অসুখ !
তোমার আবার শরীর খারাপ !
এই তো বেশ আছো !
ঘুরছ, ফিরছো, হসপিটাল যাচ্ছো !
বাজার করছ, আবার মেয়ের -
তদারকিও করছো !
আর আমি যদি বলি -
ক'টা দিন চালিয়ে নিতে ,
ক'দিনের জন্য মা'র কাছে যাব -
একটু বেড়াতে ।
তখনই তুমি বললে -
কি করে পারবে তুমি সামলাতে ?
জান ! এই বাড়ির কেউ -
আমাকে কিচ্ছু বলার সাহস রাখে না।
আর তুমি আমাকে বললে -
তোমার শরীর খারাপ ,
তুমি পারবে না !
ছাড়িয়ে যেওনা -
আমার সহ্যের সীমানা।
আমি চললাম।
তোমার বাড়ির কেউ -
আমাকে কিচ্ছু বলবে না।
তুমি যতই কর আস্ফালন ,
জেনো আমার হাতেই -
তোমার বাঁচন মরণ।
যদি বাঁচতে চাও -
আমাকে কুর্নিশ কর ।
আমার সাথে কম্প্রোমাইজ কর ।
না'হলে একদিন তুমিই যাবে মুছে -
তোমার আত্মীয়-অনাত্মীয় সকলের কাছে ।
আর আমাদের শাখা-প্রশাখা পরবে ছড়িয়ে -
তোমাদের এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে।
এই বাড়ির সবাই জানে -
আমাকে ছাড়া তাদের চলবে না ,
অথচ তোমার জন্য, কিন্তু কিছুই পড়ে থাকবে না।
তাই, তুমি থাক বা না থাক -
তোমার মেয়ের তাতে কিচ্ছু যায় আসে না।
তুমি কি জানো !
জন্ম থেকেই মেয়ে তোমার জেনেছে -
মা তার নাম মাত্র আছে ,
মা'য়ের যা কিছু কর্তব্য -
মা বাদে প্রত্যেকে করেছে।
তাই আমাকে গলা উঁচু করে বলার -
কে দিল ? তোমাকে অধিকার ?
হাজার-বছর ধরে, বহু প্রতীক্ষার পরে -
যে ঐশ্বর্য এল আমার ঘরে ,
তাকে ফেলে, যেতে হয় যে মা'কে -
তার মতো ভাগ্যহীনা, কে আছে এ পৃথিবীতে ?
মেয়ের জন্মের পর-
প্রথম যেদিন হসপিটালে যোগ দিলাম,
মেয়ের বয়স তখন সবে একমাস।
এমনই রোগীর চাপ -
ঘুম তো দূরের কথা ,
শরীরটা'কে বিছানায় রাখার ভাবনাও -
করতে পারিনা সারা-রাত।
তারপর ছুটি মেলে -
পরদিন অপরাহ্নে ,
সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তখন -
ক্লান্ত-অবসাদে।
বাড়ি ফিরে দেখি এসে -
সকলেই নাভিশ্বাসে ,
সমস্বরে বলে সবে -
এবার তোমার পালা ।
আমাদের ছুটি দাও -
তুমি এই বেলা !
একবারও কেউ ভাবেনি সেদিন -
তারা যা'কে বলছে সেও ,
হয়নি সুস্থ তখনও ।
সারারাত সেও তো করে'নি এক -
দু'চোখের পাতা !
না হয় দু দন্ড তারে -
দিলাম একটু অবসর।
তার পর দিন রাতে -
সে-ই তো সামলাবে !
না থাক্ !
এসব ভাবতে নেই ,
এসব কথা বলতে নেই ,
আমি তো আমারই জন্য করেছি।
আজ তাই ভাবি ব'সে -
মায়ের কর্তব্য তবে মা বাদে সবাই করেছে !