**মেয়েরাও মানুষ**
✍️ডঃ উৎপল গিরি

মেয়েরা ও মানুষ;
যাদের মুখ, চোখ, বক্ষ বিভাজিকা
প্রতিদিন দেখেন আপনি;
কেউ শুধু দেখেন শরীর,
আরো অনেক কিছু
যাদের আপনি দেখেন
প্রতিদিন ট্রামে -বাসে  
যাদের শাড়ির সেলাই, কানের ঝুমকা,
পায়ের গোড়ালি,  
এগুলো আপনার চোখ ছুঁয়ে
চলে প্রতিটি মুহূর্তে।  
তবে মাঝে মাঝে চোখে যাদের স্বপ্ন আসে,  
যাদেরকে আপনি ভাবেন আরো কিছু হতে।  
এটাই তো সবার গল্প,  
আমিই সেই মেয়ে।

দূরের গ্রামে, মাটির ঢিবি পেরিয়ে,  
একমুঠো আলো আঁধারে,  
যেখানে আপনার পাপ হয়ে ওঠে,  
যেখানে রাতে ফেরত আনা হয়
বস্তির অন্ধকার থেকে ;
সে মেয়েটাই তো আমি।  
আমিই সেই মেয়ে।

এখনও অনেক কিছু দেখবেন,  
জঙ্গল আর পাহাড় পেরিয়ে,  
যেখানে আপনার অমৃতরূপী
রাত কাটাতে মন চায়,  
কোন এক উজ্জ্বল বেদিতে,  
যে মেয়ে শাড়ি খসে গিয়ে
মেলে দেয়  নিজের শরীর।  
আমিই সেই মেয়ে।

রূঢ়তার ভেতর, ঝর্ণার কাছে,  
আমিই সেই মেয়ে— যে বহু মাইল
পায়ে হেঁটে নিয়ে আসে  
গরম পানির গামলা,  
আর ফিরে এসে, পেটের তাগিদে  
আপনার আগুনে রুটি পাকায়।  
এটি শুধুই নরম কথা নয়,  
এটাই বাস্তবতা—  
আমিই সেই মেয়ে।

যেখানে আপনি ফাঁকিবাজিতে মগ্ন,  
তখন শহরের আকাশের নিচে  
যত গাঢ় অন্ধকার,  
যত চূড়ান্ত ন্যায়ের বিচার  
আমার শরীরেই ঘটে,  
আমিই সেই মেয়ে।

এখন যদিও চাপা পড়ে যায় মুখ,  
রবিবারের রঙীন আলোয়  
শাসনের ভার, তোমার কানে শোনা যায়,  
“তোমরা মাদারির মতো পথ চলো,  
তোমরা তাদের পা মাড়াও।“  
তবে কেউ জানে না,  
আমিই সেই মেয়ে।

তবে কি একদিন নয়— এক দিন,  
অদৃশ্য আলোয় ভাসিয়ে দেওয়া হবে  
আমার শির,  
ফুলঝুরি আলোয় চমকিত চোখ,  
কর্ণ ফোটানোর আগেই  
তবুও কেউ কথা বলবে না,  
আমিই সেই মেয়ে।  

এভাবেই আমি আলো হয়ে উঠবো,  
গায়ে পরানো থাকবে জলন্ত আগুন,  
চোখে জ্বলবে মশাল
মাথায় ভাসবে পবিত্র আগুনের রথ।  
নুপুরের আওয়াজে ফিরবে
  শহরের ইতিহাস,  
আমি এগিয়ে যাবো—  
আর আশপাশে পড়ে থাকবে  
এমন এক ঘৃণ্য সভ্যতার দেহ,  
যাকে আমি ছিন্নভিন্ন করে দেবো  
আমিই সেই মেয়ে।

**হয়ত, আমিই সেই মেয়ে।**