https://dupurmitra.wordpress.com/2017/03/27/%e0%a6%a6%e0%a7%81%e0%a6%aa%e0%a7%81%e0%a6%b0-%e0%a6%ae%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%ac%e0%a7%88%e0%a6%9c%e0%a7%8d%e0%a6%9e%e0%a6%be%e0%a6%a8%e0%a6%bf%e0%a6%95/
প্রথম প্রকাশ
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।
বইটি বিক্রির জন্য নয়।
কপিলেফ্ট।
এই বইয়ের সমস্ত লেখা কপিলেফ্ট। এই বইটির যে কোন অংশ অবাণিজ্যিক ও অলাভজনক উদ্দেশ্যে মূল লেখক ও লেখাকে অবিকৃত রেখে লেখক ও প্রকাশকের অনুমতি ব্যতিরেকেই যে কেউ নকল এবং পরিবেশন করতে পারবেন। এছাড়া বইটির ই-বুক সংস্করণ কেবল মাত্র ই-মেইলে লেখকের সাথে যোগাযোগ করে অথবা যে কোনও কপিলেফ্ট বা ফ্রি বুক সাইট থেকে যে কেউ বিনামূল্যে সংগ্রহ করতে পারবেন। ই-মেইল: mitra_bibhuti@yahoo.com
প্রচ্ছদ
চারু পিন্টু
কবি সমরজিৎ সিংহের ভূমিকা
এক খালি ক্লাসরুম, তার শূন্যতা, একটা সিঁড়ির নিচে অন্ধকার, দীর্ঘশ্বাসের মত হা হা বাতাস, পরজন্ম থেকে নেমে আসা আলো ঘিরে আমাদের স্মৃতি, যন্ত্রণার পরপারে থাকা বোধ কবিতার প্রাণ কি না জানি না । পিথাগোরাসের সূত্র ধরে সে চলে কি না, তাও প্রমাণিত নয় । হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাবার কাজ সে করে কি না, তাও নির্ধারিত হয়নি আজও । তবু পৃথিবীর সকল প্রান্তে, প্রতিনিয়ত, লেখা হচ্ছে কবিতা । তার রূপ, রস বিবিধ । কখনও সে হয়ে উঠছে বিদ্রোহীর হাতের অস্ত্র, প্রেমিকার দীর্ঘশ্বাস, নিঃসঙ্গের একান্ত সঙ্গী, কখনও বা ডুবে যায় অর্থহীনতার অথৈ জলে । এজন্য কবিতা রহস্যরচিত । কিন্তু, কবি দুপুর মিত্র কবিতাকে ধরতে চাইছেন বিজ্ঞানের পথে । যত মত তত পথ, বলে, আমাদের এক যুগপুরুষ, রামকৃষ্ণ পরমহংস, দেখিয়ে দিয়েছেন অমাপ্রেম একরৈখিক নয় । বরং তা বহুধা বিস্তৃত । বৈজ্ঞানিক কবিতাও হয় তো তারই এক সুতো, যা ধরে এগিয়ে যেতে পারবেন আগামী প্রজন্মের পাঠক । আমি দুপুর মিত্র-র কবিতাচর্চার এই অসমসাহসের প্রশংসা করি । তার সাফল্য কামনা করি ।
বৈজ্ঞানিক কবিতা ১
অতীতের হাত ধরে এগুতে এগুতে যখন বর্তমানের সামনে এসে দাঁড়াই
তখন দেখি অতীত বলে কিছু নাই।
বৈজ্ঞানিক কবিতা ২
আমি জানি স্ক্রিনে টাচ করলেই এখন সব হয়
তোমার হাসিমুখ ভেসে ওঠে
ওপার থেকে বলে ওঠ তুমি হ্যালো
অথচ তোমার হাসিমুখ দেখতে কত কষ্টই না করতে হত একসময়
কত দিনরাত দাঁড়িয়ে থাকতে হত বাসার সামনে
তোমার স্ক্রিনে টাচ করলেই স্পর্শ করলেই এখন কত কিছু ঘটে যায়
শুধু সেদিনের হাসির সাথে তোমার হাসির আর মিল হয় না কোনো
বৈজ্ঞানিক কবিতা ৩
ধীরে ধীরে বিজ্ঞানের ছেলেমেয়ে হল
সেইসব ছেলেমেয়েদেরও ছেলেমেয়ে হল
কারও নাম ইউরোপীয় বিজ্ঞান কারও নাম লোক বিজ্ঞান
কেউ হল সামাজিক বিজ্ঞান কেউ ধর্মীয় বিজ্ঞান
এভাবে অজস্র বিজ্ঞান হতে হতে দেখা গেল বিজ্ঞান মানুষের নাগালের বাইরে
একা একা ঈশ্বরের মত কাঁদছে
বৈজ্ঞানিক কবিতা ৪
সূর্য নয় আরো হয়ত হাজার হাজার নক্ষত্র রয়েছে
পৃথিবী নয় আরও হয়ত লক্ষ লক্ষ গ্রহ রয়েছে
শুধু পৃথিবীতে নয়
আমার ধারনা সবখানেই প্রান রয়েছে
শুধু তার স্বরূপ আলাদা
বৈজ্ঞানিক কবিতা ৫
কীটনাশকের বিষ শুধু বেছে বেছে কীট নাশ করে না
কিছু বিষ থেকে যায় গাছের শরীরেও
যে বিষ নিমিষেই শেষ করে দেয় কীট
সেই বিষ ধীরে ধীরে শেষ করে দিতে পারে মানবজগতও
বৈজ্ঞানিক কবিতা ৬
রেললাইনে কান পাতলে বোঝা যায়
ট্রেন আসছে কি আসছে না
তোমার কথায় কান পাতলে বোঝা যায়
তুমি হাসছ নাকি আড়াল করছ কান্না
বৈজ্ঞানিক কবিতা ৭
কৃত্রিম প্রজনন,
কৃত্রিম গরু-ছাগল-হাঁস-মুরগি
কৃত্রিম মাছ কৃত্রিম বৃক্ষ ফুল ফল শাক সবজি
চারপাশে এত এত কৃত্রিমতা
কেমন সহজ সরল সাবলীল হয়ে উঠছে
কৃত্রিমতাই স্বাভাবিক এখন
আমাদের প্রেম আমাদের সম্পর্ক আমাদের রক্তও কৃত্রিম হয়ে উঠবে একদিন
তখন এসবই মনে হবে স্বাভাবিক
বৈজ্ঞানিক কবিতা ৮
জবা ফুলের মত ব্যবচ্ছেদ করে দেখ আমায়
বৃতি উপবৃতি দল পুংকেশর স্ত্রীকেশর বের করে টেবিলে সাজিয়ে দেখ
দেখ ফুলের প্রতিটি অংশের মতই নিষ্পাপ আমার শরীর
আমার হৃদয়
ভুল বুঝ না
প্রেম কেবল নিষ্পাপ হৃদয়েই ফুল হয়ে ফোটে
বৈজ্ঞানিক কবিতা ৯
আমরা আগাছাকে কেটে ফেলি
মুড়িয়ে দেই
পিষে দেই মাটির সাথে
যেন তা মরে সার হয়
আর সেই সারে শুধু বেঁচে থাকুক পছন্দের গাছ
আমরা আমাদের পছন্দের মূল্য দেই অনেক বেশি
ভুলে যাই অপছন্দের আগাছা মরে গিয়ে সার হয়
সেই সারে বেড়ে উঠে পছন্দের বৃক্ষ
ভুলে যাই ফুলের হাসির আড়ালে
কেউ একজন মরে সার হয়ে কাঁদছে
বৈজ্ঞানিক কবিতা ১০
পাখির পাখনা আর বিমানের পাখনা দেখতে একইরকম
কারন মানুষ প্রকৃতিকে নকল করেই বেঁচে থাকা শিখেছে
বৈজ্ঞানিক কবিতা ১১
বৈদ্যুতিক আলোয় অভ্যস্ত হয়ে পড়লে কুপির আলোকে আর আলো মনে হয় না
মনে হয় অন্ধকার
অস্থির লাগে যতক্ষণ না জ্বলে বৈদ্যুতিক আলো
সমস্ত হাসি উৎসাহ আশা কুপি নয়
বৈদ্যুতিক আলোর সাথে এখন জ্বলে
বৈজ্ঞানিক কবিতা ১২
এক সময় মানুষ টিভি দেখত
এখন সে দেখে চ্যানেল
এক চ্যানেল থেকে আরেক চ্যানেলে ঘুরতে থাকে সে
তারপর পৃথিবীকে বিস্বাদ মনে হয় তার
পৃথিবীর ভিতরে খুঁজতে থাকে সে এক একটি চ্যানেল
একদিন চ্যানেল থেকে ছিটকে পৃথিবীতে পড়ে যায় সে
যেদিন সে পড়ে যায় সেদিন থেকে সবকিছু সাদাকালো মনে হয় তার
বৈজ্ঞানিক কবিতা ১৩
কোন কোন মানুষ টিভি দেখে না
শুধু রেডিও শোনে
রেডিও শুনতে শুনতে সে হারিয়ে যায় স্বপ্নের রাজ্যে
রেডিওকে আমার দাদীর গল্প শোনানোর যন্ত্র মনে হয়
আবার মনে হয় স্বপ্ন তৈরির যন্ত্র
রেডিওকে এমন একটি মাধ্যম মনে হয়
যেখানে মানুষের স্বপ্ন আর রেডিওর শব্দ এক হয়ে যায়
বৈজ্ঞানিক কবিতা ১৪
কে মনে করেছে আমায়
কে ডাকছে এমন করে
ভাইব্রেশনে কাঁপছে মোবাইল
কেমন লাফিয়ে উঠছে কৈ মাছের মত
কার এমন কথার তরঙ্গ
কাঁপিয়ে দেয় অন্য কোন প্রান্ত থেকে এ প্রান্ত
মোবাইলে কান পাততেই শুনি বিজ্ঞাপন
প্রতিক্রিয়াহীন কেউ করে যাচ্ছে আলাপন
বৈজ্ঞানিক কবিতা ১৫
ল্যাবরেটরিতে সব থাকে
সবকিছু তৈরি হয় এতে
কত নানা বর্ণের এসিড ক্ষার লবন
কত যন্ত্রপাতি টেস্টটিউব বিকার
কত গবেষণা চলে
কত কি দিয়ে কত কি যে তৈরি হয়
ল্যাবরেটরিতে কি একটি তরতাজা সতেজ ফুল তৈরি করা সম্ভব
যার বর্ণে মুগ্ধ হওয়া যাবে
যার গন্ধে বিমোহিত হবে সমগ্র পৃথিবী
সম্ভব কিন্তু মানুষ তা মানতে চায় না
মানুষ তা বুঝতে চায় না
ভালবাসা গান এসবই এক রসায়নের নাম
বৈজ্ঞানিক কবিতা ১৬
লোকটা প্রতিদিন স্কেল দিয়ে জীবন মাপত
লোকটা একদিন টের পেল স্কেলে জীবন মাপার কোন একক নাই
বৈজ্ঞানিক কবিতা ১৭
আমি টেস্টটিউবের দিকে তাকিয়ে থাকি
টেস্টটিউবের অধঃপতিত দ্রব্যের দিকে
কেমন নিঃসঙ্গ একা ভেঙে পড়া চেহারা তাদের
টেস্টটিউবের দিকে তাকিয়ে অধঃপতিত দ্রব্যগুলোর শেষ দেখতে চাইতাম
বারবার মনে হত এই অধঃপতিত দ্রব্যগুলো আমার মত হেরে যাওয়া মানুষ
বৈজ্ঞানিক কবিতা ১৮
শব্দের চেয়ে আলোর বেগ বেশি
তথাপি আমার চারপাশে শুধু অন্ধকার
শুধু রাতভর গোঙানোর শব্দ
আলো নেই কোন
বৈজ্ঞানিক কবিতা ১৯
গ্লাস ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়
কিন্তু কাচ কাচই থাকে
কাঠ থেকে চেয়ার টেবিল আসবাবপত্র হয়
কিন্তু কাঠ কাঠই থাকে
দৃশ্যমান পরিবর্তন নতুন কিছু তৈরি করে না
কেবল মানুষের পরিবর্তনে মানুষ হয়ত মানুষ থাকে না
বৈজ্ঞানিক কবিতা ২০
চিনি পানিতে দ্রবীভূত হয়ে তৈরি করে দ্রবণ
বাইরে থেকে বোঝা যায় না চিনির উপস্থিতি
মানুষ দ্রবীভূত হয়ে তৈরি করে শিল্প
চোখে পড়ে না মানুষের আত্মত্যাগ।
বৈজ্ঞানিক কবিতা ২১
রোবট যখন সব পারবে
মানুষ তখন রোবট হয়ে যাবে।
বৈজ্ঞানিক কবিতা ২২
রঙিন বৃষ্টিতে এসিড থাকে
আর সেই বৃষ্টিতে মারা পরে অসংখ্য প্রাণ
সাদা বৃষ্টিতে হাসি থাকে
সবুজ পাতারা গেয়ে বেড়ায় গান
বৈজ্ঞানিক কবিতা ২৩
লাল, নীল ও সবুজ থেকেই তৈরি হয় লক্ষ লক্ষ রং
লাল আর সবুজ মিলে হয় হলুদ
নীল আর লাল মিলে হয় ম্যাজেন্টা
সবুজ আর নীল মিলে হয় আকাশি
তাহলে শক্তি আর বৃদ্ধি মিলে কি হয় আনন্দ-উৎসব
কষ্ট আর শক্তি মিলে কি হয় আশা
বিকাশ আর কষ্ট মিলে কি হয় মুক্তি
এত যদি লক্ষ লক্ষ তৈরি হয় রং
তবে কেন উৎসব আশা আর মুক্তি নয়?
বৈজ্ঞানিক কবিতা ২৪
গাছের সতেজ সবুজ পাতা হয়ত জানেনা
এমনকি আমরাও হয়ত
শেকড় এত কষ্ট করে জল তুলে না নিলে
পাতা এত সতেজ হত না
আমরা কেবল পল্লবিত পাতা আর ফুল দেখেই আনন্দিত হই
মনে আসে না শেকড়কে কত কষ্ট করে মাটির নিচে থাকতে হয়
কত গভীরে ছড়িয়ে যেতে হয় জল সংগ্রহে
অথচ কি অদ্ভুত নিয়ম
যেদিন আমরা শেকড়ের দেখা পাই
সেদিন মরে পরে থাকে গাছ
বৈজ্ঞানিক কবিতা ২৫
পানির ধর্ম এই যে সে নিজে নিজে উপরের দিকে উঠতে পারে না
সে সবসময় নিচের দিকে প্রবাহিত হয়
উপরের মানুষকে সে ছুঁইতে পারে না
নিচের মানুষকে সে ভাসিয়ে তলিয়ে দিয়ে যায়
পানির এমনই ধর্ম।
একা সে যায় না কখনো
ডাকাতের মত নিয়ে চলে যেতে চায় সব সে
বৈজ্ঞানিক কবিতা ২৬
আমি জানি আমাদের পথ আটকে রেখেছে যে শ্বেতশুভ্র জাল
সে কুয়াশা নয়
পথে চলতে চলতে কখনো ধোঁয়াশাকেই কুয়াশা মনে হয়।
বৈজ্ঞানিক কবিতা ২৭
পাখিদের পরিব্রজন আর মানুষের অভিবাসন নীতি এক নয়
পাখিরা খাবারের সন্ধানে পরিব্রজন করে
এক দেশ থেকে চলে যায় তারা অন্য কোন দূর দেশে
পাখিদের কোন ভিসা লাগে না
বিমান লাগে না
লাগে না টিকিট
কিন্তু মানুষের লাগে
এমনকি খাবারের সন্ধানে বাসস্থানের সন্ধানে
যে সমস্ত মানুষ এক দেশ থেকে অন্য দেশে যায়
তাদের অনেকে মারাও পড়ে
মরে যাওয়ার আগে হয়তবা
মানুষ আকাশে উড়ে বেড়ানো পাখিদের দেখে
বৈজ্ঞানিক কবিতা ২৮
কিছু চিনির দানা পানি রাখা গ্লাসে ফেলে দিলে
ছড়িয়ে পড়ে ধীরে ধীরে
সুমিষ্ট হয় জল
তোমার হাসিও ছড়িয়ে পড়েছিল সেদিন
আমার সমস্ত শরীরে
মানুষের আনন্দিত মুখ হাসির ব্যাপনে সুখী হয়ে উঠেছিল
শরীরের সমস্ত কনা
মানুষের হাসির ব্যাপন পুলকিত সুখ নিয়ে
কেউ কেউ বেঁচে থাকতে পারে আজীবন
বৈজ্ঞানিক কবিতা ২৯
জল কঠিন তরল বায়বীয় তিন মাধ্যমেই চলতে পারে
কারণ জল মানুষের আরেক রূপ
বৈজ্ঞানিক কবিতা ৩০
গাছ শেকড় দিয়ে পানি শোষন করে
এটি সারা শরীরে যায়
সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরি করে
বাকি পানি প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় বাইরে চলে যায়
গাছ থেকে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে গেলে গাছ মারা যায়
মানুষও কাঁদলে চোখের পানি বের হয়
অতিরিক্ত কাঁদলে মানুষও কি মারা যায়?
বৈজ্ঞানিক কবিতা ৩১
প্রায় সব জীবাণুই আমরা দেখতে পাই না
কিন্তু টের পাই।
অসুস্থ হলে বুঝতে পারি
আমার শরীরে কোন জীবাণুর বসত
এভাবে অলক্ষ্যে কত জীবাণু বয়ে বেড়ায় কত মানুষ
টের পায় না
যখন টের পায়
তখন মানুষের মনুষত্ব ছাপিয়ে হেসে উঠে জীবাণুর লক্ষণ
বৈজ্ঞানিক কবিতা ৩২
যে করেই হোক পরাগায়ন ঘটে
হয় বায়ু না হয় পানি না হয় পতঙ্গের মাধ্যমে
তারপর ছড়িয়ে পড়ে বিজ্ঞানের দর্শন
ফল হয় ফলের বীজ থেকে হয় বৃক্ষ
কিন্তু কেউ জানে না বৃক্ষের নাম
শুধু জানে এ ফল সুমিষ্ট হয়
বৈজ্ঞানিক কবিতা ৩৩
পৃথিবী সকল বস্তুকে তার নিজের দিকে টানে
পৃথিবীর এমনই মায়া
কাউকে সে ছাড়তে চায় না
সে যেইই হোক সে যেন থাকে তার বুকে
যে একবার পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে মহাশূন্যে যায়
সে মহাশূন্যের বুকে উড়তে থাকে
পৃথিবী ডেকেও পায় না তাকে
মৃত্যুর পর আমি মহাশূন্যে উড়তে চাই
পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে চাই দূরে
কেউ কবর দিও না আমায় অথবা পুড়িও না আমার শরীর
অজস্র অজস্র কাল মহাশূন্যের বুকে
আমি চাই একা একা উড়ে বেড়াতে
বৈজ্ঞানিক কবিতা ৩৪
সৌন্দর্য কতখানি রহস্যময় আর ক্ষমতাধর তা আমি জানি
আমি জানি যেদিন চাঁদ অপূর্ব সৌন্দর্য সূর্য আর পৃথিবীর মাঝখানে এসে দাঁড়ায়
সেদিন কালো হয়ে ওঠে সূর্য
আর পৃথিবী অন্ধকারে তলিয়ে যায়
বৈজ্ঞানিক কবিতা ৩৫
শক্তি অবিনশ্বর।
এই যে কাব্যশক্তি
তোমার প্রতি আমার প্রেম
এরও বিনাশ নাই কোন
শুধু রূপান্তর আছে
প্রেম হয়ত সফল হয়নি কখনো
কিন্তু এই প্রেমশক্তি, কাব্যশক্তিই রূপান্তরিত হয়েছে ধৈর্য শক্তিতে শ্রদ্ধায়
শক্তির বিলুপ্তি নেই
তোমার প্রতি আমার প্রেম আর কাব্যশক্তিরও বিলোপ ঘটেনি কখনো
কেবল পাল্টে গেছে
এক শক্তি থেকে আরেক শক্তিতে
সূর্যের আলো থেকে সবুজ বৃক্ষরাজিতে
বৈজ্ঞানিক কবিতা ৩৬
গতি আর স্থিতি কোনোদিন বন্ধু হতে পারে না
কেননা স্থির বস্তু চিরকাল স্থির হয়ে থাকে
আর গতিশীল বস্তু চিরকাল গতিশীল থাকে
বৈজ্ঞানিক কবিতা ৩৭
প্রতিটা বস্তুরই একটি সমান ও বিপরীত মুখী প্রতিক্রিয়া আছে
হয়তবা মানুষের হৃদয়েরও
দেখা যায় যে মানুষকে যত বেশি ভালবাসা যায়
সে মানুষও উল্টো তত বেশি ভালবাসে
অথবা ভাল না বাসলেও ঘৃণা করে না সে
যে মানুষকে যত বেশি ঘৃণা করা হয়
সে মানুষ তত বেশি ঘৃণা করে
এইসব যুদ্ধ খুনাখুনির উৎস তাহলে যুদ্ধ খুনাখুনি
যুদ্ধ খুনের পরিবর্তে ভালবাসাই কেবল পাল্টাতে পারে পৃথিবীকে
পারমাণবিক বোমা নয়
ভালবাসাই হবে পৃথিবীর একমাত্র দামি যুদ্ধাস্ত্র
বৈজ্ঞানিক কবিতা ৩৮
আকাশে জল আর আলো মিলে রঙধনু হয়
মাটির উপর উদ্ভিদে
জল আর আলো সালোকসংশ্লেষণে হয় খাদ্য
যা খেয়ে প্রতিটি প্রজাতি তরতাজা হয়ে উঠে
হয়ে উঠে রঙধনুর মত উজ্জ্বল
দুপুরে নদীর উপর জল আর আলোর খেলা তাই দেখেছি অনেক
দেখেছি চিকমিক আলো কিভাবে হাসতে হাসতে সাঁতরাতে থাকে নদীর বুকে
বৈজ্ঞানিক কবিতা ৩৯
কোন কিছুর কম্পন থেকেই শব্দের উৎপত্তি
বস্তুর কম্পনের আকার প্রকৃতির উপর নির্ভর করে
শব্দটি সুরেলা না অসুর
তোমাকে দেখে আমার কাঁপতে থাকা হৃদয়ের কথা মনে পড়ে
মনে পড়ে আমার হাত ও পায়ের কম্পনও
কি শব্দের উৎপত্তি হয়েছিল সেদিন
কেমন শব্দে বেজে উঠেছিল সে
সুরেলা না বেসুর
মনে নেই আমার
শুধু মনে পড়ে
গাছেদের পাতারাও ঝিরঝির বাতাসে সুর হয়ে
জেগে ওঠে একদিন
বৈজ্ঞানিক কবিতা ৪০
পৃথিবীর প্রতিটি বস্তুই একে অপরকে কাছে টানে
কাছে টানে বলেই আমার মাঝে মাঝে ছাদ থেকে লাফাতে ইচ্ছে করে
আত্মহত্যার ইচ্ছে নেই
তবু আত্মহত্যাকেই প্রলুব্ধ করে মাটির টান
এগিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে চলে আসে অতীত
ভবিষ্যতই বোধহয় কাছে টানে অতীতকে
হয়ত অভিকর্ষ বল
একটি বস্তুর সাথে আরেকটি বস্তুর টান থেকেই হয়ত সৃষ্টি হয় প্রেম
এ শুধু জীবজগতে নয় সমগ্র জড়জগতে
বিন্দু থেকে গ্রহে গ্রহে
সমগ্র মহাজগতে এই টান এই অভিকর্ষ মহাকর্ষ বল
প্রেম হয়ে ফোটে
বৈজ্ঞানিক কবিতা ৪১
জল মাটির উপরে শুয়ে থাকে তারপর বাষ্পীভূত হয়ে আকাশে উড়ে
তারপর ঘনীভূত হয়ে হয় মেঘ
তারপর ধীরে ধীরে তরল হয়ে মাটিতে নামে
মাটির উপরে শুয়ে থাকে আবার
এভাবে পানিচক্র চলে
সকলেই ফিরে বাসায়
সময়ও ফিরে
মানুষও হারিয়ে যায় না কোথাও
ফিরে আসে
হয় দর্শনে নয়ত কারও চেহারায় অবিকল
বৈজ্ঞানিক কবিতা ৪২
হাইড্রোজেন প্রেমে পড়ল অক্সিজেনের
একদিন দুই হাত মিলিয়ে বেড়িয়ে পড়ল তারা
তৈরি হল জল
তারা আর গ্যাস হয় না
যাতে কেউ দেখতে না পায় তাদের
লুকিয়ে লুকিয়ে চলে তাদের এ প্রেম
এ বন্ধন যেন কেউ ছিড়তে না পারে
জল হয়ে ঘুরে বেড়ায় এ প্রান্তর থেকে ও প্রান্তর
পৃথিবীর পথে পথে ঘুরে বেড়ায় তারা
যতদিন পর্যন্ত প্রেম থাকবে তাদের
ততদিন পর্যন্ত প্রাণ থাকবে পৃথিবীতে
বৈজ্ঞানিক কবিতা ৪৩
বস্তু থেকে আলোকরশ্মি বিচ্ছুরিত হলেই
সে বস্তু দৃশ্যমান হয়
সেই আলোক তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের ওপর নির্ভর করে নানা বর্ণ
কোনোটা লাল কোনোটা নীল কোনোটা বেগুনি
কোনো বস্তু দেখতে চাইলে
সেই বস্তু থেকে আলোক বিচ্ছুরণ প্রয়োজন
শুধু সৃষ্টি নয় সৃষ্টির সাথে প্রয়োজন আলোকচ্ছটাও
বৈজ্ঞানিক কবিতা ৪৪
শীতকালে গাছেদের পাতা ঝরে যায়
ঝরে যেতে হয়
কেননা মানুষের মত গাছেদের বেদনাও বাষ্পীভূত হয়
অত অত বেদনার বাষ্প হতে শক্তি লাগে
কত আর মনের জোর থাকে বল
শতসহস্র পত্রপল্লব ফুটিয়ে কে চায় জুবুথুবু হয়ে বসে থাকতে বেদনায়
তাই শীতকালে গাছেদের পাতা ঝরে যায়
বৈজ্ঞানিক কবিতা ৪৫
আমি জানি একটি ক্ষুদ্র কণার বিস্ফোরণ থেকেই মহাবিশ্বের সৃষ্টি
সমগ্র মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে ক্ষুদ্র একটি বিন্দু থেকে
যে কোন ক্ষুদ্র ছোট্ট ভালবাসাকেই আমি বড় করে দেখি
বড় করে দেখি একটি ক্ষুদ্র শব্দ বা দৃশ্যকেও
হয়ত এখানেই লুকিয়ে থাকে
বড় কিছু মহান কিছু
যা মানুষ সারাজীবন হন্যে হয়ে খুঁজে
বৈজ্ঞানিক কবিতা ৪৬
সোডিয়ামের সাথে ক্লোরিন মিশে হয় সোডিয়াম ক্লোরাইড
সোডিয়াম ক্লোরাইডের ধর্ম
সোডিয়ামের সাথে মেলে না মেলে না ক্লোরিনের সাথেও
এ পরিবর্তনের নাম রাসায়নিক পরিবর্তন
মানুষেরও কি রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে
এমন পরিবর্তন যা পূর্বের কোন কিছুর সাথেই মেলে না তার
বৈজ্ঞানিক কবিতা ৪৭
* চুম্বক লোহার গায়ে আটকে থাকে
কারণ চুম্বক জানে তাকে লোহার মত শক্তিশালী হতে হবে।
* সমধর্মী বিকর্ষণ করে বিপরীত ধর্মী আকর্ষণ করে
এ শুধু চুম্বকের নয় মানুষেরও ধর্ম
গরীব গরীবকে পছন্দ করে না
ধনীলোক ধনীলোককে
কিন্তু গরীবের ধনীলোক প্রয়োজন হয়, ধনীলোকের গরীব।
বৈজ্ঞানিক কবিতা ৪৮
মাকড়সার জাল বাড়ছে
বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত হচ্ছে নেটওয়ার্ক
তৈরি হচ্ছে নতুন সম্পর্ক
আমরা মশার মত আটকে আছি তার জালে
বৈজ্ঞানিক কবিতা ৪৯
মানব জন্মের আগেই জম্ম নেয় হৃদপিন্ড
হৃদয় দিয়ে ধীরে ধীরে তৈরি হয় মানুষ
এক সময় ভূমিষ্ঠ হয়
হৃদপিন্ডের চার প্রকোষ্ঠের বিরাম নেই কোন
ক্রমাগত চলে রক্তের ক্ষরণ আর রক্ত সঞ্চালন
একবার ডান অলিন্দ থেকে নিলয়
আরেকবার বাম অলিন্দ থেকে নিলয়
তবু কোন কোন মানুষের হৃদয় থাকে না কোন
তবু কোন কোন মানুষের হৃদয় ব্লক হয়ে যায়
মরে পড়ে থাকে একা ঘরে।
বৈজ্ঞানিক কবিতা ৫০
পৃথিবীর প্রতিটি প্রজাতি একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল।
বৈরীতা নেই।
বরং আছে একটি প্রজাতি বাঁচানোর জন্য আরেকটি প্রজাতির আত্মত্যাগ।
হরিণ স্বেচ্ছায় নিজের মাংস নিজেই তুলে দেয় বাঘের মুখে।
যে কোন এক প্রজাতির বিলুপ্তি
নির্ভরশীল প্রজাতির মৃত্যু ডেকে আনে।
ধীরে ধীরে সমস্ত জীবের।
যে কোন এক প্রজাতির বেঁচে থাকা নির্ভরশীল প্রজাতির প্রাণ ফুটিয়ে তোলে।
ধীরে ধীরে সমস্ত জীবের।
আমি জানিনা পৃথিবী কোনদিকে যাবে।