আবার ফিরিলেন কবি শতবর্ষ পরে
নয়ত শঙ্খচিল, নয়ত ভোরের কাক হয়ে,
তিনি ফিরিলেন এই বাংলায় শালিখের বেশে
দেখিতে আবার বাংলার রূপ এই নবান্নের দেশে।
নিমিষেই গেলো বাতাসে ভেসে কবির আগমন ধ্বনি,
প্রকৃতির অনেকেই বুঝিয়াছে তাহা, মানুষেরা কেউ বুঝেনি।
বুঝিয়াছে অকপটে শালিখদের কতিপয়
কালচক্রে এখনও যারা টিকে আছে এ ধরায় ।
বরণ করিবে কবিকে তারা অপার শ্রদ্ধায়,
ক’রে সভা আয়োজন কুয়াশায় ঢাকা এক কাঁঠাল ছায়ায়।
আনন্দধারা বয়ে চলেছে
বাংলার নদী-মাঠ-ক্ষেতে আকাশে বাতাসে,
নতুন ক’রে কবিকে আবার ফিরে পেয়ে সকাশে।
সহসা মনে এক শঙ্কার উদ্রেকে
বিচলিত শালিখেরা প’ড়ে যায় বিপাকে-
কি কহিবে কবিরে তারা ?
যদি তিনি শুধান তাদের সকাশে-
কোথা সেই শঙ্খচিল, কোথায় লক্ষ্মীপেঁচা ?
কোথা সে ধবল বক?
কোথা সেই মিষ্টি সুরে গাওয়া শ্যামার গান?
মেঘেরা কি ঠিক সময়ে ফিরে আসে নীড়ে?
শিশুরা কি খেলে সবে উঠোনের ঘাসে?
কিশোর কি ডিঙ্গা বায় শাদা ছেঁড়া পালে?
এতসব প্রশ্নের তরে--
শালিখেরা ভাবে- “সত্য বলিব যাহা ঘটিয়াছে কালের বিবর্তনে”।
বলিব উঁহারে- পড়ে না চোখে শঙ্খচিল, বিলুপ্তির পথে লক্ষ্মীপেঁচা,
হারিয়ে গেছে আরও কত বিচিত্র পাখিসব
প্রতিকূল পরিবেশের তীব্র রোষানলে;
হয়ে গেছে ম্লান, ক্বচিৎ টিকে থাকা শ্যামার মিষ্টি সুরের গান,
জলহীন ঝিলের ধবল বকেরাও এখন বিরলে।
এতসব কহিবার পরও যদি কবি চান - ইহাদের দেখিতে,
লইয়া যাইব তাঁহারে কোন এক চিড়িয়াখানায়-
হয়ত বা হতেও পারে দেখা কারো কারো সাথে !
কহিব কবিকে বিনয়ের সাথে -
এখন আর ফোটে না ফুল শাপলার বিলে,
শুকিয়ে গেছে জলরাশি,
নেই সেথা বিচিত্র মৎস্য রাশি রাশি,
নেই মাছরাঙা, সুইচোরা,
বিদায় নিয়েছে সকল কাম, কোড়া, ডাহুক পাখিরা।
সেখানে এখন আবাদ হয় উফশী বোরো ধান্য,
যোগাতে অন্ন পাঁচগুণে বেড়ে যাওয়া মানুষের জন্য ।
রাঙ্গা মেঘেরা এখন আর ফিরে নাকো নীড়ে সঠিক সময়ে
মতিভ্রম হয়েছে তাদের জলবায়ুর তুমুল পরিবর্তনে;
শিশুরা খেলে না আর উঠোনের ঘাসে,
কিশোর না বায় ডিঙ্গা শাদা ছেঁড়া পালে,
উহারা এখন খেলে ইশমার্ট মুঠোফোনে।