আমি একটি ছোট্টো মেয়ে,
এই মনে কর অনামিকা।
এমন মেয়ে হাজারও আছে বাংলাদেশে,
তাদের কেউবা জ্ঞানী কেউবা রাজা।
কেউবা তাদের নাম গোত্রহীন সমাজের একটি বোঝা।
তাদের খোঁজ কেউ পায় না,
কেউ পায়নি কোনো দিনই।

আমি সেই ছোট্টো মেয়েটি
যাকে জন্মানোর পর দেখতে এসেছিল কত জ্ঞানীগুনী
আর যার নামকরনে সভা ব’সেছিল
যে ভাত খাবে বলে হাজির হয়েছিল
দেশের সব তাবড় তাবড় রথী মহারথী।

হ্যাঁ আমি সেই ছোট্টো মেয়েটি,
ছোটোবেলায় যার খুব ইচ্ছে করত মিষ্টি খেতে।

একদিন কি হল জান?
পিসির সাথে দোকানে গেলাম মিষ্টি কিনতে
দোকান কাকু বললো, ও! তুমিই সেই ছোট্ট সোনা!
যার জন্য কাকু রোজ নিয়ে যায় সীতাভোগ না হয় মিহিদানা।

আমি শুনে অ-বা-ক হলাম!
আসল সত্যিটা বুকে চেপে-
অনেক জোর দিয়ে বলার চেষ্টা করলাম
হ্যাঁ মানে - হ্যাঁ মানে- আ-মি-ই তো
বাড়িতে একমাত্র ছোট্টসোনা।
আমি ছাড়া বাড়িতে কে আর খাবে মিহিদানা?
ও হ্যাঁ , জান !
আজ কিন্তু কোনো মিষ্টিই খাই না।
কেউ যত্ন করে খাওয়ালেও
কিছুতেই আর খেতে পারি না।

আমিই সেই অনামিকা
যে আজ একা -বড় একা-
বাবা তার পেশায় প্রযুক্তিবিদ, মা চিকিৎসক ।
তাই ওরা দিনের শেষে ফিরে এসে
ভরিয়ে দিতে চাইত আমার যা কিছু
সব -এক নিমেষে।

আমি তখন হচ্ছি মানুষ-
এ যুগেরই এক যৌথ পরিবারে।
যেখানে আছে আমার সব আপনজন
তাদের কারোর বা হাতের ব্যামো
কারোর বা বাতের ব্যামো!

আমি তাদের কাছে গেলেই
চেচিঁয়ে বলে- ধোরো না- ধোরো না- ধো-রো-না-
তোমার হাত আর সারবে না।
সারাদিন তো খেটেছো অবিরাম
তাই নাও এখন একটু বিশ্রাম।

অথচ আমি কিন্তু জানি,
ঐ হাতেই দেয় খাইয়ে
যদিও সে আমার চেয়ে একটু ছোটো মেয়ে।

আসলে আমিও চাই -
ওরা পড়শির জন্য করুক
আমার বদলে আর পাঁচজনের জন্য করুক,
তাতে ওদের সুনাম হবে।
লোকে ওদের সুখ্যাতি করবে।
কিন্তু আমার জন্য করে ওদের কি লাভ?
লোকে বলবে যা তুমি করেছো
সে তো নিজের জন্যই করেছো!

তাই আমি বলছি আ-আ-মি ভালো আছি
খু-উ-ব ভালো আছি।
কিন্তু ঈশ্বরের দোহাই এতো ভালো আর
যেন কাউকে কখনও না থাকতে হয়!