সিলেক্ট করে ডিলিট করে দেই

এইভাবে আমি দিনের পর দিন
মাসে পর মাস
বছরের পর বছর
কারও ইমেইলের অপেক্ষায় বসে থাকি
প্রতিদিন বাকি মেইলগুলো সিলেক্ট করে ডিলিট করে দিই
কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই আকাঙ্খিত মেইলটি আসেনি

এমন একটি মেইল যা পেয়ে
যা পেয়ে আমি চমকে ওঠব অথবা
হতাশ হব

আমি কি তাহলে তার মেইলের জন্যই বসে আছি
যে কখনই আমাকে মেইল পাঠাবে না

ফ্লারফ কবিতা

২১। ছেলেটি প্রতিদিন একটি করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস লিখত
সবার জন্য নয়
শুধু একজনের জন্য
একটি মেয়ের জন্য

যাতে করে মেয়েটি তাকে চিনতে পারে
বুঝতে পারে
সে একজন ভাল প্রেমিক

প্রতিটি স্ট্যাটাসে অনেক লাইক পড়ত
প্রশংসার কমেন্ট হত অনেক
কিন্তু ছেলেটি খুঁজত সেই মেয়েটির লাইক
বা কোনও কমেন্ট

প্রতিদিন সে স্ট্যাটাস দিত আর
সেই মেয়েটির কোন লাইক বা কমেন্ট খুঁজত তার স্ট্যাটাসে

ছেলেটি ভাবত
মেয়েটি হয়ত তার স্ট্যাটাস দেখে
কিন্তু তার চোখে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে
মেয়েটি হয়ত লাইক বা কমেন্ট করে না
এমন কিছু মনের ভেতরে রেখে
ছেলেটি দিনের পর দিন
রাতের পর রাত
মাসের পর মাস
বছরের পর বছর
স্ট্যাটাস দিতে থাকল
কিন্তু কোনও দিনও ছেলেটির স্ট্যাটাসে মেয়েটির লাইক বা কমেন্ট
দেখা গেল না

কিন্তু ছেলেটির স্ট্যাটাস বেশ জনপ্রিয় হতে শুরু করল
প্রচুর লাইক আর কমেন্ট পড়তে লাগল
ছেলেটির লেখার অনেকে ভক্ত হয়ে ওঠল
ছেলেটি সেলিব্রিটি হয়ে ওঠল
ছেলেটি অনেকের প্রিয় হয়ে ওঠল

কেবল সেই মেয়েটি বাদে

ফ্লারফ কবিতা

২২। অনলাইনে আমাকে পেলেই তুমি চ্যাটবক্সে গল্প করার বায়না ধর
বল যে আজ একটি গল্প বলতেই হবে
আজ আর ছাড়া হবে না
আজ ফাকি দেওয়া চলবে না
কি গল্প বলব তোমায়
আমি যে কোনও গল্প করতে পারি না
অনেকেই চমৎকার করে গল্প বলে
সেই গল্পের আমিও মুগ্ধ শ্রোতা

অনেক খেয়াল করে দেখেছি
আমি কোনও গল্প বলতে পারি না
কেবল গল্প শুনতে পারি
গল্প শুনতে আমার ভাললাগে
নানাজনের নানা গল্প
আর তাদের গল্পের বয়ান আমাকে এতটাই মুগ্ধ করে যে
সেসব আমার শুধু শুনতেই ইচ্ছে করে

কেবল আমি গল্প করতে পারি না
সেই বট গাছটার মত
যে অনেক গল্পের স্বাক্ষী
যে গাছটির নিচে অনেক গল্প হয়
জীবনে অনেক গল্পই শুনেছে বট গাছটি

বটগাছটি কেবল গল্প শুনেই যায়
বলতে পারে না
হয়ত বিষয়টা এরকমই
যে জীবনে অনেক গল্প শুনেছে
বা অনেক গল্পের স্বাক্ষী
সে হয় বট গাছের মত নিরব
বা নিশ্চুপ

ফ্লারফ কবিতা

২৩। এত এত প্রতীক্ষা কেন
এত এত আবেগ
চোখ ভরা কান্না
আর সবার ভেতরে থেকে তোমার মুখ লুকিয়ে ফেলা
কতবার কালো হয়ে গেছে মুখ অপমানে

তারপরও
তারপরও অনলাইনে বসলে
তোমার প্রোফাইলে দেওয়া হাসিমাখা মুখের দিকে চোখ চলে যায়
কিন্তু এতো প্রতারণা
যে তোমাকে ঘুণাক্ষরেও চায় না
তার জন্য বসে থাকা তো নিজের সাথেই প্রতারণা নিজের

শুধু তাই নয়
তুমি নিজেকে বোকা আর হাস্যকর করে তুলছ

এখন প্রেমের সম্পর্ক আবেগের নয়
কেউ তা মনে করে না
এখন প্রেমের সম্পর্ক কান্না আর প্রতীক্ষার নয়
কেউ তা মনে করে না

এখন প্রেমের সম্পর্ক বিক্রির
প্রতিদিন অনলাইনে বিক্রি হয় প্রেম
অনলাইনে নানা রকমের প্রেমের বিজ্ঞাপনও আছে
তুমি চাইলে
তুমি এমন প্রেম কিনতে পারবে
যেখানে প্রেমিকা কেবল এক রাতের জন্য প্রেম বিক্রি করে চলে যাবে
তুমি এমন প্রেমও কিনতে পার
যেখানে তোমার প্রেমিকা এক মাস বা এক বছর বা দুই বছর
প্রেম বিক্রি করে চলে যাবে
বা অনলাইনে টাকা দিয়ে তুমি
এক ঘণ্টা দুই ঘণ্টা বা তিন ঘণ্টা বা কয়েক ঘণ্টা
প্রেমের কথা বলবে তোমার প্রেমিকা
এমন প্রেম কিনতে পার
এমন নানা ধরনের প্রেমের পসরা সাজিয়ে বসে আছে বণিক

যে প্রেম বিক্রি হয়
সে প্রেমের জন্য এমন প্রতীক্ষা
এমন কান্না
এমন আবেগ
নিরেট হাস্যকর
যুবক

ফ্লারফ কবিতা

২৪। তুমি যখন অনলাইনে তোমার স্তন দেখাচ্ছিলে
তখন ফিলিস্তিনিতে কয়েক শত শিশুর মৃত্য চিৎকারে স্তব্ধ

তুমি যখন অনলাইনে তোমার স্তনের বোটা স্পর্শ করে দেখাচ্ছিলে
যৌনতা কিভাবে তোমাকে কাতর করে
কাশ্মীরে তখন বেজে উঠেছিল বোমার শব্দ

তুমি যখন অনলাইনে তোমার উরুদেশ দেখিয়ে দেখিয়ে
আমাকে নিয়ে যাচ্ছিলে যোনিদেশে
তখন সমস্ত মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধোন্মদনায় নেচে উঠেছিল

তুমি যখন অনলাইনে তোমার যোনিতে আঙুলের স্পর্শ করতে করতে
শীৎকার দিয়ে উঠছিলে
তখন আমেরিকার ড্রোন আর মিসাইল হামলা তছনছ করে দিয়েছে কয়েকটি দেশ

আমি তবুও যুদ্ধ চাই
তোমার শরীরের সাথে যুদ্ধ
যাতে তুমি শীৎকার দিয়ে ওঠ
আর আমেরিকার সাথে যুদ্ধ
যাতে সে চিৎকার করে ওঠে

ফ্লারফ কবিতা

২৫। মনিটরে কারও মুখ ভেসে ওঠলেই মনে হয়
লোকটার জানি কি হয়েছে
লোকটা বাসস্টপের কাছে দাঁড়িয়ে থাকে
লোকটা লাইটপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে থাকে
লোকটার কি সংসারের কথা মনে হয়
মনে হয় কি বেশ্যারও সংসার থাকে

মনিটরে কারও মুখ ভেসে ওঠলেই
আমার বুকটা কেমন ছ্যাৎ করে ওঠে
মনে হয় এই বুঝি গেল
সংসার ছেড়ে গেল
অথবা মরে গেল

গুয়ের ওপর পা দিলে
এই গন্ধ ছড়িয়ে যায়
যেখানেই যাক না লোকটি

লোকটা কি গুয়ের গন্ধ নিয়ে ঘুরে বেড়ায়
আর তাই সংসার তাকে চায় না
জীবন আহা জীবন সেই জীবনও তাকে চায় না

আমি মনিটরের দিকে তাকাই না
আবার কার না কার মুখ ভেসে ওঠে
আর আমি আগেই জেনে যাব লোকটা আর নেই
কিন্তু বাঁচাতে পারব না

আমি আর মনিটরের দিকে তাকাব না

ফ্লারফ কবিতা

২৬। লগ ইন বাংলাদেশ

১। মেয়েটা এখন পেটের কারনে বাইরে বের হয়
গার্মেন্টে যায়
তাই ছেলেটি তাকে রেপ করে

২। গুণের তুলনায় এখন সংখ্যার গুরুত্ব বেশি
তাই কৃষকেরা সবুজ বিপ্লব করে
হাইব্রিড ধান ফলায়

৩। : আপনি কবিতা লিখেন?
: হ্যাঁ
: আপনার কি মুজিবকে নিয়ে কোনও কবিতা আছে?
: না।
: তাহলে আপনি কবি হলেন কিভাবে?

: আপনি কবিতা লিখেন?
: হ্যাঁ
: আপনার কি জিয়াকে নিয়ে কোনও কবিতা আছে?
: না।
: তাহলে আপনি কবি হলেন কিভাবে?

ফ্লারফ কবিতা



২৭। ইদানিং অনলাইন হই না

অফলাইনেই থাকি

অনলাইন হলেই কেউ আমাকে গুলি করে দিতে চায়

অনলাইন হলেই আমি আমার দিকে বন্দুক তাক করার শব্দ পাই

তারপর মনে হয় আমার দিকে নিশানা ঠিকঠাক করে

ট্রিগারে চাপ দিতে যাচ্ছে

আর শব্দ শোনা যায়

কালরা শয়তানের বংশ

ওদে হত্যা কর

আমি অফলাইন হয়ে যাই

আমার অনলাইন হতে ভয় লাগে





ফ্লারফ কবিতা



২৮। এখানে রাজনীতি নিয়ে আলাপ নিষিদ্ধ

ওয়ান এক্স টো এক্স থ্রি এক্স নিয়ে আলাপ কর

তোমার বান্ধবীর সেক্স ক্লিপ নিয়েও আলাপ করতে পার

তারপর তোমার বন্ধুর বান্ধবীকে দেওয়া প্রথম চুম্বনের

ডাউনলোডেড ভিডিও তো তোমার মোবাইলেই

এটা নিয়ে তুমি আলাপ করতে পার

তবে এখানে রাজনীতি নিয়ে আলাপ নিষেধ

কাল সারারাত তোমার বন্ধু ঘুমাইনি

কারণ সে বান্ধবীর সাথে রাত জেগে সেক্স চ্যাট করেছে

তুমি একটা গীটার নিয়ে আস

তোমার শার্টের বোতাম খোলা থাকবে

সেই শার্ট খোলা বুকের ভেতর তোমার বান্ধবীরা মুখ গুজে রাখবে

আর তুমি গান গাইতে থাকবে

এসব গল্প বেশ ভাল জমে

এখানে রাজনীতি নিয়ে আলাপ কর না

রাজনীতি যারা করে তাদের কেউই ভাল মানুষ না

অথবা বসে বসে গেইম খেলতে পার

হাজার হাজার এডালট গেইম আছে বাজারে

সেগুলো নিয়ে খেললেও সমস্যা নেই

কিন্তু এখানে এখানে রাজনীতি নিয়ে আলাপ কর না

রাজনীতি নিয়ে আলাপ করা ভাল না





ফ্লারফ কবিতা



২৯। বড় লোকের মেয়েগুলো যখন বের হয়

বুক, বোটাসহ বুক, তলপেট, মুখ, সাদা উরুর গন্ধ

কেমন মৌ মৌ করে ওঠে



ও সিগারেট খায়

পাছা দুলিয়ে হাঁটে

ফ্রি সেক্স করে

নারী সংঘে যায়

ওর জ্বালা আছে

সারা শরীরে ওর জ্বালা



ও সেলফি তুলে

নিজের স্তন ঠোঁট যোনির ক্লোজ শট

বন্ধুর কাছে সেন্ড করে দেয়

ওর জ্বালা আছে



কিন্তু গরীব মেয়েগুলা যখন বের হয়

ওদের বুক, বোটাসহ বুক, তলপেট, মুখ, সাদা উরুর গন্ধ

কিছুই পাওয়া যায় না



ওরা মাথানিচু করে থাকে

খালি পায়ে হাঁটতে থাকে

সেক্স কাকে বলে জানে না

কারণ আজ কাজ না করলে

না খেয়ে থাকতে হবে

ওদের শরীরে কোন জ্বালা নেই



তাই গরু জমিজমা ভিটেমাটি বিক্রির পর

নিজের মেয়েকেও ওরা বেচে দেয়।  





ফ্লারফ কবিতা



৩০। এই বাস এই ট্রেন চললেও

তুমি চলছ না

চলছে কেউ কেউ

কেউ কেউ অনেক দূরে যাচ্ছে

উন্নতি আর প্রগতিকে ধরতে

এই বাস আর ট্রেন তোমার জন্য না

অথচ তোমার জমির উপর দিয়েই রাস্তা করেছে সরকার



তুমি বাদ

তোমাদের কথা বাদ



ওয়াই ফাই নেটওয়ার্কে পুরো দেশ

কত কথা অনায়াসেই চলে যায়

বলে যায়

কত শত লোক

তোমার কথা যায় না

যায় না তোমাদের কথা

জমি বেচে দেওয়ার কথা

না খেতে খেতে ছোট বাচ্চাটার মরে যাওয়ার কথা

বউটার শহরে ভিক্ষা করার কথা



এটা তোমার নেটওয়ার্ক না

অথচ তোমার জমির উপরেই সেই টাওয়ার



ফ্লারফ কবিতা



৩১। বউটা হাসলে কেমন গালে টোল পড়ে

মনে হয় দ্বিতীয় চাঁদ বুঝি ওটা

চল বেচে দেই



ঘরে এক অদ্ভুত সুন্দর ঘটনা ঘটেছে

পাড়ার লোকেরা কেউ জানেনা

দুইটি সুন্দর পাখি এসে বাসা বেধেছে

চল বেচে দেই



বাচ্চাটা অনেক মেধাবী

এত মেধা নিয়ে কেউ কেউ জন্মায়

চল বেচে দেই



মেয়েটা কেমন বড় হয়ে উঠেছে

রাস্তায় সব লোকেরা ওর দিকে তাকিয়ে থাকে

এত সুন্দর মেয়ে কার ঘরে আছে বল

চল বেচে দেই



বেচে দিলে টাকা হবে অনেক

সুখ আসবে

বেচার জন্য তেমন ঝক্কি-ঝামেলাও নেই

কেবল অনলাইনে দিয়ে দিতে হবে ছবিটা

আর তার নিচে দাম



বেচে দেওয়া সহজ অনেক

বেচে দিলে টাকা হবে অনেক

সুখ আসবে ঘরে





ফ্লারফ কবিতা



৩২। বেকার যুবক টিউশনি করায়

টিউশনি করাতে করাতে ছাত্রীর সাথে প্রেম করে



বেকার যুবক চাকরি না পেয়ে শরীরে কেরোসিন ঢেলে দেয়

তারপর আগুন

আর সেই আগুন থেকে মন্ত্রী এমপিরা সিগারেট ধরিয়ে নেয়



ধৈর্য্য হারিয়ে নেশায় ডুবে পড়েছে নীল যুবক



প্রেম প্রতিহিংসা হতাশা ছাড়া

কোনও গল্প নেই গল্পকারেরও



বেকার যুবকদের জন্য সরকারের নতুন পরিকল্পনা আসছে

ঘুম থেকে উঠে দেখে বালিশে দাগ পড়ে গেছে লালার



এমন একটা পোস্ট দিন

পোস্টটা খাবে খুব



ফ্লারফ কবিতা



৩৩। এইসব কাটাতারের বেড়ায় লাভ হয় রাষ্ট্রের

রাষ্ট্রের গুটিকতক মানুষের

আমাদের কি লাভ

আমরা তো তোমাদের কাছে যেত চাই অনায়াসে

তেমনি তোমরাও চাও

কত কথা জমে থাকে আমাদের

অনেক কাছাকাছি

অথচ কেটে গেছে কত কাল

আসা হয় নি

যাওয়া হয় নি

দুই বন্ধু

দুই আত্মীয়

দুই ভাই

কাছাকাছি

অথচ এক কাঁটাতারের বেড়া কত দূল ঠেলে দিল আমাদের

একদমই হয় না যাওয়া

কিন্তু এই কাঁটাতারের বেড়ায় যাদের লাভ

তারা যেতে পারে কয়েক মুহূর্তেই তারা চলে যায়

এপার ওপার

আমাদের হয় না যাওয়া

ফেসবুকে কথা হয়

মাঝে মাঝে ফোনও কর

কিন্তু ছুইঁতে ইচ্ছে করে ভাই

কত দিন ছুঁই না তোকে

কোনোদিন আর ছঁতে পারব না হয়ত তোকে



ফ্লারফ কবিতা



৩৪। যেদিকে দু চোখ যায় আমি যাব না

আমি অনলাইনে তাকিয়ে থাকব

ডব্লই ডব্লই ডব্লই ডট লিখে

ঢুকে যাব কোন সাইটে



আমি ভাল করে খুঁজে দেখব

কোথায় যাওয়া যায়

আর কোথায় যায় না



ফ্লারফ কবিতা



৩৫। অর্থমন্ত্রী যখন ভাষণ দেন

তার আগেই সবকিছুর দাম বেড়ে যায়

প্রিয় সিগারেটেরও



অর্থমন্ত্রীর ভাষণ শুরু আগে বিজ্ঞাপন হয়

সেখানে সারারাত ফ্রি কথা বলার অফার দেয় মোবাইল

অর্থমন্ত্রী পানি খান

মাঝে মাঝে রসিকতা করেন

মনে হয় দেশের অর্থনীতিতে একটা রস বয়ে যাচ্ছে

কিন্তু অর্থমন্ত্রী যেখানে ভাষণ দেন

তার এক কিলোর ভেতরেই

নগ্ন অর্ধনগ্ন অবস্থায় খিদের যন্ত্রনায়

পাগলামি করে যাচ্ছে হাজারও মানুষ



অর্থমন্ত্রীর ভাষণ শেষ হলে আরেকটি বিজ্ঞাপন আসে

সাইটে ঢুকলেই চাকুরী

আমাদের দেশ নাকি চাকরি দেবার লোক খুঁজে পাচ্ছে না



ফ্লারফ কবিতা



৩৬। ভিখেরীটা বাঁচতে চায়

কিন্তু ও বাঁচতে পারবে না

সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়া তছনছ হয়ে গেলেও না

কেউই সাহায্য করবে না

কারণ ও ভিক্ষুক



কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলেটি বা মেয়েটির জন্য

অথবা মধ্যবিত্তের কাউকে

সবাই সাহায্য করবে

বড় বড় স্পন্সর আসবে

কারণ ওকে বাঁচানোর সাথে ব্যবসা আছে

আছে শ্রেনী দরদ



কিন্তু ভিক্ষুকের সাথে আমাদের কিসের সম্পর্ক

সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিক্ষুকের জন্য

কোন আহাজারি নাই

ও মরে গেলেই যেন ভাল



সবারই বাঁচার অধিকার আছে

কেউ মারা গেলে আসলেই খুব খারাপ লাগে

অথচ দেখ কী সুন্দর

নিজ শ্রেনী প্রেম অন্য শ্রেনী থেকে

আমাদের কতটা দূর সরিয়ে দিয়েছে

এতটাই যে

সেই শ্রেনীর কারও মৃত্যুই আমাদের জন্য এখন খুশির খবর



ফ্লারফ কবিতা



৩৭। নেতাদের সোনার মূর্তি হচ্ছে

প্রতি জেলায় একটি করে মূর্তি

প্রতি জেলা শহরের ঠিক মাঝখানে হবে মূর্তিটি

সারাদেশে সাজ সাজ রব

মেইনস্ট্রিম মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড়

এমন নেতাদের মূর্তিই চাই

এসব নাকি আমাদের প্রাণের দাবি



আজ তার উদ্বোধন হবে

গ্রাম ভেঙ্গে সব মানুষ আসছে শহরে

আমেরিকা থেকে বানানো হয়েছে মূর্তি

চারটেখানি কথা নয়

চর ভেঙে মানুষ আসছে শহরে

অসম্ভব সুন্দর মূর্তিটি এক নজর হলেও দেখা চাই



ঘরে খাবার নেই

তাতে কি

না খেয়েই চলে এসেছে অনেকে

বাচ্চার ওষুধ নেই

এই টাকায় ওষুধ কিনলে

সোনার মূর্তি দেখা হবে না আর

না কিনেই চলে এসেছে

বাবা ঘরে একা

সারারাত কেশেছে

ডাক্তার দেখানো হয় না টাকার অভাবে

কিন্তু ছেলের সখ

সবাই যাচ্ছে দেখতে তাকেও দেখতে হবে

চলে এসেছে শহরে

মা সারারাত কাঁদে

বাতের ব্যথা বাড়ছে ক্রমশ

মাকে বলে আসল

সে শহরে যাচ্ছে সোনার মূর্তি দেখতে

নির্বিকার মা



সোনার মূর্তি দেখতেই হবে সবাইকে

আহা নেতারা

তোমাদের জীবন সার্থক

রঙিন টিভিতে সবকিছুই কেমন রঙিন হয়ে যায়

শুধু চূলা ধরিয়ে বউয়ের বসে থাকা

বাচ্চার না খেয়ে কান্নাকাটি করতে করতে ঘুমিয়ে পড়া

মা-বাবাকে ডাক্তার না দেখাতে পারায় মৃত্যু

সবকিছুই কেমন রঙিন হয়ে ওঠে

নেতাদের সোনার মূর্তির সামনে



ফ্লারফ কবিতা

৩৮। সুখ তো আছে
সুখ না থাকলে কি আর ফুল ফোটে
ফেসবুকে ফুসবুকে কি ছড়ালিরে তুই
তুই না কথাই বলিস না
এত কথার খই ফুটল তোর কবে

ফেসবুকে তুই এখন কথা বলিস
আর দেখা হলেই চুপ
তুই চিন্তা মুক্তির কথা বলিস
তুই দর্শন মুক্তির কথা বলিস
যে কথা তুই আটকে রেখেছিলি দীর্ঘদিন
ফেসবুকে তুই বলতে পারছিস সেসব কথা

ফেসবুক তোর চিন্তার মুক্তি দিয়েছে
দর্শনের মুক্তি দিয়েছে
আসলেই কি তাই
ফেসবুক কেন
কোন মিডিয়াই কি দিতে পারে
দর্শন বা চিন্তার মুক্তি?

ফুল কি একা একা পারে পরাগ ছড়াতে?
বা শুধু পরাগ মাধ্যম কি ছড়াতে পারে পরাগ?

আর ছড়ালেই কি গাছ হয়ে উঠে পরাগ?









ফ্লারফ কবিতা

৩৯। অনলাইনে আমার আইডেনটিটি কি হবে

আমি যদি নিজেকে ছেলে বলে দেই তাহলে ছেলে

আর যদি মেয়ে বলে দেই তাহলে মেয়ে

কিছুই যাচাই করার নেই আর সম্ভবও না

তাহলে এটা আইডেনটিটি নয়

সাধারণভাবে, বাস্তবিকভাবে আমরা যাকে আইডেনটিটি বলি

এটা তা নয়

এটা অন্য আইডেনটিটি, অনলাইন আইডেনটিটি



এখানে কারও সাথে কারোরই তেমন দেখা হয় নি

তেমন মানে আদতে দেখাই হয় নি

তারপরও বন্ধু, প্রেম

যেখানে বন্ধুত্ব আছে প্রেম আছে সেটা যে একেবারে আইডেনটিট নয় বা ফেইক

তাও বলা যায় না



তবে এতটুকু বুঝতে পারি

অনলাইনে আমার যে আইডেনটিট তৈরি হয়

সেটা অনলাইনে আমি যা করি

যা বলি তার উপর নির্ভর করে

এইসব বলা কওয়া ছাড়া সত্যিকার অর্থে অনলাইনে

কারো আইডেনটিটি বোঝার কোনোও উপায় নেই

তাই বাস্তব আইডেনটিটি থেকে একেবারে আলাদা

আরেক আইডেনটিটি তৈরি হয় অনলাইনে



বলা যায় আমিই হয়ে উঠি আরেক আলাদা আমি    

ফ্লারফ কবিতা

৪০। এমন ভার্চ্যুয়াল কী বোর্ড আছে

সেই কী বোর্ডে বাটন চাপলে

লেখা হয়

সেই লেখা প্রিন্ট আউট করা যায়

গান শুনতে চাইলে গান শোনা যায়

ভিডিও দেখতে চাইলে ভিডিও দেখা যায়

অথচ বাস্তবে এমন কী বোর্ড নেই

কী বোর্ডটি আছে কেবল ভার্চ্যুয়ালে

তাহলে ভার্চ্যূয়ালি এমন কিছুই আছে

বা ভার্চ্যুয়াল জগতটাই হয়ত এমন যে

এরা প্রকৃত অর্থে ভার্চ্যুয়াল হলেও

এরা আসলে বাস্তব

মানে এরা ভার্চ্যুয়াল হলেও

কাজ করে যায় বাস্তবে

বাস্তবে এদের কাজের ফল পাওয়া যায়

আর তা ভোগ করা যায়

আমার বিবাহিত প্রেমিকা

তুমিও এমন ভার্চ্যুয়াল জগতে প্রবেশ কর

এখানে বাস্তবে তোমাকে কখনই আমার কাছে আসতে হবে না

কিন্তু তোমার প্রেম

তোমার- আমার ভালবাসার ফসল

আমরা ঠিকই পাব বাস্তবে  



ফ্লারফ কবিতা

৪১।   আয়নায় যে তোমাকে দেখা যায়

সেটা আসলে ঠিক তুমি নও

কারণ আয়নার প্রতিবিম্বটি

তোমার উল্টো



ঠিক তেমনি

ভার্চ্যুয়ালে যাকে দেখা যায়

সে ঠিক বাস্তব নয়

কিন্তু মনে হয়

সর্বতোভাবে মনে হয় বাস্তব



ফ্লারফ কবিতা

৪২।   তোমার সাথে দেখা হয় না অনেক দিন

হবেনাও হয়ত আর

ফেসবুকে দেখেছি

বিয়ে হয়েছে তোমার

তোমার বরকেও দেখলাম

বেশ সুন্দর



তোমাদের হানিমুনের ছবিগুলোও দেখেছি

তোমাকেও বেশ সুন্দর লাগছে

আর টের পাচ্ছি একটি বিদঘুটে জিনিস

মনে হচ্ছে তুমি একটা সেক্স ডল



অনলাইনে এমন অনেক সেক্স ডল পাওয়া যায়

যে ডলগুলোতে কারসর দিয়ে

ঠোঁটে স্পর্শ করলে

স্তনে স্পর্শ করলে

নিপলে স্পর্শ করলে

যোনিতে স্পর্শ করলে

নানান ভাবে একেক স্থানের স্পর্শে সাড়া দেয়



কিন্তু সাড়া দেওয়ার ধরন একই থাকে

মানে ঠোঁটে স্পর্শ একজন কারসর দিয়ে করলে সে যেভাবে সাড়া দেয়

অন্য আরও একশ জন স্পর্শ করলে সেভাবেই সাড়া দেয়



আবার স্তনে স্পর্শ করলে সাড়াটি ঠোঁটে স্পর্শ করার মত হয় না

কিন্তু স্তনে স্পর্শ করলে যেভাবে সাড়া দেয়

সেই ডলটির স্তন আরও একশজন কারসর দিয়ে স্পর্শ করলে

একইভাবে সাড়া দেয়

মানে পুরুষ যাই হোক না কেন

তার সাড়াটি একই রকম থাকে



আরেকজন পুরুষের সাথে তুমি কিভাবে সাড়া দিচ্ছ

তা খেয়াল করছিলাম

দেখলাম হুবুহু এক

এক ইঞ্চি খাদ নেই কোথাও

ভাবছি

একজন মানুষ কিভাবে সেক্স ডল হয়ে ওঠে

এবং সে টের পায় না যে

সে একজন মানুষ নয়

সেক্স ডল

ফ্লারফ কবিতা

৪৩।   সারারাত একটি পিয়ানো বাজে

অথচ আমার ঘরে কোনও পিয়ানো নেই

আমি একটি ভার্চ্যুয়াল পিয়ানো বাজাচ্ছি কম্পিউটারে

হুবুহু পিয়ানো

আমনে পিয়ানোই বেজে চলছে সারারাত



পিয়ানোটি বাজতে বাজতে নীল হয়ে উঠছে

আর স্মৃতিতে ভেসে উঠছে কেউ

নীল রঙের সমুদ্র

নীল রঙের শাড়ি

নীল রঙের আকাশ

আর নীল রঙের বিষ



প্রতিরাতে একটা নীল রঙের সাপ এসে ভার্চ্যুয়াল পিয়ানোটিতে

নীল রঙের বিষ ঢেলে যায়

আর তখনই এটি বেজে ওঠে

বাজতেই থাকে

সারারাত বাজে

আর ভেসে ওঠে স্মৃতি  

নীল রঙের সমুদ্র

নীল রঙের শাড়ি

নীল রঙের আকাশ

আর নীল রঙের বিষ



ফ্লারফ কবিতা

৪৪। এটা নতুন অনলাইন গেইম

এই গেইমে

আমরা এক একজন ফিকশনাল ক্যারেকটার

আর গেইমটা রিয়্যাল



গেইমটা আমাদের খেলোয়াড় করে তোলে

আমরা খেলতে খেলতে চলে যাই বারুদের দেশে

সে দেশে বারুদের ফুল ফোটে

আর রাত হলে সব ফুল

আগুন হয়ে ঝড়ে যায়

রাত হলে সব কিছু আগুনে পুড়ে যায়

বারুদের দেশে যখন আমরা পুড়ে পুড়ে ছাই হয়ে যাই

অনলাইন গেইমটি জানায় আমরা হেরে গেছি।





ফ্লারফ কবিতা

৪৫। এটা নতুন অ্যাপ

খুব কম সময়েই অনেক বেশি চাহিদা হবার কারণ

এটি কোনও আইডি দেখলেই বলে দিতে পারে

আইডির মেয়েটি প্রেমকাতর না যৌনকাতর

প্রেম করে নাকি একা

বিবাহিত জীবনে সুখী না অসুখী

অন্য কোনও পুরুষ তাকে বেশি আকর্ষন করে

না ঘরের ছেলেটিকেই



এমন অ্যাপই চাচ্ছিল সবাই

হুহু করে দাম বেড়ে যাচ্ছে এই অ্যাপের

ঘণ্টায় বেচা হচ্ছে কয়েক কোটি



এমন অ্যাপই চায় সবাই

যেখানে তাকেও যাচাই করা হবে

অন্য একটি অ্যাপ দিয়ে



ফ্লারফ কবিতা

৪৬।   ভার্চ্যুয়াল জগতে আমরা যে আইডি নিয়ে প্রকাশিত হই

সেই এক একটি আইডিকে বলা হয় অবতার

অবতার এই কারণে যে এটি একটি দ্বিতীয় জীবন

এই দ্বিতীয় জীবনের মানে হলো লুকানো জীবন

আমনুষ তার প্রথম জীবনকে লুকিয়ে রেখে

দ্বিতীয় জীবন দিয়ে নিজেকে পরখ করে দেখে



তাহলে একদিন মানুষ আর মানুষ থাকবে না

প্রতিটি মানুষ হয়ে উঠবে এক একটি অবতার



ফ্লারফ কবিতা



৪৭।   শিল্প আর জীবনের মাঝে যে রেখাটি থাকে

তা তরল

তরল বলেই এটি অনায়াসেই জীবনের রূপ নেয়

আবার অনায়াসেই শিল্পের



বিষয়, বস্তু, প্রকৃতি, সম্পর্ক এমন কি মানুষ যেভাবে

ভার্চ্যুয়াল জগতে থাকে

সেটি আসলে তরল রেখা

এই তরল রেখাটি যখন শিল্পের দিকে ঝুঁকে যায়

তখন সেটি শিল্প

আর যখন জীবনের দিকে ঝুঁকে যায়

তখন সেটি জীবন



অতএব সমস্ত ভার্চ্যুয়াল জগত আসলে তরল

এটি কেবল কঠিনে রূপান্তরিত করতে হয়

হয় কঠিন জীবন

না হয় কঠিন শিল্পে







ফ্লারফ কবিতা



৪৮।   এক সময় ঘরে কো্নো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হলে

পাড়ার সবাইকে ডাকা হত

সবাই এসে অনুষ্ঠানে মজা করত

নানা জায়গায় অনুষ্ঠান নিয়ে আলাপ হত

যারা অনুষ্ঠানটি করেছে তাদের এক ধরনের গর্ব হত



এখন ঘরে কয়েকজন সদস্য মিলেই একটা অনুষ্ঠান শেষ করে ফেলা হয়

তারপর এটা ফেসবুকে শেয়ার দেয়া হয়

লোকজনের ভাল লাগলে লাইক দেয়

অথবা শেয়ার করে

এই লাইক আর শেয়ার যতবেশি হয়

যাদের ঘরে অনুষ্ঠানটি হয়েছে

বা যারা অনুষ্ঠানটির আয়োজক তাদের আনন্দ তত বাড়তে থাকে



ফ্লারফ কবিতা



৪৯।   একটা সময় ছিল আমাদের পরিচিত মানুষদের সাথেই

আমরা ঠিক ভাবে দেখা করতে পারা তো দূরের কথা

কথাই বলতে পারতাম না

কত সংকট ছিল বাধা ছিল

তখন মনে হত আমাদের সাথে অনেক মানুষের যদি যোগাযোগ থাকত

তাহলে অনেক কিছুই সম্ভব হত

আমাদের মূল সমস্যা ছিল কথা অনেকের কাছে পৌঁছাতে না পারা



কিন্তু একবার ভাবুন

আমরা কোথায় এসে দাঁড়িয়েছি

আমাদের তাৎক্ষণিক একটা পোস্ট কত হাজার হাজার মানুষের কাছে নিয়ে যায়

একটা জনসভাও এই কাজ করতে পারে না

তাহলে সংকট কোথায়

এই হাজার হাজার মানুষের কাছে বার্তা যাওয়ার পরও কেন

গভীরতা গড়ে উঠছে না

সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে না

যোগাযোগ তো এখন বেড়েছে

তাহলে সংকট কোথায়

একটি বক্তৃতা যদি হাজার মানুষের মন ধরে ফেলতে পারত

একটি স্ট্যাটাস বা টুইট কেন পারছে না

তাহলে কি সংকট এইখানে যে এখন বৃত্ত এত বেশি বড় যে

কেন্দ্রে যে আপনি দাঁড়িয়ে আছেন তাকে কেউ দেখতেই পারছেন না

আমি ভাবছি আপনিও ভাবুন



ফ্লারফ কবিতা

৫০। আমি প্রতিদিনই বৈদ্যুতিক আলোর চিৎকার শুনি
তারা আর চাঁদের সাথে গান গাইতে শুনি
এই চিৎকার আর গান আনন্দের নয়
কান্নার
যেন সে হাজার বছর ধরে অপরাধ করে চলছে
আর সেই অপরাধ আর পাপ থেকে কেউ তাকে বাঁচাচ্ছে না
কিন্তু সে বাঁচতে চাচ্ছে

প্রতিদিন রাতে সে তারা আর চাঁদকে তার দুঃখের কথা বলে
প্রতিদিন রাতে সমস্ত শহরে বিদ্যুতটি দুঃখের আলো হয়ে জ্বলে
প্রতিদিন রাতে দুঃখের আলোয় আলোকিত হয় সমস্ত শহর