আমি আশিটি বছর বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখি না
আমার ভালো লাগে না।
সত্তরের পর শরীরের ভার আর পাহাড় এক হয়ে যায়
বাঁধাই করা দাঁতের পাটি, বুকের ভিতর দুটো রিং, ডায়াবেটিসের স্কেলে চোখ রেখে আহার
প্রিয়তমার গুছিয়ে আসা শরীর চোখে হারিয়ে যাওয়া সমাজের রুপ, গন্ধ
আমার ভালো লাগে না।
দীর্ঘ জীবনে বুকের সকল অলিতে-গলিতে দীর্ঘ দুঃখের সাথে বসবাস
ততদিনে চলে গেছে বাবা, মা, ভাই কিংবা বোন, আড্ডা দেয়ার বন্ধুজন
এমনি কি নিজের হাতে মাটিতে গেড়ে দিয়েছি দু- একটি ছেলেমেয়ের মৃত শরীর....
আমার ভালো লাগে না।
পুরোনো সিমেন্ট দেয়ালের গায়ে আটকে থাকতে গিয়ে ঝরঝর করে পড়ে যায় মাটিতে
মিশে মাটি হয়
আবারও নতুন সিমেন্ট আনা হয় মাখানো হয় নতুন পেইন্টিং দেয়াল হয়ে ওঠে জীবন্ত
মাটির খবর কেউ রাখে না
অফিসের হাজারটা ফাইল সামলিয়ে,
হাজারো কাজের সমুদ্রে ডুবে
শত শত পরিকল্পনা কত কত স্বপ্ন
যত্নে গড়লাম প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ......
অবশেষে বাড়ির পাশে চায়ের দোকানে বসে বসে ভাবছি রিটায়ার্ডের পর
আমৃত্যু অবসরে বুনছি সিমেন্টের মাটি হাওয়ার গল্প।
নিজের ভারেই বিদ্রোহ করে ওঠে দুটো পা
আর হয়তো বইতে পারবে না
তবুও একটা লাঠি দিয়ে শাসিয়ে রাখি প্রতিদিন
গুছিয়ে আসা চামড়ার ভিতর থেকে আর ঘাম বের হয় না
আকাশে প্লেনের গতির মতোই মানুষের স্রোত
চোখের তৃষ্ণা নিবারনের বৃথা চেষ্টা
আমারও ছিল
কিন্তু কোথায় যে উবে গেল সব।
দীর্ঘ জীবনের দীর্ঘ সংগ্রামের চাপে ভালোবাসাকে ভুলে গেছি
কখনও চোখ বোলানো হলো না জীবনানন্দ দাশের ঝরা পালক রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতা
ছেলেমেয়ের স্বপ্নের ভারে জ্বলতে জ্বলতে নিভে গেল আশিটি বছর
আমার ভালো লাগে না।