একটা বেঞ্চিতে বসে আছি
হাতে একটা ছোট্ট ব্যাগ
ফিরছি ঢাকা থেকে।

দিন টি ঠিক মনে নেই কত তারিখ
অতীত নেড়ে নেড়ে ভাবছি সব....
কত আনন্দ কত আড্ডা বাজি
গানটা যদিও গলায় কখনো বসে নি তবু
বন্ধুদের আড্ডায় রেওয়াজ চলতো হরহামেশাই
আজকাল শুনি বন্ধুদের ছেলে মেয়েরা ইউনিভার্সিটিতে পড়ে
কেউ কেউ নাতি নাতিন নিয়ে মাতামাতি।

একটা জব করি
থাকি একতলা ফ্ল্যাটে একা
সঙ্গী বলতে হারমোনিয়াম, গিটার, অসংখ্য বই
আর কিছু ভাঙা ভাঙা  স্মৃতি।

সবচেয়ে সেই ব্যাপারটা আমাকে নাড়তো
ভুলতে পারি না কখনো
জব নেই, কাজ নেই, মাথার ওপর পরিবার
যেদিন শুনলাম আমি ডিসি অফিসের পিওন
নেমে গেল বরফ গলা পানির মতো চিন্তার ভার।

নৈতিকতার কারণে পরিচয় হলো অভাব অভিযোগ
পারিবারিক দ্বন্দ্ব কোলাহল
চারদিকে বিবাহ বিচ্ছেদ পরকীয়া
অবিশ্বাস ঘৃণা নিয়ে বেঁচে থাকে প্রতিটি মানুষের
ক্লান্ত ক্লিষ্ট মন
কেবল অশান্তি অশান্তি......
আমি একা আছি বেশ আছি শান্ত আছি শান্তিতে আছি।


এই বাদাম লাগবে বাদাম.....
চা খাবেন দাদা চা.... ( চমকে উঠি, পিচ্চি টা আর সময় পেল না! একটু অবসর পেলেই হলো এক ঝাঁক চিন্তা ভর করে মাথায়।)
ওয়ান টাইম কাপে রং চা বেশ জমে
মাথার ভাষা বুঝতে দেরি হলো না পিচ্চিটার
চুমুক দিয়ে তাকিয়ে আছি
কোলাহলের মাঝে অপেক্ষা কেবল একটা ট্রেনের
কমলাপুর রেলস্টেশন।

ট্রেন এলো
এলোপাতাড়ি ছুটছে লোকজন
আমি পিওন বয়স পঞ্চান্ন
আমার আছে যথেষ্ট অবসর
সবার শেষে কোনো রকমে বগিতে উঠে
হাঁপাতে হাঁপাতে হুর মুর করে পড়ে গেলাম
একটি মেয়ের ওপর
তাকিয়ে দেখি একটি ফুটফুটে আঠারো বছর বয়সী যুবতী
" আমি একেবারেই খেয়াল করি নি আপনাকে, আপনি খুব ব্যথা পেয়েছেন তাই না, সরি"  বলে আমাকে ওঠালো।

কি মায়া ছিল সেই হালকা স্পর্শে
কি ছিল সেই মায়াবী কন্ঠস্বরে জানি না
কেবলি মনে হলো এক ধাক্কায়
সারা জীবনের ফিলোসোফি নড়ে গেল আমার।






উৎসর্গঃ তসলিম হাসান জীবু
( কবি, লেখক, গীতিকার, সুরকার, শিল্পী, শিক্ষক)