আজ একটা গল্প বলি।
কোনো এক অখ্যাত গাঁয়ের একটি মেয়ের গল্প।
মনে কর, তার নাম কথাকলি।
আসলে ঐ নামেই তাকে ডাকে গাঁয়ের লোকে।
সেই যখন থেকেই মুখে ওর ফুটেছে বুলি।
যা কিছু দেখে- তাতেই ওর প্রশ্ন কৌতূহলী !
কেউবা-
সেই প্রশ্নের সমাধান সহাস্যে দেয় ওকে বুঝিয়ে।
আবার কেউবা বলে -
এত অনর্গল প্রশ্ন কেন এক মেয়ের মুখে ?
কোনো অসত্য অন্যায়ের সামনে সকলেই যখন নীরব -
কথাকলি সেখানে দীপ্তকন্ঠে সরব।
ওর এই বাগ্মিতায় না পসন্দ্ -
এমনকি যারা ওর শিক্ষক !

তাদের মতে-
মেয়ে হবে সুশীলা ,
সব কিছুকে মাথা নিচু করে অনায়াসে নেবে মেনে নীরবে।
কোনো প্রতিবাদ করবে না।

কিন্তু কথাকলি !
সমস্ত কথায় অনায়াসে সম্মতি!
এ তো স্তাবকতার স্তুতি!
তাই ওর যুক্তি বুদ্ধির তুল্যমূল্যে -
যা কিছু নয় সঠিক, সেখানেই ওর প্রতিবাদ !
যদিও সে জানে এই প্রতিবাদের অনেক মূল্য-
চুকিয়ে দিতে হবে ওকে !
হারাতেও হবে অনেক কিছু !

এরই জন্য, ওর শিক্ষক ছিল যারা -
ওর প্রতিবাদী কণ্ঠ রুদ্ধ করবার জন্য -
ওকে সামাজিক ভাবে বয়কটের ডাক দিয়েছিল তারা !
ওর জন্য নির্ধারিত হয়েছিল-
ক্লাসের শেষ সীমানায়- একাকী একটি বেঞ্চ !
যদিও সে- ই ছিল, কিন্তু ঐ ক্লাসের সেরা !

ওরা শিক্ষক !
ওরা শিশুর ভবিষ্যৎ গড়ার কারিগর।
শিশুকে অন্ধকার থেকে আলোর ঠিকানায় -
পৌঁছে দেবার শপথ নিয়ে ওরা এসেছে শিক্ষার আঙিনায় !
ওরাই সেদিন -
কখনো ব্রিটিশের বিভাজন নীতি প্রয়োগ করে-  
মেয়েটিকে বন্ধুবিহীন করে দিয়ে ,
ক্লাসের সকল পড়ুয়াদের থেকে আলাদা করে-
ওকে করেছিল নির্বাসিত।
কখনও বা গোয়েবেলের থিওরি প্রয়োগ করে -
ওর মনোবলকে করে দিতে চেয়েছিল নিঃশেষিত।
কথাকলির কথাকে'ই-
ওরা কেড়ে নিতে চেয়েছিল আজীবনের জন্য।

আর এভাবেই কত ফুল, প্রস্ফুটিত হবার আগেই-  
কুঁড়ি অবস্থাতেই ঝরে যায় !
কত ঈশান হারিয়ে যায় !
খবরের কাগজে ওঠে নাম আত্মহত্যার শিরোনামে।

কিন্তু আমি যার গল্প বলছি -
তার কিন্তু, ভাগ্যদেবী ছিল অত্যন্ত সুপ্রসন্ন।
তাই ওদের মনোবাঞ্ছা হয়নি পূর্ণ !
ও যে পেয়েছিল ওর নিকুম স্যার'কে-
অর্থাৎ ওর নিকুম দিদিমণি'কে।
ভাগ্যদেবী সেদিন নিকুম দিদিমণি রূপে -
এসে দাঁড়াল ওর পাশে।
ঠিক যেমন ঈশান পেয়েছিল নিকুম স্যার'কে।
হয়ে উঠেছিল তারেজমিনপরের আকাশের তারা!
ঠিক তেমনি ভাবেই -
ওর নিকুম দিদিমণির স্নেহের ছোঁয়ায় ,
পেয়েছিল এক হিমেল পরশ ওর ক্ষত-বিক্ষত মনটা'য়।

তাই তো সেদিন, ওর জীবন থেমে যায় নি !
বুঝতে পেরেছিল জীবন গতিময়।
জীবন, হেরে যাওয়ার জন্য নয়।
জীবন, যুদ্ধে জয়ী হবার জন্য -
জীবন'কে এগিয়ে যেতে হয়।
চড়াই উতরাই অতিক্রম করেই পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছাতে হয় !

এই মন্ত্রেই হয়ে দীক্ষিত ,
গাঁয়ের মেয়ে কোন্ অখ্যাত -
খুঁজে পেল জীবনের পরম সত্য।

সেই সত্যকে ভর করে -
সফলতার সকল সিঁড়ি পার করে ,
আজ হয়েছে- সে জীবনে প্রতিষ্ঠিত।

আর ওদের বিভাজন নীতির পৃষ্ঠপোষক ছিল যারা-
কোথায় মিলিয়ে গেছে তারা !
কথাকলির কথা -কিন্তু আজও হয়নি সারা !