আমি একবার গিয়েছিলাম তারাপুর বেড়াতে,
চিলগুলো ডাকছিল উড়তে উড়তে।
নাতি বলরাম ছুটে এসে বলতে লাগলো,
ঘরে যাবে বলেছিলে, খাওনি এখনো?
বললাম- "তারাপুরের ঘরে আছিতো এখনো,
তার জন্য ব্যতিব্যস্ত হচ্ছো কেনো এতো?
তারাপুরের ঘর আর আমাদের ঘর কি এক হলো?
তাহলে ঘরের বিবরণ তুমি বুঝিয়ে বলো;
বললাম- "দাদাভাই, আমি অতো কি জানি?
তোমার প্রশ্নের উত্তর দিব জানি যা আমি"
ঘর হলো দু প্রকার -কাঁচা ও পাকা,
কাঁচা ঘর মাটির, তাতে কোনরকমে বাঁচা।
পাকা ঘর ইটের দেওয়াল, ছাদ হলো ঢালাই,
এতে মাটি বাঁস খড়ের নেই কোন বালাই।
গোয়াল ঘরে গরু থাকে, করে তারা চাষ,
কল ঘরে মেশিন চলে, বাস ঘরে বাস।
আর আছে ধনীদের চণ্ডীমণ্ডপ বৈঠক খানা,
এখানে সকলে বসে আলোচনা হয় নানা।
আদিম যুগে বনের মানুষ থাকতো পাতার ঘরে,
ঝড়-বৃষ্টি প্রবল হলে, ঢুকতো পর্বত কোঠরে।
নাচ ঘর ছিল না তাদের নাচতো বনের মাঝে,
খাবার ঘর ছিল না তাদের খেতো বাস ঘরের কাছে।
গরিব মানুষ সুখে থাকে কুঁড়ে ঘরে,
রোদে পুড়ে জলে ভিজে সারাদিন কাজ করে।
দালান ঘরে কর্মচারীরা থাকে আরাম করে,
সারাদিন কলম ঠেলে সরকারি অফিস ঘরে।
কোটিপতি জমিদার থাকে দালান ঘরে,
আদাই কারি চৌকিদারদের পাঠায় দ্বারে দ্বারে।
পাখি থাকে যে ঘরে, তাকে বলে নীড়,
মানুষকে ভুতে ধরলে করতে হয় তদবির,
ঘোড়া থাকে যে ঘরে তাকে বলে আস্তাবল,
খুঁটি পুততে গেলে দরকার হয় শাবল।
পুরুত মশাই পুজা করে ঠাকুর ঘরে,
আরতি করে পুরুত মশাই পঞ্চ প্রদীপ ধরে।
হিন্দু মতে ঠাকুরঘর কে বলে মন্দির,
ঠাকুরকে ভজতে গেলে হও ধীর-স্থির।
মুসলিম ভাই আল্লাহ ডাকে মসজিদ ঘরে,
দেহ মন স্থির রেখে পবিত্র পোশাক পরে।
খ্রিস্টান ভাই ঈশ্বর ডাকে গির্জা ঘরে,
ঈশ্বর পদে মন রাখে, অসৎ চিন্তা দূরে।
বাবুই পাখি বাস করে নিজের গড়া বাসায়
চড়ুই পাখির ঘর নেই, থাকে পরের কোঠায়।
মামার ঘর মামার হয়, কাকার ঘর কাকার,
এসব ঘর কখন ও হয়নি আমার।
দালান হোক পাকা হোক, ঘরটি হলো কেষ্টোর,
কুঁড়ে হোক, ভাঙা হোক, নিজের ঘরেই শ্রেষ্ঠ।
রচনা - 23/07/2017