।।লোডশেডিং।।

।।পিয়ালী চ্যাটার্জী।।


 এখন তো সব জেনারেটর আর ইনভারটরের যুগ,
ঘরেবাইরে হাজার ওয়াটের বিজলিবাতির মুখ।
পড়তে বসা সন্ধ্যাবেলায় হাত মুখ সব ধুয়ে
বইয়ের পাহাড় সামনে,আমি খাটের উপর শুয়ে।
মা বলতো চেয়ারে বস্ আর পিঠটা রাখ সোজা
আমার তখন বইয়ের ভিতর ফাঁকি র রাস্তা খোঁজা,
এমন সময় ঝুপ্ করে সব পাড়ার যত আলো
নিভলো সাথে বন্ধ হাওয়া,আঁধার নিকষ কালো।
উফ কি মজা তখন থেকে ভাবছি মনেমনে
লোডশেডিং আজ হবে?পড়া বন্ধ কতক্ষণে!
তৈরি ছিলো মাও যেন লন্ঠনটা হাতে,
জ্বললো আলো,কেরোসিনও মজুত ছিলো তাতে!
"উফ্ মা,এখন অন্ধকারে পড়ার কথা থাক,
সেই সারাদিন ব্যাস্ত থাকো ,এইতো পেলে ফাঁক।
তারচেয়ে মা গল্প করি কিংবা ধরি গান।"
"থামবি এবার,তোর ও কথায় দিচ্ছিনাতো কান!
হাতপাখাটা ঘুরাই এবার,পড়তে বসবি তুই?"
"চলোনা  মা,আজকে গিয়ে ছাদের উপর শুই।
লোডশেডিং এ দারুণ লাগে দূরের আকাশটাকে,
তারা গোণার সময় কোথায় হাজার কাজের ফাঁকে!
আকাশ কত গভীর কালো,আজকে অমার রাত!
থাকনা পাশে তালপাখাটা,জুড়োক তোমার হাত।
লন্ঠনটা কমিয়ে জ্বালাও,কাঁচের গায়ে কালো,
শুধুই তো মা দেখবে আকাশ, লাগবেনা তো আলো"।
"থামবি এবার,আকাশ দেখা? কেবল ফাঁকিবাজি?
অঙ্ক সেরে ভূগোলটা পড়,ধরবো পড়া আজি।
মোমবাতি টাও জ্বালিয়ে দিলাম,দূরের থেকে পড়,
চোখটা দেখিস,পিঠটা সোজা, বইটা দূরে ধর।"
হাতপাখা আর মোমবাতিতে চললো মারামারি!
আমার তখন মনেমনে মায়ের সঙ্গে আড়ি।
এমন সময় ঝুপুস্ করে জ্বললো পাড়ার আলো,
কেউ বোঝেনা অন্ধকার টা কতটা জমকালো!
আজকাল তো ইনভারটর জেনারেটরের জুগ
নিওন আলোর ভিড়ে হারায় অন্ধকারের মুখ।
রাত তো শুধু চোখ বুঝলে ঘুমের ঘোরে আসে!
অমার রাতে আজও আকাশ তারার আলোয় হাসে।
কিন্তু তখন অঙ্ক চাপে রইলো বাকি দেখা,
আর এখন দেখো সুলভ আলোয় রাতের আকাশ একা।

(১৭/০৫/২০১৭)